
ছবি: জনকণ্ঠ
সাগরপারের জনপদ উপকূলীয় পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পুকুর ভরাটের হিড়িক চলছে। গত দেড় যুগে অন্তত ছয় হাজার পুকুর ভরাট করা হয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বার্থে ব্যক্তিমালিকানা পুকুরে সবচেয়ে বেশি ভরাট চলছে।
পাশাপাশি খাস জলাশয় ও পুকুর ভরাট ও দখলও হচ্ছে সমানতালে। এর ভয়াবহ বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়েছে গোটা উপকূলে। গোসল, রান্নাসহ নিত্যকাজে ব্যবহারের পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে মানুষ ডায়রিয়াসহ নানান পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, যেভাবে পারছে, সেভাবেই পুকুর ভরাট চলছে। সবচেয়ে বেশি পুকুর ভরাট হয়েছে কলাপাড়া পৌর শহরে, যেখানে অন্তত চার শতাধিক পুকুর ভরাট করা হয়েছে। ড্রেজার লাগিয়ে বালু দিয়ে ভরাট করে নির্মিত হয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা।
এতিমখানা পুকুর ভরাট করে নির্মিত হয়েছে পৌর ভবন। প্রতিদিন ওই পুকুরের পানি অন্তত পাঁচ শতাধিক মানুষ গোসল, রান্না ও ওজুর কাজে ব্যবহার করতেন। শহরের অফিস মহল্লায় খাস পুকুর ভরাট করে অডিটরিয়ামসহ একাধিক ভবন তৈরি করা হয়েছে। ১২টি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামেই একই চিত্র। পুকুর ভরাট করে ভূপৃষ্ঠের পানির ওপর চাপ বাড়ছে, কমছে ভূ-উপরিভাগের ব্যবহার। এর ফলে নষ্ট হয়ে গেছে শতাধিক গভীর নলকূপ।
১৯৯৮ সালে পটুয়াখালী-বরগুনা মৎস্য চাষ সম্প্রসারণ প্রকল্পের জরিপ অনুযায়ী কলাপাড়ায় পুকুর ছিল ১৭,১৩৪টি। এখন প্রায় অর্ধেক ভরাট হয়ে গেছে।
কুয়াকাটা পৌর এলাকার লতাচাপলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে খাস পুকুরটি এখনও রয়েছে, তবে দুইদিক থেকে চেপে ধরা। কুয়াকাটার মাঝিবাড়ি, খাজুরা, শরীফপুরে অন্তত ৫টি সরকারি খাল ভরাট করে আবাসন কোম্পানির কাছে বিক্রি করা হয়েছে। লালুয়ায় উন্নয়ন কাজে অন্তত দেড় হাজার পুকুর বিলীন, ধানখালী ও চম্পাপুরেও একই অবস্থা। যেন সবুজের জনপদ মরুভূমিতে রূপ নিচ্ছে।
কলাপাড়া পৌরসভায় সরকারি হিসাবে ২৪টি খাস পুকুর রয়েছে। এর অর্ধেক এখন ভরাট বা দখল হয়ে গেছে। লতাচাপলীর রাখাইন পল্লী কালাচানপাড়ায় পুকুর দখল করে বহুতল মার্কেটসহ অসংখ্য স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে।
১৯৭১ সালে কলাপাড়ায় পুকুর ছিল মাত্র ১,৬৬৩টি। এরপর ব্যবহারের পানির নিশ্চয়তা ও পরিবেশ রক্ষায় প্রতিটি বাড়ির সামনে-পেছনে পুকুর খনন করা হয়েছিল। কিন্তু গত দেড় যুগে তাৎক্ষণিক লাভের আশায় পুকুর ভরাট করে চলছে বিপর্যয়।
আইন অনুযায়ী প্রাকৃতিক জলাধার ভরাট নিষিদ্ধ, কিন্তু নেই কার্যকর প্রয়োগ। পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ, পরিবেশ অধিদপ্তর — কেউই দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখছে না। কুমিরমারা গ্রামের কৃষক সুলতান গাজী জানান, পুকুর না থাকলে গোসল, রান্না এবং গরমের তীব্রতা বাড়ে। পুকুর জীবনের অপরিহার্য অংশ ও সৌন্দর্যের প্রতীক।
কলাপাড়া উপজেলার সাবেক স্বাস্থ্য প্রশাসক ডা. চিন্ময় হাওলাদার বলেন, পুকুর ভরাটে নিরাপদ পানির সংকট ও পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। পরিবেশকর্মী নজরুল ইসলাম জানান, পৌর এলাকায় পুকুর ভরাট বা খননের আগে অনুমতি নেয়া বাধ্যতামূলক হলেও তা মানা হয় না।
২০১৯ সালে পৌরসভার কুমারপট্টি অয়েরমিল পুকুরটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ওয়াকওয়ে ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করা হয়। ২০২৩ সালে গাইডওয়াল ধসে পড়ে, প্লাস্টিক দূষণেও এখন ব্যবহারের অনুপযোগী। পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রবিউল ইসলাম জানান, সরকারি খাস পুকুরগুলো সংরক্ষণে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
শহীদ