ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আগামীকাল থেকে বরিশাল

প্রার্থীদের পদচারণা বাড়ছে

গোলাম ছারোয়ার ছানু, মানিকগঞ্জ

প্রকাশিত: ০০:০৫, ২৬ জানুয়ারি ২০২৩

প্রার্থীদের পদচারণা বাড়ছে

এক বছর বাকি থাকলেও মানিকগঞ্জ-৩

মানিকগঞ্জ-৩
এক বছর বাকি থাকলেও মানিকগঞ্জ-৩ (মানিকগঞ্জ সদর-সাটুরিয়া উপজেলা) আসনে বইছে ভোটের হাওয়া। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী এলাকায় বেড়ে গেছে বড় দলগুলোর প্রার্থীদের পদচারণা। এ আসনের হেভিওয়েট সম্ভাব্য প্রার্থীরা নানা কর্মসূচি ও দলীয় কার্যক্রম নিয়ে ভোটার ও নিজ দলের কর্মীদের চাঙা করার চেষ্টা করছেন। গত ১৪ বছরে আসনটিতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এই উন্নয়নই আগামী নির্বাচনে আবারও বিজয়ে আওয়ামী লীগের মূল হাতিয়ার। তবে বিএনপিরও একটি ভালো ভোট আছে আসনটিতে। তারাও আসনটি পুনরুদ্ধারের আশায় ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন। 
মানিকগঞ্জ-৩ আসনের হেভিওয়েট প্রার্থী হচ্ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন। আগামী নির্বাচনেও তার মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত। তিনি মন্ত্রণালয়ের কাজের মধ্যেও তার নির্বাচনী এলাকার শহর থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছাড়াও এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন সদ্য সাবেক জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, সাবেক জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি, সাবেক শ্রমিকলীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বাদরুল ইসলাম খান বাবলু।

এফবিসিসিআইএর পরিচালক জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক তোসাদ্দেক হোসেন খান টিটুও মনোনয়নপ্রত্যাশী। তারা ছাড়া এ পর্যন্ত আর কেউ মনোনয়ন চাওয়ার কথা জানান দেননি। 
এখানে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ২-৩ জনের নাম শোনা গেলেও জেলা বিএনপির চালিকা শক্তি বর্তমান সভাপতি বিএনপির সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত হারুনার রশিদ খান মুন্নু’র কন্যা মুন্নু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফরোজা খান রিতা রয়েছেন সুবিধাজনক অবস্থানে। তিনি বিভিন্ন সভাসহ দলীয় কর্মকা-ের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সাবেক জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জামিলুর রশিদ খান দলীয় কর্মকা-ের মধ্যেই রয়েছেন। মানিকগঞ্জ জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতার নামও নির্বাচনের মাঠে রয়েছে। 
এ আসন থেকে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও বঙ্গবন্ধু সরকারের সংসদ সদস্য, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক, বর্তমান গণফোরামের সভাপতিম-লীর সিনিয়র সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল ইসলাম খান কামাল। তিনি বিভিন্ন কাজের মধ্যেই তিনি নির্বাচনী প্রচার কাজ করে যাচ্ছেন। জাতীয় পার্টি থেকে এ আসনের নির্বাচনে মনোনয়ন চাইবেন প্রেসিডিয়াম মেম্বার মো. জহিরুল আলম রুবেল।
মানিকগঞ্জ-৩ আসনটি জেলা শহর ও পৌরসভা কেন্দ্রিক হওয়ায় ভোটার ও দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ আসন হিসেবেই দেখা হয়। কারণ এই আসন জুড়েই জেলার বড় রাজনৈতিক দলগুলোর জেলার প্রথম সারির নেতারা আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ৭টি, সাটুরিয়ার ৯টি ইউনিয়ন ও মানিকগঞ্জ পৌরসভা নিয়ে গঠিত এই আসন। এই আসনের ১৯টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভার নারী-পুরুষ মিলে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪০ হাজার ৯১৮ জন।
মানিকগঞ্জ-৩ আসনে ১৯৭৩ সালের নির্বাচন ছাড়া ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো জয় পায় আওয়ামী লীগ। সে নির্বাচনে বিএনপির প্রয়াত নেতা হারুনার রশিদ খান মুন্নুকে পরাজিত করে জাহিদ মালেক স্বপন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় জাহিদ মালেক স্বপন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হন। উপহার হিসেবে পান মন্ত্রিত্ব। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে এলাকার উন্নয়নের কাজ শুরু করেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। পুরস্কার হিসেবে পান পূর্ণ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদ। 
গত ১০ বছরে মন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন এ আসনে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটিয়েছেন, বিশেষ করে স্বাস্থ্যখাতে যা চোখে পড়ার মতো। এবারও তিনি এই আসনে শক্তিশালী মনোনয়নপ্রত্যাশী। নানা কারণে এই আসনে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে কিছুটা অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে। যে দ্বন্দ্বের জের হিসেবে গত জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মহিউদ্দিনকে অল্প ব্যবধানে জয়লাভ করতে হয়।

