ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হবিগঞ্জে চালু থাকে না ইটিপি

শিল্পবর্জ্যে পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে

নিজস্ব সংবাদদাতা, হবিগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৩:৩৭, ২৪ জানুয়ারি ২০২৩

শিল্পবর্জ্যে পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে

হবিগঞ্জের শিল্পকারখানার বর্জ্য জলাশয়ে পড়ছে 

গ্যাস ও উন্নত সড়ক যোগাযোগকে কেন্দ্র করে হবিগঞ্জে বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে শিল্প কারখানা। কিন্তু এসব কারখানার অনেকটিতে চালু থাকে না ইটিপি। এখানে প্রায় শিল্প কারখানা থেকে বর্জ্য সরাসরি জলাশয়ে যাচ্ছে। এ কারণে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে হবিগঞ্জের হাওড়, নদী খাল ও বিল। শিল্প কারখানার বর্জ্যপদার্থের কারণে পানি দূষিত হয়ে মারাত্মক দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

অনেক স্থানে পানির রং কুচকুচে কালো হয়ে গেছে। এতে প্রতিনিয়তই অসুস্থ হচ্ছেন নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোর হাজারো বাসিন্দা। শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ থেকে শুরু করে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। নদীতে এখন আর মাছ নেই। নদীর বিষাক্ত পানি পান করে মারা যাচ্ছে মাছ, গরু, ছাগল, হাঁস ও মুরগি।
নিয়মানুযায়ী বিষাক্ত বর্জ্য একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাইরে নির্গত করতে হয়। কিন্তু অনেক শিল্প কারখানা সেই নিয়ম অনুসরণ না করে বর্জ্য ও বিষাক্ত কেমিক্যাল সরাসরি জলাভূমিতে ছেড়ে দিচ্ছে।  জানা গেছে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে সুতাং নদীর উৎপত্তি। জেলার চুনারুঘাট উপজেলার ওপর দিয়ে বাংলাদেশ অংশে প্রবেশ করেছে নদীটি। পরে শায়েস্তাগঞ্জ হয়ে লাখাই উপজেলার ওপর দিয়ে মেঘনা নদীতে গিয়ে মিশেছে সেটি। 
অলিপুর শিল্প এলাকা থেকে বয়ে গেছে শৈলজুড়া ভাটি খাল। অলিপুর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার অতিক্রম করে এ খালের সংযোগ হয়েছে গোড়াবই গ্রামে সুতাং নদীতে। ২০১৫ সাল থেকে বিভিন্ন শিল্প কারখানার বিষাক্ত কালো পানি এ খাল দিয়ে সুতাং নদীতে প্রবেশ করছে। এ নদী থেকে দূষিত পানি প্রবেশ করছে হাওড়সহ প্রাকৃতিক জলাশয়ে। 
এক সময় সুতাং নদীতে বর্ষা মৌসুমে স্থানীয় লোকজন  নৌকা নিয়ে দল বেঁধে মাছ ধরেছে। সেই সময়ে শুকনো  মৌসুমেও প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। এখন এ ধারা পাল্টে  গেছে। সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, শায়েস্তাগঞ্জের অলিপুরসহ নানা এলাকার শিল্পের বিষাক্ত কালো পানি শৈলজুড়া ভাটি খাল দিয়ে সুতাং নদীতে প্রবেশ করছে। এ কারণে নানা প্রজাতির মাছ প্রায় বিলুপ্ত। বর্তমানে শীতকাল আসার আগেই নদীর পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। নদীতে মাছ ধরা দূরের কথা, অনেক স্থানে জেগে উঠছে চর।

নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। শুকিয়ে যাওয়া নদীর চরে লোকজন বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করছে।
অনেকে আবার নদীর পাড় ভরাট করে ঘরবাড়ি তৈরি করছেন। এতে করে নদীর রূপরেখা দিন দিন হারিয়ে  যেতে বসেছে। নদীতে যেটুকু পানি রয়েছে তা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তাই নদীপাড়ের লোকজন মাটির নিচ  থেকে পাম্পের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করে বোরো আবাদসহ নানা ফসল চাষাবাদ করছেন।
পরিবেশ অধিদপ্তর হবিগঞ্জের উপ-পরিচালক আখতারুজ্জামান টুকু জানান, আমাদের জনবল কম থাকার কারণে এখনও হবিগঞ্জের সবগুলো শিল্প কারখানা পরিদর্শন করা সম্ভব হয়নি।  হবিগঞ্জ জেলা মৎস্য বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী,  জেলায় মোট উৎপাদনের বছরে ৫ টন মাছ উদ্বৃত্ত থাকে। শিল্পবর্জ্যে এমন প্রভাব মৎস্য সম্পদের জন্য অশনি সংকেত। এ বিষয়ে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে মতপ্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল। 
জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, নদী ও হাওড় রক্ষায় কার্যক্রম চলছে। দূষণরোধে পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। সরেজমিনে দেখার পর খনন ও দখল, দূষণরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

×