ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

বজ্রপাত প্রতিরোধে হবিগঞ্জে দেড় হাজার গাছ রোপণ

মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ

প্রকাশিত: ০০:১৪, ৮ জুলাই ২০২৫

বজ্রপাত প্রতিরোধে হবিগঞ্জে দেড় হাজার গাছ রোপণ

জাতীয় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি-২০২৫ উপলক্ষে এবারের প্রতিপাদ্য “পরিকল্পিত বনায়ন করি, সবুজ বাংলাদেশ গড়ি” এই চেতনাকে ধারণ করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) একটি পরিবেশবান্ধব ও সচেতনমূলক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বিজিবি মহাপরিচালকের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় বিজিবি সদর দপ্তরসহ প্রতিটি রিজিয়ন, সেক্টর, ব্যাটালিয়ন ও বিওপি পর্যায়ে পরিকল্পিতভাবে সঠিক স্থানে বৃক্ষরোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় সরাইল রিজিয়নের আওতাধীন শ্রীমঙ্গল সেক্টরের অধীনস্থ হবিগঞ্জ ব্যাটালিয়ন (৫৫ বিজিবি) পরিবেশ সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা এবং বজ্রপাতজনিত প্রাণহানি প্রতিরোধে সোমবার (৭ জুলাই) “বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি-২০২৫” এর শুভ উদ্বোধন করেন ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. তানজিলুর রহমান। ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে গাছের চারা রোপণের মাধ্যমে কর্মসূচির সূচনা করা হয়।

এই কর্মসূচির আওতায় ৭ থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত হবিগঞ্জ ব্যাটালিয়ন সদরসহ অধীনস্থ ১৬টি বিওপিতে দেশীয় ফলজ, ফুলজ, ভেষজ এবং বিশেষভাবে বজ্রপাত প্রতিরোধে কার্যকরী তালগাছের চারা রোপণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

হবিগঞ্জ জেলা একটি উঁচু-নিচু ভূপ্রকৃতি ও সমতল ভূমির এলাকা। এখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় বজ্রপাতের ঘটনাও তুলনামূলক বেশি ঘটে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের তথ্য মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হবিগঞ্জ জেলাতেই প্রতি বছর গড়ে ১০-১২ জন বজ্রপাতজনিত প্রাণহানির শিকার হন, যা উদ্বেগজনক।

বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত, তালগাছের উচ্চতা ও শিকড়ের গঠন বজ্রপাত মাটিতে নিঃসৃত করতে সহায়তা করে। একাধিক তালগাছ একত্রে থাকলে বজ্রপাতের আঘাত সরাসরি মানুষের ওপর পড়ার আশঙ্কা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। এ বিষয়টি মাথায় রেখে ৫৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের আওতাধীন প্রতিটি বিওপি, ব্যাটালিয়ন সদর এবং সংলগ্ন এলাকায় ফলজ, ফুলজ ও ভেষজ গাছের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক তালগাছ রোপণ করা হয়েছে।

এছাড়া একযোগে ১৬টি বিওপিতে গাছ রোপণের মাধ্যমে সীমান্ত এলাকায় একটি সবুজ বেষ্টনী তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সোমবার একদিনেই রোপণ করা হয়েছে ১ হাজার ৫০০টির বেশি দেশীয় গাছ, যার মধ্যে রয়েছে আম, কাঁঠাল, লিচু, জামরুল, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, শিমুল এবং বজ্রপাত প্রতিরোধে কার্যকরী “তালগাছ”। ফলে সীমান্ত এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায়ও এগুলোর অবদান থাকবে।

৫৫ বিজিবি’র অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. তানজিলুর রহমান বলেন, “বৃক্ষ শুধু পরিবেশের শোভা বৃদ্ধি করে না, এটি জীবন রক্ষা করে, খাদ্যের উৎস হয় এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য স্বাস্থ্যকর পরিবেশের ভিত্তি গড়ে তোলে। ৫৫ বিজিবি’র সদস্যরা সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি ‘সবুজ বাংলাদেশ গড়ার’ প্রত্যয়ে পরিবেশ সংরক্ষণে সচেতন ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত তালগাছ রোপণের মাধ্যমে আমরা বজ্রপাতজনিত ঝুঁকি কমাচ্ছি এবং দেশীয় ফলজ ও ফুলজ গাছের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখছি।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের এই উদ্যোগ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সবুজ, নিরাপদ ও জীববৈচিত্র্যপূর্ণ বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার আন্তরিক প্রচেষ্টা।”

মিমিয়া

×