ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২১ মার্চ ২০২৩, ৭ চৈত্র ১৪২৯

monarchmart
monarchmart

ভরাট জলাশয়, জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ, বিলুপ্তির পথে দেশী প্রজাতির মাছ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ১০:৪৮, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ভরাট জলাশয়, জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ, বিলুপ্তির পথে দেশী প্রজাতির মাছ

দেশি মাছ


জলবায়ুর পরিবর্তন। পরিবেশ ও প্রতিবেশের মারাত্মক বিরূপ প্রভাব। অভ্যন্তরীণ খাল, জলাশয়-পুকুর ভরাট ও দখল। পাশাপাশি ফসলি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত সার ও কীটনাশকের ব্যবহারে দ্রত বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে দেশী প্রজাতির মাছ। 

মাছের জনপদ কলাপাড়ায় এখন মাছে ভাতে বাঙালি কথাটি মানুষ ভুলতে বসেছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষ দেশীয় মাছ খেতে পারছে না। ফলে আমিষ থেকে অধিকাংশ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ একসময় এসব মাছ অতি সাধারণ মধ্য ও নিম্নবিত্ত মানুষের নাগালের মধ্যে ছিল।

 খাল, ডোবা, বিলের পানিতে, জলাশয় ও পুকুরে প্রচুর পরিমাণ দেশি প্রজাতির মাছের আবাদ করত। এখন সেই দৃশ্য বদলে গেছে। দেশি প্রজাতির মাছের আকাল বিরাজ করছে।

সাগরপারের জনপদখ্যাত কলাপাড়ায় এখনও অসংখ্য নদী-নালা, খাল-বিল পুকুর জলাশয় রয়েছে। যেখানে পরিকল্পিতভাবে হাইব্রিড প্রজাতির তেলাপিয়া. কই-কাতলা, ব্রিগেড, পাঙ্গাশ মাছের চাষ হয়। দেশি প্রজাতির শিং, কৈ, মাগুর, টাকি, শোল, বোয়াল মাছের চাষ হয়না। নেই প্রাকৃতিকভাবে এসব মাছ বেড়ে ওঠার পরিবেশ। 

সকল জলমহলসহ জলাধার ব্যক্তি বিশেষের দখলে। আর বক্তিগত পুকুরগুলো অধিকাংশ ভরাট হয়ে গেছে। অভ্যন্তরীণ খালের শাখা প্রশাখাসহ মূল খাল পর্যন্ত দখল ও ভরাট হয়ে গেছে। শুকনো মৌসুমে পানি না থাকায় মা মাছ মারা পড়ছে। দ্রæত কমে যাচ্ছে দেশি প্রজাতির মাছের উৎপাদন। কৃত্তিমভাবে যদিও কার্প জাতীয় মাছের উৎপাদন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বাড়ছে। 

এসব মাছের চাষ করতে গিয়ে পুকুর খালেও প্রয়োগ করা হয় কীটনাশক, সার। আর ধানক্ষেতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও সার প্রয়োগ করা হয় নির্বিচারে। ফলে দেশীয় প্রজাতির মাছের মড়ক দেখা দেয়। উপজেলায় দুই শতাধিক খাল ভরাট হয়ে গেছে। ফলে বংশবৃদ্ধি ঘটতে পারেনা মাছের।

বেসরকারি এক সমীক্ষায় জানা গেছে, দেশে আহরিত শতকরা ৭৩ ভাগ মাছ মিঠা পানির। কিন্তু স্থানীয় বাজারে এখন আগের মতো দেশীয় মাছ আসছে না। পটুয়াখালীতে মাছের অন্যতম অভয়াশ্রম লোহালিয়া, তেঁতুলিয়া আন্দারমানিক. রামনাবাঁধ নদী। মানুষ খাদ্য তালিকায় মাংসের পরে স্থান পেয়েছে মাছ। পুষ্টিগুনে দেশী প্রজাতির বিভিন্ন মাছ ছাড়াও মলা-ঢেলাসহ ছোট মাছ অন্যতম। 

কিন্তু বাজারে সচরাচর এসব প্রজাতির মাছের দেখা মেলেনা। হাইব্রিড মাছে বাজার সয়লাব হওয়ায় দ্রæত দেশীয় প্রজাতির মাছ এখন বিলুপ্তির পথে। বিদেশি ২৪ প্রজাতির হাইব্রিড মাছ চাষের ব্যাপকতায় দেশীয় আড়াই শতাধিক প্রজাতির মাছ হুমকির মুখে পড়েছে। 

