
ছবি: জনকণ্ঠ
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার দাঁতমারা ইউনিয়নের হেয়াকো বাজারসংলগ্ন একটি সাদামাটা এলজিইডি পাকা রাস্তা বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচিত হয়ে উঠেছে ‘সেলফি রোড’ নামে।
রাস্তাটি মূলত বিশাল রাবার বাগানের মাঝ দিয়ে গড়ে উঠেছে। দুই পাশের সারি সারি গাছ আর মাথার ওপর ছায়ার চাদর টানানো গাছের ডালপালা সব মিলিয়ে এক নৈসর্গিক পথচিত্র। যে কারণে অনেকেই একে বলছেন “চট্টগ্রামের ন্যাচারাল ফ্রেম রোড”।
স্থানীয়রা জানান, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (LGED) তত্ত্বাবধানে রাস্তাটি নির্মিত হয়। দীর্ঘ প্রায় ১.৫ কিলোমিটার রাস্তাটি হেয়াকো বাজার থেকে সিকদারখিল গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত। নির্মাণের পর রাস্তাটি একসময় ছিল শুধুই চলাচলের মাধ্যম। কিন্তু সম্প্রতি কিছু তরুণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখানকার ছবি পোস্ট করলে জায়গাটি আলোচনায় আসে।
ছবির ফ্রেমে দেখা যায় রোদ ঝলমলে বিকেলে যখন রাবার পাতার ফাঁক দিয়ে সূর্যরশ্মি মাটিতে পড়ে, তখন পুরো রাস্তাটি যেন সোনালি আলোয় গড়া এক স্বপ্নের করিডোর।
স্থানীয় এক দোকানদার সালেহ আহমেদ বলেন, “আগে এখানে কেউ ছবি তুলতে আসত না। এখন প্রতি শুক্রবার অনেকে বাইক নিয়ে আসে, অনেকে আবার রিকশা নিয়েও আসে। রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে সেলফি তোলে।”
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টিকটকে ‘সেলফি রোড’ নামে ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর, স্থানীয় তরুণদের একটি অংশ জায়গাটিকে পরিচিত করে তুলতে নিজেদের উদ্যোগে বিভিন্ন ছবি-ভিডিও ছড়াতে শুরু করে। ফলে বর্তমানে এটি হয়ে উঠেছে ফটিকছড়ির একটি লোকাল ভিজ্যুয়াল হটস্পট।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই জায়গার মূল আকর্ষণ তিনটি:
১. প্রকৃতির নির্মল সৌন্দর্য,
২. একটানা রাবার গাছের ছায়া, এবং
৩. তুলনামূলকভাবে কম খরচে ভ্রমণের সুবিধা।
বিশেষ করে বাইকার ও ফটোগ্রাফারদের কাছে এই জায়গা এখন "প্যাসিভ হাইপ" তৈরি করছে।
চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৬৫ কিমি দূরে এই রাস্তায় যাওয়া যায় অক্সিজেন মোড় বা বারৈয়ারহাট হয়ে হেয়াকো বাজার পর্যন্ত বাসে। সেখান থেকে স্থানীয় রিকশা বা হেঁটে কয়েক মিনিটের পথ।
তবে দুঃখজনক হলেও সত্য এত সম্ভাবনার পরও জায়গাটিতে নেই কোনো সরকারি বা স্থানীয় পর্যটন বোর্ডের সরাসরি উদ্যোগ। নেই কোনো দিকনির্দেশক সাইনবোর্ড, বসার ব্যবস্থা, বা নিরাপত্তাব্যবস্থা।
একজন পর্যটক, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, বলেন, “এখানে বসার মতো কিছু নেই, বিশ্রামের জায়গাও না। অথচ এমন সুন্দর জায়গায় একটু উদ্যোগ নিলে এটা হতে পারত ফটিকছড়ির সবচেয়ে আলোচিত স্পট।”
স্থানীয় কয়েকজন যুবক জানিয়েছেন, তাঁরা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে এলাকাটি পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করছেন। তাঁদের দাবি যদি পর্যটন মন্ত্রণালয় বা স্থানীয় সরকার উদ্যোগ নেয়, তবে জায়গাটি হতে পারে চট্টগ্রামের পরবর্তী ‘রিজিওনাল ইকো স্পট’।
একজন স্কুলশিক্ষক বলেন, “আমাদের ছেলেমেয়েরা যখন গ্রামের এই রাস্তায় এসে ছবিতে মন ভরে, তখন বোঝা যায় প্রকৃতির সাথে সম্পর্কটা এখনও জীবন্ত। এই রোড শুধু ‘সেলফি’র জন্য নয়, গ্রামের আত্মপরিচয়ের একটা প্রতীক হয়ে উঠছে।”
হেয়াকো বাজারের পাশ ঘেঁষে সাঁই সাঁই করে হাওয়া বয়ে যায় গাছের ফাঁক দিয়ে। ছায়া পড়ে চুপচাপ রাস্তায়। পায়ের নিচে পাতার কর্কশ শব্দ, মাথার ওপর রোদ-ছায়ার খেলা। কেউ দাঁড়ায় ছবির জন্য, কেউ শুধু তাকায় আর মুগ্ধ হয় এই নির্জন রাস্তায় কিছু একটা আছে।
‘সেলফি রোড’ এখন আর শুধুই রাস্তা নয় এটা হয়ে উঠেছে গ্রামবাংলার এক নান্দনিক প্রতিচ্ছবি, যেখানে প্রকৃতি আর মানুষ একসাথে দাঁড়ায় একটা ফ্রেমে।
মুমু ২