বাগেরহাটের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রিয় সমন্বয়কের সভা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রিয় সহ-সমন্বয়ক মোঃ ওয়াহিদ উজ্জামান বলেছেন, একটা দেশকে সুবিধা দিতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে রেললাইন নির্মাণ করা হয়েছে। মোংলা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। এসব মূলত প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে খুশি রাখতে করা হয়েছে। আর বিগত ১৬ বছর ধরে খুলনা বিভাগ বৈষম্যের স্বীকার হয়েছে।
সেই বৈষম্যকে নিরসন করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। খুলনা বিভাগ ও বাগেরহাট জেলাকে আধুনিক-উন্নত শহর হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এজন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান এই ছাত্র নেতা।
মঙ্গলবার বিকেলে (১৭ সেপ্টেম্বর) বাগেরহাট জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে দূর্নীতি, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বর্তমান সরকার সম্পর্কে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের এই নেতা বলেন, এই সরকার জনগণের সরকার, এই সরকার গণআকাঙ্খার সরকার। কেউ যদি এই সরকারকে অনির্বাচিত সরকার বলে তাহলে তিনি ভুল করবেন। বিগত ১৬ বছরের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ থেকে এই সরকারের জন্ম হয়েছে। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সংস্কারের মাধ্যমে এই সরকার জনগণের আকাঙ্খার বাস্তবায়ন করবে। এই সরকার তার কাজের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে একটি কল্যান রাষ্ট্র গঠন করবে। এজন্য এই সরকারকে সময় দিতে হবে, এজন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ থেকে সরকারকে সহযোগিতার আহবান জানান তিনি।
বাগেরহাটের ছাত্র-জনতার আয়োজনে মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন, ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আকরাম হোসাইন রাজ, আশরেফা খাতুন, জঘন্নাত বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু বকর খান, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রাহানা ফারিনা, ঢাকা কলেজের মুইনুল ইসলাম, আমান উল্লাহ আল ফারাবি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বজিৎ দত্ত, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আফিয়া জান্নাত অনন্যা, শিক্ষার্থী তৌহিদ ইসলাম শুভ, মোঃ বাবু খান, জান্নাত প্রমুখ।
মতবিনিময় সভায় বাগেরহাটের শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা জেলার বিভিন্ন সমস্যা ও দাবির কথা তুলে ধরেন। মতবিনিময় সভায়, সন্তানহারানোর বেদনার বর্ণনা দেন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শহীদ হওয়া মোল্লাহাটের বিপ্লব শেখের বাবা পারভেজ শেখ ও মা ইলিজা বেগম।
শহীদ বাবা পারভেজ শেখ বলেন, সে আমার বড় ছেলে। গার্মেন্টস-এ চাকুরী করেও প্রতিমাসে বাড়িতে কিছু টাকা দিত। এখন আমার সংসারের হাল ধরবে কে বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।
মা ইলিজা বেগম বলেন, আমার চার সন্তান। বড় সন্তান আন্দোলনে গিয়ে মারা গেছে। বড় সন্তান হারানোর যে কষ্ট এটা কাউকে বোঝানো যাবে না। আমি মা হিসেবে সন্তানের খুনিদের বিচার চাই।
এদিন দুপুরে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় কালিদাস বড়াল স্মৃতি ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রিয় নেতারা করেছে। তারা শিক্ষার্থীদের সাথে আওয়ামী শাসনামলে উদ্দেশ্যমূলক শিক্ষা কারিকুলাম পরিবর্তনসহ শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যা নিয়ে অংশগ্রহণমূলক আলোচনা করেন। এরপর তারা নিহত অ্যাডভোকেট কালিদাস বড়ালের পৈত্রিক বসতবাড়িতে যান এবং নিহত কালিদাস বড়ালের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রিয় সমন্বয়ক ও খুলনা বিভাগীয় প্রতিনিধি ওয়াহিদ উজ জামান, কেন্দ্রিয় সহ-সমন্বয়ক সরদার নাদিম মাহমুদ শুভ, কেন্দ্রিয় সহ-সমন্বয়ক আবু বক্কর খান, চিতলমারী কালিদাস বড়াল স্মৃতি ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার রায়, নিহত অ্যাডভোকেট কালিদাস বড়ালের ভাতিজা অ্যাডভোকেট অমিতাভ বড়াল, চিতলমারী পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলিপ সাহা কালাসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যান্য নেতা-কর্মী এবং শিক্ষক মন্ডলীগণ।
বক্তব্যে কেন্দ্রিয় সমন্বয়ক ও খুলনা বিভাগীয় প্রতিনিধি ওয়াহিদ উজ জামান বলেন, ‘আমরা ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পলায়ন ও আওয়ামী লীগ সরকার পতনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছি। সেটা কিসের স্বাধীনতা? সেটা হল প্রশ্ন করার স্বাধীনতা। আর প্রশ্ন করতে হলে আগে নিজে জানতে হবে, লেখাপড়া করতে হবে। সত্যটাকে উদঘাটন করতে হবে। আমরা রাজধানী ঢাকায় বসে বসে গ্রামের চিত্র বুঝতে পারবো না। তাই গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত সকল মানুষের অবস্থা ও আকাঙ্খা জেনেবুঝে বাস্তবধর্মী সংস্কার করতে হবে। সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি। ভবিষ্যতের বাংলাদেশ আমরা সুন্দরভাবে গড়তে চাই- যেখানে সকল মানুষের মানবাধিকার নিশ্চিত হয়।’
শহিদ