
ছবি- দৈনিক জনকণ্ঠ
দুম্বা মধ্যপ্রাচ্যের একটি প্রাণী। অথচ দুম্বার পাঠার সাথে গাড়লের ক্রস করিয়ে মেহেরপুরে উৎপাদন করা হচ্ছে নতুন জাতের দুম্বা। এই অভিনব প্রক্রিয়াটি সম্পাদন করে জেলায় সাড়া ফেলেছেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ভোমরদাহ গ্রামের আসাদুজ্জামান। মাত্র দেড় বছরে বিক্রি করেছেন ৮ লাখ টাকার দুম্বার বাচ্চা। প্রবাস (মালয়েশিয়া) ফেরত এই তরুণ ২০২০ সালে দেশে ফিরে গরুর খামার দিয়ে শুরু করেন কৃষি উদ্যোগ। তবে গোখাদ্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে সে খামার বেশি দিন চালানো সম্ভব হয়নি। পরে তিনি ছাগল ও গাড়ল পালনে মনোনিবেশ করেন। তুলনামূলক লাভ বেশি হওয়ায় ধীরে ধীরে গাড়লের দিকেই ঝুঁকে পড়েন।
২০২৪ সালের কোরবানির ঈদের আগে তিনি পরীক্ষামূলকভাবে নাটোর ও চুয়াডাঙ্গা থেকে ৭ লাখ টাকা দিয়ে সংগ্রহ করেন দু’টি পাঠা ও দু’টি মা দুম্বা। শুরু করেন গাড়ল মা ভেড়ার সাথে ক্রস। এতেই বাজিমাত।
দেখতে অনেকটা গাড়লের মতো। তবে ছোট্ট্ একটি লেজ, পিছনের অংশ চেপ্টা, কারো কারো মাথায় গজিয়েছে শিং। আসলে এটি গাড়ল নয়। দুম্বার পাঠার সাথে গাড়লের মায়ের ক্রস করিয়ে উৎপাদন করা হয়েছে নতুন প্রজাতির এই দুম্বা। মাত্র ৬ মাস বয়সী একটি দুম্বার ওজন হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ কেজি। অথচ একই বয়সের একটি গাড়লের বাচ্চার ওজন হচ্ছে ১২ থেকে ১৫ কেজি। বাচ্চাও হচ্ছে দু’টি। প্রতিটি বাচ্ছা বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায়।
দুম্বার বাচ্চার খোঁজে অনেকেই এখন ধর্না দিচ্ছেন এই খামারে। শুধু তাই নয়, এই প্রাণীগুলো বৃষ্টিতে ভিজেও সহজে অসুস্থ হচ্ছে না। জলাবদ্ধ এলাকায়ও স্বাভাবিকভাবে টিকে থাকতে পারছে। এ পর্যন্ত ৪০টির মতো সংকর বাচ্চা বিক্রি করেছি। আমার খামারে এখন ৮০টি নারী গাড়লের সঙ্গে নিয়মিত সংকর প্রজনন চলছে।মাংস বেশি হওয়ায় এ প্রজাতির দুম্বা পালনে লাভবান হবেন খামারীরা বলছেন খামারী আসাদুজ্জামান। জেলার পশুপালনকারীদের মতে, এ ধরনের সংকরায়ণ টেকসই হলে তা হতে পারে বাংলাদেশের মাংস উৎপাদন খাতে একটি নতুন দিগন্ত। তবে এর জন্য প্রয়োজন দ্রুত গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও সরকারি সহায়তা।
গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোত্তালেব আলী বলেন,মাঠ পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে এই সংকর ভেড়াগুলোর মাংস উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বেশি। তবে এ নিয়ে এখনো কোনো জাতীয় নীতিমালা নেই, সরকারিভাবেও কোনো গবেষণা শুরু হয়নি। তবে এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কিনা তা নিয়ে দরকার গবেষণার। তবে আমরা কোনো খামারিকে গাড়ল ও দুম্বার সংকরায়ণ করতে নিরুৎসাহিত করছি না।
স্বল্প পরিসরে বাড়িতেই খামার করেছেন আসাদুজ্জামান। এখন স্বপ্ন দেখছেন জায়গা কিনে বড় একটি দুম্বার খামার দেওয়ার। প্রায় ২০ বছর আগে দেশি ভেড়ার সঙ্গে কাশ্মীরি প্রজাতির ভেড়ার সংকরায়ণে যে জাতের উদ্ভব হয়েছিল সেটি গাড়ল নামে বাংলাদেশ ও ভারতবর্ষে স্বীকৃতি পেয়েছে।
নোভা