ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের চকরসুল্লাহ গ্রামের বাসিন্দা মো. আব্দুস সালাম

নির্বাচন আসলেই সবাই কথা দেয়, কেউ কথা রাখে না, আমাদের রাস্তাও পাকা হয় না

সংবাদদাতা, তাড়াশ, সিরাজগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৯:২৬, ২৪ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৯:৩৯, ২৪ জুলাই ২০২৫

নির্বাচন আসলেই সবাই কথা দেয়, কেউ কথা রাখে না, আমাদের রাস্তাও পাকা হয় না

ছবিঃ সংগৃহীত

"নির্বাচন আসলে সবাই আমাদের রাস্তা পাকা করে দেওয়ার কথা বলে। কিন্তু নির্বাচন শেষ হয়ে গেলে কেউ কথা রাখে না, আমাদের রাস্তাটিও আর পাকা হয় না"—এভাবেই আক্ষেপ করছিলেন সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের চকরসুল্লাহ গ্রামের বাসিন্দা মো. আব্দুস সালাম।

তাড়াশ-মহিষলুটি পাকা রাস্তার বাবলাতলা নামক স্থান থেকে চকরসুল্লাহ কবরস্থান এবং কবরস্থান থেকে গ্রামের ভেতর দিয়ে কিসমতের বাড়ি সংলগ্ন পাকা রাস্তা পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার কাঁচা রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

এই রাস্তাটি দিয়ে চকরসুল্লাহ, চকজয়কৃষ্ণপুর ও কালিদাসনীলি গ্রামের প্রায় দুই হাজার মানুষ চলাচল করেন। বর্ষার সময় বৃষ্টির পানি ও কাদায় রাস্তাটি একাকার হয়ে যায়। ফলে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। অনেক সময় পায়ে হেঁটেও চলা কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়া, ছোটখাটো বন্যা হলেই রাস্তাটি পানিতে তলিয়ে যায়, তখন একমাত্র নৌকা দিয়ে চলাচল করতে হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তাড়াশ উপজেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) থেকে বিভিন্ন সময়ে রাস্তাটি পরিমাপ করা হলেও এখনও বাস্তবায়নের কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি।

রমজান আলী নামের এক কৃষক বলেন, “রাস্তাটি পাকা না হওয়ায় আমাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য পরিবহনে অনেক কষ্ট হয়। বাজারে নিতে না পারায় পাইকার আসে না। ফলে আমরা প্রতি মণ পণ্যে প্রায় ৫০ টাকা কম দরে বিক্রি করতে বাধ্য হই। এতে লোকসান গুনতে হয়।”

পোলট্রি খামারি আব্দুর রহিম বলেন, “রাস্তাটি পাকা না হওয়ায় খামারি ব্যবসায় আমরা বড় লোকসানে পড়ি। মুরগির খাবার আনার জন্য কোনো গাড়ি আসতে চায় না, আসলেও বেশি ভাড়া চায়। আবার উৎপাদিত মুরগি বিক্রিতেও সমস্যা হয়। পাইকার আসতে চায় না বলে প্রতি কেজিতে ৫-১০ টাকা কমে বিক্রি করতে হয়।”

মৎস্য চাষি জাহিদুল ইসলাম ও আয়নাল হক জানান, আশপাশের গ্রামের রাস্তা পাকা হলেও তাদের গ্রামের রাস্তাটি এখনও কাঁচা। মাছের পোনা ও খাদ্য আনার ক্ষেত্রে খরচ অনেক বেড়ে যায়। কারণ পাকা রাস্তা থেকে মাছের খাদ্য লেবার দিয়ে মাথায় করে পুকুরে আনতে হয়। আবার মাছ বিক্রির সময়ও একই প্রক্রিয়ায় পাকা রাস্তায় এনে পরে বাজারে পাঠাতে হয়, এতে লাভ প্রায় থাকে না।

স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “রাস্তাটি পাকা না হওয়ায় প্রতিদিন কাদা-মাখা রাস্তায় স্কুলে যাওয়া খুব কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। পোশাক নষ্ট হয়ে যায়। বর্ষার সময় তো রাস্তাটি পানিতে ডুবে যায়, তখন নৌকা ছাড়া চলাচলের উপায় থাকে না। আমরা দ্রুত রাস্তাটি পাকা করার জোর দাবি জানাই।”

তাড়াশ উপজেলা প্রকৌশলী মো. ফজলুল হক বলেন, “তাড়াশ-মহিষলুটি পাকা রাস্তার বাবলাতলা থেকে চকরসুল্লাহ কবরস্থান পর্যন্ত রাস্তার আইডির (প্রকল্প অনুমোদনের প্রাথমিক ধাপ) জন্য প্রস্তাব পাঠানো হবে। আইডি হলেই আমরা রাস্তাটির উন্নয়নে কাজ শুরু করতে পারব।”

 
 
 

মারিয়া

×