
.
তাড়াশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব এখন গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের আওতায় ১৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থাপন করা হয় স্কুল অফ ফিউচার ও শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব (বর্তমান নাম আইসিটিডি)। পাশাপাশি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্প থেকে আরো ৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়।
শিক্ষার্থীদের তথ্য ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দক্ষতা, সক্ষমতা বাড়ানো ও স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলেও, বাস্তবে তা এখন গলার কাঁটা হয়েছে। এসব ল্যাব স্থাপনে এ উপজেলায় সরকারের প্রায় ৯ কোটি টাকা জলে গেছে। অভিযোগ রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একটি সিন্ডিকেট পুরনো সংস্করণের ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, প্রিণ্টার, স্ক্যানার, ওয়েবক্যাম, এলিইডিটিভি, হোয়াটবোর্ড সরবরাহ করে। নিম্নমানের উপকরণ সরবরাহের ফলে শুরুতেই এসব ডিজিটাল ল্যাব মুখ থুবড়ে পরেছে। পরিণত হয়েছে ই-বর্জ্য।ে অথচ এসব ল্যাব পরিচালনা ও রক্ষণা-বেক্ষণের জন্য একজন করে ল্যাব সহকারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা সরকারিভাবে নিয়মিত মাসিক বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন। রাউটার, ইন্টারনেট, ট্যাব, সার্ভার সিস্টেমসহ যাবতীয় হার্ডওয়ার ও ফার্নিচার সরবরাহ করায় এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। তারা মানহীন পণ্য সরবরাহ করে এসব ল্যাব থেকে প্রায় দুই থেকে তিন কোটি টাকা সুকৌশলে হাতিয়ে নিয়েছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে টেকনিশিয়ান চেয়ে বারবার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরে আবেদন করলেও, তাদের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি মর্মে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা অভিযোগ করেন। উপজেলা আইসিটি অফিসারের কার্যালয় থেকেও সমস্যা নিয়ে প্রতিবেদন পাঠালেও তা কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
জানা যায়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন সময়ে তাড়াশ উপজেলায় ১৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে পৌর সদরের তাড়াশ ইসলামীয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থাপন করা হয় স্কুল অফ পিউচার। অবশিষ্ট ৭টি স্কুল, ৪টি কলেজ ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ১টি মাদ্রাসায় শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়। এ ছাড়াও আরো ৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প থেকে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়।
শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন প্রকল্পের (২য় পর্যায়) এক বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, ল্যাব প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ১৪ টি শর্ত প্রযোজ্য থাকলেও বাস্তবে তা মানা হয়নি। মূলত: সংশ্লিষ্ট আসনের সংসদ সদস্যরা সকল নিয়মকানুন অমান্য করে তাদের পছন্দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ডিও লেটার দিয়েছেন এবং সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। এসব ল্যাব প্রতিষ্ঠায় ঠিক কত টাকা ব্যয় করা হয়েছে তার সঠিক কোনো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের বর্তমান প্রকল্প পরিচালক এএসএম লোকমাননের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এসব তথ্য তার জানা নেই। আগের প্রকল্প পরিচালক বলতে পারবেন। এ বিষয়ে পরে কথা বলব।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন আইটি বিষেশজ্ঞ বলেন, এসব ল্যাব স্থাপনে গড়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। সে অর্থে তাড়াশ উপজেলায় মোট ১৮টি ডিজিটাল ল্যাবে ৯ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অধিকাংশ ডিজিটাল ল্যাবই অচল হয়ে পড়ে রয়েছে। এ প্রসঙ্গে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. বেলাল হোসেন আনছারী বলেন, নিম্নমানে সরঞ্জামাদি সরবরাহ করায় ল্যাবটি শুরুর কিছু দিনের মধ্যেই অচল হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। গুল্টা বাজার শহীদ এম, মনসুর আলী ডিগ্রি কলেজের ল্যাবটির দশা আরও করুণ। এ প্রতিষ্ঠানে ল্যাপটপগুলো নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ৫ থেকে ৭টি কম্পিউটারের কোনো হদিস নেই। তাড়াশ উপজেলা আইসিটি অফিসারের কার্যলয় থেকে কম্পিউটারগুলো প্রতিষ্ঠানে ফেরত আনার তাগাদা দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কলেজের অধ্যক্ষ মো. আসাদুজ্জামান ও তার নিকটজনেরা এসব ল্যাপটপ ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করছেন। অন্যান্য ল্যাবের অবস্থাও এ ৩টি ল্যাবের মতোই। তবে তাড়াশ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কয়েকটি কম্পিউটার এখনো সচল রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা আইসিটি কর্মকর্তা মো. আবু রায়হান ঘটনার সতত্যা স্বীকার করে বলেন, আমার অফিস থেকে বিভিন্ন ল্যাব পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। ল্যাব প্রতিষ্ঠার সময় সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের শুধু কাগজে কলমে জানায়। কত বরাদ্দ, কি কি মানের ডিজিটাল সামগ্রী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করে, তাও তাদের জানানো হয়নি।