হাইব্রিড জাতের সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প, মিরর কার্প, বিগহেড, থাই সরপুঁটি, থাই কৈ, থাই পাঙ্গাস, গাস কার্প, পাঁচ প্রজাতির তেলাপিয়া প্রজাতির মাছ চাষ হচ্ছে। হাইব্রিড জাতের মাছ চাষের আগে পুকুর ডোবার পানি সেচ দেয়া হয়। মারা যায় দেশি প্রজাতির সকল মাছ। এরপরে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো হয়। ফলে মাছ, শামুক ও অন্যান্য জলজ প্রাণির প্রজনন ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। 

মৎস্যজীবীরা অধিক লাভের আশায় হাইব্রিড মাছের চাষ করছে। ধ্বংস হচ্ছে দেশি প্রজাতির মাছ। দেশী প্রজাতির কৈ, মাগুর, শিং, পাবদা, টাকি, রুই, কাতল, মৃগেল, চিতল, রিটা, গুজি, আইড়, পাঙ্গাস, বোয়াল, ট্যাংরা, বোয়াল, খৈলসাসহ সব হারিয়ে যাচ্ছে। 
এছাড়া ফলি, বামাশ, টাটকিনি, তিতপুটি, আইড়, গুইলসা, কাজলি, গাং মাগুর, চেলা, বাতাসি, রানি, টেংরা, পাবদা, পুঁটি, সরপুঁটি, চেলা, মরা, কালোবাওশ, শোল, গজালসহ ৬৫ প্রজাতির মাছ আজ বিলুপ্তির পথে। অনেক মাছের বংশ পর্যন্ত নিশ্চিহৃ হয়ে গেছে। 
বিশেষ করে বর্ষা মওসুমে দেশীয় মাছ ধরার উৎসব ছিল। বর্ষার নতুন পানিতে পাওয়া যেত বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ। চৈত্র, বৈশাখ এবং আষাঢ় মাসে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছের ডিম, রেনু ও পোনা দেয়। অভজ্ঞমহলের মতে দেশি মাছ সংরক্ষণের জন্য কারেন্ট জালের ব্যবহার বন্ধ করা,  মাছের অভয়াশ্রম গড়ে তোলা, পুরাতন জলাশয়গুলো সংস্কার করা, ছোট দেশি জাতের মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ও অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয় সংরক্ষণ, প্লাবনভুমি মাছের বংশবৃদ্ধির জন্য উপযোগী রাখা খুবই জরুরি।

তবে প্রবীণ মানুষের দাবি, জলাশয় খাল, পুকুর ভরাটের কারণে মাছের আবাসস্থল নেই। সেচ দিয়ে মাছ ধরে। শুকানো মওসুমে খাল-বিল-ডোবা আমরা শুকিয়ে মাছ ধরি। সেখানে দেখা গেছে কোনো মাছ থাকতে পারছে না । শুকিয়ে ফেলার কারনে মাটি ফেটে যায়। সেখানে মাছ থাকে কিভাবে। যা আইনত নিষিদ্ধ। 

এছাড়া চরজাল, বেড়জালসহ নানান ধরনের নিষিদ্ধ সুফঁসের মশারি নেট দিয়ে মাছ শিকার করায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মারা পড়ছে।
 

এসআর

monarchmart
monarchmart

শীর্ষ সংবাদ:

একনেকে ৯ প্রকল্প অনুমোদন
প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাচ্ছে আরও ৩৯ হাজার ৩৬৫ পরিবার
পৃথিবীর কোনো দেশেই গণতন্ত্র ত্রুটিমুক্ত নয় :ওবায়দুল কাদের
বিএনপি থেকে শওকত মাহমুদ বহিষ্কার
দেশে চালের অভাব নেই, কৃত্রিম সংকট করলে ব্যবস্থা :খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে রিট চেম্বার আদালতে খারিজ
শিবচরে ১৯ জনের প্রাণহানি,৩১ যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা
গ্যাস নেয়ার সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ১ জনের মৃত্যু
লালপুরে প্রধানমন্ত্রীর উপহার রঙিন ঘর পাচ্ছে ১৫৫ টি পরিবার
দুবাইতে আরাভ খানকে আটকের গুঞ্জন!
রাশিয়ায় চীনা প্রেসিডেন্ট, ইউক্রেন সফরে জাপানের প্রধানমন্ত্রী
কর্মীদের চীনা ভিডিও অ্যাপ টিকটক ডিলিট করতে বলল বিবিসি