ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাবার স্বপ্ন পূরণে গরুর গাড়িতে বিয়ে

প্রকাশিত: ১৮:২৬, ৪ জুন ২০২৩

বাবার স্বপ্ন পূরণে গরুর গাড়িতে বিয়ে

গরুর গাড়িতে বিয়ে  

ঐতিহ্য ধরে রাখতে ও বাবার ইচ্ছা পূরণে ১০টি গরু, মহিষের গাড়ি নিয়ে বিয়ে করতে গেলেন ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার এক যুবক। আবহমান গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া এ বাহনটিতে চড়ে বিয়ে করতে গেলে একনজর দেখতে রাস্তার দু’পাশে ভিড় করেন হাজারো মানুষ।

উপজেলার খামার নারায়ণপুর গ্রামে সম্প্রতি এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, খামার নারায়ণপুর গ্রামের কুদ্দুস আলীর ছেলে নিরবের সঙ্গে সম্প্রতি বিয়ে ঠিক হয় পার্শ্ববর্তী দুর্গাপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামে মেয়ে ইসরাত জাহান এশা আকতারের। শুক্রবার ছিল তাদের বিয়ের দিন। নিরবের বাবার ইচ্ছা ছিল ছেলে বর বেশে গরুর গাড়িতে করে বরযাত্রী নিয়ে কনের বাড়িতে বিয়ে করতে যাবে। পুত্রবধূও আসবে গরুর গাড়িতেই। বাবার সেই ইচ্ছা পূরণ করতে গরু ও মহিষের ১০টি গাড়িতে বরযাত্রী নিয়ে বর বেশে কনের বাড়ি যান নিরব।

এ সময় গ্রামবাংলার হরিয়ে যাওয়া ছৈযুক্ত গরু, মহিষের গাড়ি দেখতে শত শত নারী-পুরুষ ভিড় জমান রাস্তাসহ বর-কনের বাড়িতে। এমন আয়োজনে খুশি বর-কনের পরিবারসহ এলাকাবাসী। গ্রামবাংলার এ পুরোনো ঐতিহ্য ধরে রাখতে আগ্রহও প্রকাশ করেন অনেকে।

বরের বাবা কুদ্দুস বলেন, 'আমার ইচ্ছা ছিল, ছেলের বিয়েতে বরযাত্রী যাবে গরুর গাড়িতে। এ সময় গরুর গাড়ি পাওয়া দুষ্কর। তাই মহিষের নয়টি এবং গরুর একটি গাড়ির আয়োজন করি ছেলের বিয়েতে। ছেলেও মেনে নিয়ে গরুর গাড়িতে করেই বিয়ে করতে যায়।'

কনের চাচা জয়নাল বলেন, 'এটা গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া একটি ঐতিহ্য। এ রকম আয়োজনে আমরা খুশি।'

মহিষের গাড়ির পেছনে পা ঝুলিয়ে বসা এক বৃদ্ধা করিমন নেছা বলেন, 'প্রায় ৫০ বছর আগে এভাবেই এক প্রতিবেশীর বিয়েতে বরযাত্রী হিসেবে গিয়েছিলাম। দীর্ঘদিন পর এমন আয়োজনে খুব খুশি।'

এ বিষয়ে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী পীরগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি জয়নাল আবেদিন বাবুল বলেন, 'আবহমান বাংলার গ্রামীণ ঐতিহ্যগুলো ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে গরুর গাড়িতে বরযাত্রায় প্রায় হারিয়ে যাওয়া লোকজ সংস্কৃতির কিছু কিছু আয়োজন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসব গ্রামীণ লোকজ ঐতিহ্য ধারণ ও লালন করা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।'

এ ব্যাপারে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব প্রফেসর মনতোষ কুমার দে বলেন, 'পুরোনো দিনের ইতিহাস ঐতিহ্য ধরে রাখতে ও বাবার ইচ্ছা পূরণে উদ্যোগটি সত্যিই আমাদের পুরোনো এতিহ্যকে ধারণ ও লালন করে। এটা নতুন ও তরুণ প্রজন্মকে আবহমান বাংলার গ্রামীর ঐতিহ্যগুলো জিইয়ে রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আমার বিশ্বাস।

এমএম

সম্পর্কিত বিষয়:

×