ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩০ ভাদ্র ১৪৩১

কেরানীগঞ্জে সরকারি খাল দখল করে বাড়ি নির্মাণ

সংবাদদাতা, কেরানীগঞ্জ

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ৩ আগস্ট ২০২৪

কেরানীগঞ্জে সরকারি খাল দখল করে বাড়ি নির্মাণ

কলাতিয়া ব্রিজ থেকে আটিবাজার জয়নগর পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকার খাল দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে স্থাপনা

কেরানীগঞ্জ উপজেলার কলাতিয়া, রুহিতপুর, শাক্তা, বাস্তা, শুভাড্ডাসহ কেরানীগঞ্জের বেশ কয়েকটি এলাকায় খালের দুই পাড়ে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা। কলাতিয়া ব্রিজ থেকে আটিবাজার  জয়নগর পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে খালের দুই পাড়ে খালের জমি দখল করে পাকা ভবন নির্মাণ করেছে অনেকে।
অনেক পরিবারের দাবি, খালের মধ্যে তাদের জমি আছে। তাই খালের মধ্যে পাইলিং করে কয়েক তলা ভবন বানাচ্ছেন। কেউ আবার পাইলিং করে খাল ভরাট করে বাড়ি-ঘর বানিয়ে ভাড়া দিচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে কোনো উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা না করায় দখলদারদের কবলে পড়ে দিন দিন খালগুলো  ভরাট হয়ে যাচ্ছে। কেউ আবার খালের ভেতরে নিজের জমি আছে দাবি করে অন্যের কাছে  বিক্রি করে দিচ্ছে। 
শনিবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অনেক ব্যক্তি খালের মধ্যে পাকা দোকান ও ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে আসছেন। অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণেই অন্যরাও দখলের সাহস পাচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানান,  কয়েক বছর আগে ও খালের ওপর কোনো ঘর-বাড়ি ছিল না। বর্তমানে জায়গার দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক পরিবার খালের জায়গা দখল করে বসতবাড়ি নির্মাণ করেছেন। কেউ কেউ আবার খালের জায়গাকে তার পৈত্রিক সম্পত্তি হিসেবে দাবি করেন। খালের বাড়ি নির্মাণের বিষয় জানতে চাইলে অভিযুক্ত সুমন মিয়া বলেন, আমার জায়গায় আমি বাড়ি নির্মাণের কাজ করছি। এখানে কারও সঙ্গে কথা বলার প্রশ্নই আসে না। আপনি যে কথা বলেছেন। খাল তো অনেক দূর এটা আমাদের নিজস্ব সম্পত্তি। এখানে খালের কোনো জায়গা নেই। আমি দীর্ঘদিন ধরে এই জায়গায় বাড়ি নির্মাণ করে ভোগদখল করে আসছি। সবাই বিষয়টা জানেন। এখন হুট করে বললেই হবে এটা খালের জায়গা।
খালের ওপর বাড়ি নির্মাণের বিষয় জানতে চাইলে অভিযুক্ত রজ্জব বলেন, আমার বাপদাদা চৌদ্দ গোষ্ঠী এই খালের পারে বসবাস করছে। এখন আমি একটু বাড়ির কাজ করছি আর অমনি আপনারা আসছে। আপনারা যে কথা বলেন তার কোনো  ভিত্তি নেই। এটা আমার বাপদাদার পৈত্রিক সম্পত্তি এটা খালের জায়গা না। আমি আমার নিজস্ব জায়গায় বাড়ি নির্মাণ করছি। খালের ওপর নয়।
কলাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তাহের আলী বলেন, খালের জায়গা দখল করে কোনো ভবন তৈরি করা যাবে না।

আমার ইউনিয়নের দুটি খাল  ময়লা-আবর্জনা গ্রাস করায় মশা-মাছির প্রজননস্থলে পরিণত হয়েছে। জলাবদ্ধতা থেকে এলাকাবাসীকে মুক্তি দিতে ও খাল খননের মাধ্যমে পানি প্রবাহ ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব। কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, আবু রিয়াদ বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। সরকারি খাল দখল করে কোনো ঘরবাড়ি, দোকান নির্মাণ করা যাবে না। সরেজমিন গিয়ে পরিদর্শন করে দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আমতলীতে খাস জমিতে ভবন নির্মাণ 
নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী, বরগুনা থেকে জানান, সরকারি জমিতে অবৈধভাবে জুয়েল গাজী ও শাকুর গাজী পাকা ভবন নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এমন অভিযোগ করেছেন। ঘটনা ঘটেছে আমতলী উপজেলার গাজীপুর বন্দরে। আমতলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারেক হাসান বলেন, খাস জমিতে পাকা ভবন নির্মাণের কোনো সুযোগই নেই। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ওই স্থাপনা ভেঙে দেওয়া হবে।  
জানা গেছে, আমতলী উপজেলার গাজীপুর বন্দরের ৮ একর ৩৭ শতাংশ খাস জমি রয়েছে। ওই জমির মধ্যে ৮ শতাংশ জমি জুয়েল গাজী ও শাকুর গাজী দুই ভাই দখল করে নেন। গত সোমবার থেকে ওই জমিতে পাকা ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেন তারা। স্থানীয়রা জমি দখল ও পাকা ভবন নির্মাণের বিষয়টি উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার আহসানুল হক রুবেল ও ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আবু জাফরকে জানালে তারা তাদের কাছ থেকে ঘুষ এনে নির্মাণ কাজের অনুমতি দেন।

তাদের অনুমতি পেয়ে অবৈধ দখলদাররা পাকা ভবন নির্মাণ করছেন। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার আহসানুল হক রুবেল ও ভূমি কর্মকর্তা আবু জাফর মোটা অংকের টাকা ঘুষ নিয়ে কাজের অনুমতি দিয়েছেন। তারা আরও অভিযোগ করেন এ বিষয়টি আমতলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারেক হাসানকে জানালেও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। ফলে অনায়াসে তারা ভবন নির্মাণ করতে সাহস পাচ্ছেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা। জুয়েল গাজী ও শাকুর গাজী বলেন, দখলীয় জমিতে ভবন নির্মাণ করছি। বিষয়টি উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা জানেন। কুকুয়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহসিলদার) মো. আবু জাফর টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, ভবনের কাজ করতে জুয়েল গাজীকে নিষেধ করা হয়েছে।

আমতলী উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার আহসানুল হক রুবেল বলেন, সরকারি জমিতে ভবন নির্মাণ করতেই পারবে না। তবে টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জবাব না দিয়ে এড়িয়ে যান। বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলাম বলেন, খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, সরকারি জমি উদ্ধার না করে কেউ যদি ভবন নির্মাণ করতে সহায়তা করে থাকেন, তদন্তসাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

×