
চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চরম ব্যর্থতার নজির সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্যালয়টির ২০ জন পরীক্ষার্থীর কেউই পাস করতে পারেনি।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ১০ জুলাই প্রকাশিত ফলাফলে এ তথ্য উঠে আসে। ব্যতিক্রমী এই ফলাফল এলাকায় চরম আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে অভিভাবক ও সচেতন মহল।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পরীক্ষার্থীদের মধ্যে কেউই সব বিষয়ে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। তিনজন শিক্ষার্থী একটি বিষয়ে, পাঁচজন দুই বিষয়ে, সাতজন তিন বিষয়ে, একজন চার বিষয়ে এবং একজন সব বিষয়ে ফেল করেছে। এই তথ্য স্থানীয়ভাবে চরম হতাশা ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
স্থানীয় শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা রমেশ মণ্ডল অভিযোগ করেন, “শিক্ষকরা ঠিকমতো ক্লাসে আসেন না। শিক্ষার্থীদের প্রতি তাদের কোনো দায়িত্ববোধ নেই। এনটিআরসিএ থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত নতুন শিক্ষকরাও একই আচরণ করছেন।” তাছাড়া গ্রাম্য দলাদলি থাকায় স্কুলটিতে শিক্ষার পরিবেশ নেই বলে মনে করেন এলাকার সচেতন মহল।
অপরদিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জগবন্ধু বিশ্বাস বলেন, “আমাদের বিদ্যালয়ে বর্তমানে সাতজন শিক্ষক রয়েছেন। এটি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্বীকৃত হলেও ২০০০ সাল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। আশেপাশে উন্নত বিদ্যালয় থাকায় মেধাবীরা অন্যত্র চলে যায়। আমাদের বিদ্যালয়ে যারা পড়ে, তারা সাধারণত দরিদ্র পরিবারের ও তুলনামূলকভাবে কম মেধাবী। শিক্ষার্থীরা নিয়মিতও আসে না, অভিভাবকদেরও আগ্রহ কম।তিনি আর ও জানান টেস্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ২০ জন। অল সাবজেক্টে পাশ করে দুইজন।
২০২৪ সালের এক বিষয়ে ফেল করা ৬ জনসহ ৮ জনের পরীক্ষা দেয়ার কথা থাকলেও অভিভাবকদের অনবরত সুপারিশের ফলে সবাইকেই টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দেখিয়ে এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়েই ফল খারাপ হয়েছে।”
এই ফলাফলের পর এলাকায় শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি প্রশাসনের নজরদারি, শিক্ষক মূল্যায়ন এবং শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নের দাবি জোরালো হয়েছে।
স্থানীয় সচেতন মহল প্রশ্ন তুলেছেন—শুধু শিক্ষার্থীর মেধা বা দরিদ্রতাই কি ব্যর্থতার কারণ, নাকি বিদ্যালয় পরিচালনারি দুর্বলতাও সমানভাবে দায়ী?
এখন দেখার বিষয়, এ বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ এ ব্যর্থতা থেকে কী শিক্ষা নেয় এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
লেখাপড়ার প্রতি ছাত্রছাত্রীদের অনাগ্রহ ও শিক্ষকদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা এবং ছাত্র ছাত্রীদের পাঠ দানে আন্তরিকতার অভাবের কারনে এসএসসি পরীক্ষায় এমন ফলাফল হয়েছে বলে জানান কাশিয়ানী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহফুজা বেগম।
রাজু