এ দ্বন্দ্বকে কাটিয়ে দেশের ব্যাপক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে নির্বাচনে নৌকার বিজয়ের ধারাকে অব্যাহত রাখতে নেতা কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় নানা নির্বাচনী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন এমপি। 
একই দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা বদরুল ইসলাম খান বাবলু। তিনি দলীয় সকল কর্মকা-ে অংশগ্রহণসহ নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ২০১৮ সালেও তিনি মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। 
আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে এফবিসিসিআইএর পরিচালক জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক তোসাদ্দেক হোসেন খান টিটু এলাকায় বিলবোর্ড ব্যানার লাগানোসহ দলীয় সকল কর্মকা-ে অংশগ্রহণ করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলেনে বিশাল শোডাউন করেছেন তিনি। গত নির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন পেতে মাঠ জমিয়েছিলেন। 
এ আসনটি একদা বিএনপির ঘাঁটি বলা হলেও দীর্ঘদিন ধরেই এখন আওয়ামী লীগের দখলে। গত তিনটি সংসদ নির্বাচনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন জয়লাভ করেছেন।

এই আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা ৬ বার জয়লাভ করেন। এই আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী বর্তমান জেলা বিএনপির কর্ণধার আফরোজা খান রিতা। নির্বাচনে তাঁর প্রধান চ্যালেঞ্জ এই আসনটি পুনরুদ্ধার করা। এই আসন থেকে তার প্রয়াত পিতা হারুনার রশিদ খান মুন্নু নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রী হয়েছিলেন। আফরোজা খান রিতা সেই টার্গেট নিয়েই নেতাকর্মীদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। দলীয় সকল কর্মসূচিকে সফল করতে তিনি প্রধান ভূমিকা রাখছেন। ইতোমধ্যে তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে জেলা বিএনপির সভাপতি নির্বচিত হন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জয়ের আশা করেন তিনি।

অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জামিলুর রশিদ খান দলীয় কর্মকা-ের মধ্যেই নির্বাচনী কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থেকে নেতৃত্বে দিচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদী। আতাউর রহমান আতাও মনোনয়নপ্রত্যাশী। এক সময় বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও বর্তমানে খুব একটা সক্রিয় নন। এ আসনের নির্বাচনে আর অন্য কোনো দলের আওয়াজ এখনো পাওয়া যায়নি।
সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফসার উদ্দীন সরকার বলেন, মানিকগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ মালেক রাষ্ট্রীয় কাজ শেষ করে যখনই সুযোগ পান তখন মানিকগঞ্জের নিজ বাড়িতে ছুটে এসে জেলা এবং উপজেলায় দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া যে কয়দিন তিনি নিজ বাড়িতে থাকেন, তার নির্বাচনী এলাকায় ছুটে গিয়ে দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষদের সঙ্গে দেশের উন্নয়ন তুলে ধরে সার্বিক বিষয়ে মতবিনিময় করেন।

×