ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৫ জুলাই ২০২৫, ১০ শ্রাবণ ১৪৩২

গেমিং এখন শুধু খেলা নয়, ক্যারিয়ার! কিভাবে শুরু করবেন?

প্রকাশিত: ০৯:৩৬, ২৪ জুলাই ২০২৫

গেমিং এখন শুধু খেলা নয়, ক্যারিয়ার! কিভাবে শুরু করবেন?

ছ‌বি: প্রতীকী

আগে যেটা শুধু সময় কাটানোর জন্য খেলা হতো, এখন সেটাই হয়ে উঠছে অনেকের পেশা। গেম খেলে জীবিকা অর্জন করা এখন আর কল্পনার বিষয় নয়। আজকের দিনে গেমিং এমন এক শিল্পে পরিণত হয়েছে, যেখানে লাখ লাখ মানুষ কাজ করছে, আয় করছে, এমনকি বিশ্বজুড়ে খ্যাতিও অর্জন করছে। বাংলাদেশেও গেমিং ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, এবং তরুণরা এখন এটা নিয়ে ক্যারিয়ার ভাবছে।

তবে অনেকেই জানে না কিভাবে শুরু করতে হবে। কেউ ভাবে ভালো কম্পিউটার লাগবে, কেউ ভাবে ইংরেজিতে ভালো হতে হবে। আসলে শুরুটা করা যেতে পারে খুব সহজভাবে, ধাপে ধাপে পরিকল্পনা করে।

প্রথমেই দরকার গেমিংকে সিরিয়াসলি নেওয়া। অনেকে এখনো গেমকে শুধু সময় নষ্ট ভাবেন, তাই নিজের মানসিকতা বদলানো জরুরি। গেম যদি ঠিকভাবে খেলা হয়, সঠিক পথ বেছে নেওয়া হয়, তাহলে সেটা হতে পারে একটি সফল ক্যারিয়ার।

এরপর দরকার ভালো ইন্টারনেট সংযোগ এবং একটি কাজ চালানো যায় এমন কম্পিউটার বা স্মার্টফোন। হাই এন্ড গেমিং সেটআপ না থাকলেও শুরু করা যায়। প্রথম দিকে আপনি মোবাইল গেম থেকেই শুরু করতে পারেন, যেমন PUBG Mobile, Free Fire, Call of Duty Mobile ইত্যাদি। এগুলোতে প্রতিযোগিতামূলক খেলা, স্ট্রিমিং বা টুর্নামেন্ট খেলে দক্ষতা বাড়ানো যায়।

গেমিং ক্যারিয়ারের অনেক পথ রয়েছে। আপনি চাইলে একজন প্রফেশনাল গেমার হতে পারেন, অর্থাৎ প্রতিযোগিতামূলক গেমে অংশ নিয়ে পুরস্কার জিতে আয় করতে পারেন। আবার আপনি হতে পারেন গেম স্ট্রিমার, মানে গেম খেলার সময় সেটা লাইভ করে অন্যদের দেখানো। YouTube, Facebook Gaming, Twitch-এর মতো প্ল্যাটফর্মে অনেকে এইভাবে গেম খেলে আয় করছেন।

আরেকটা পথ হলো গেম কনটেন্ট নির্মাতা হওয়া। আপনি যদি গেম সম্পর্কে ভালো জানেন, মজারভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেন, টিপস দিতে পারেন বা খেলার সময় নিজের প্রতিক্রিয়া মজাদারভাবে প্রকাশ করতে পারেন, তাহলে মানুষ আপনার ভিডিও দেখতে পছন্দ করবে। একসময় আপনার ফলোয়ার বাড়বে, স্পনসর আসবে, এবং আয়ও হবে।

তবে শুধু খেলেই হবে না। গেমিং স্কিল বাড়াতে হবে, গেমের নিয়ম-কানুন, কৌশল, চরিত্র, ম্যাপ ইত্যাদি ভালোভাবে জানতে হবে। প্রতিদিন নিয়ম করে খেলার অভ্যাস গড়তে হবে। ইউটিউবে বা প্রফেশনাল গেমারদের ভিডিও দেখে শেখার চেষ্টা করুন। কোনো নির্দিষ্ট গেমে ভালো হতে চাইলে সেটাতে ফোকাস করতে হবে।

সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করাও গুরুত্বপূর্ণ। গেম খেলার পাশাপাশি নিজের কাজ মানুষকে জানাতে হবে। Facebook, Instagram, YouTube-এ নিজের গেম খেলার ভিডিও, কনটেন্ট শেয়ার করলে মানুষ আপনাকে চিনবে। ভালো গেমার হলেও যদি কেউ আপনাকে না চেনে, তাহলে ক্যারিয়ার গড়া কঠিন হয়ে যাবে।

এছাড়া বিভিন্ন অনলাইন বা অফলাইন গেমিং টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করুন। এতে অভিজ্ঞতা বাড়বে, অন্যদের সঙ্গে পরিচয় হবে, এবং আপনি নিজেকে যাচাই করতে পারবেন। কিছু কিছু টুর্নামেন্টে পুরস্কারও থাকে, যা আপনাকে আরও উৎসাহ দেবে।

গেমিং ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ধৈর্য রাখা। শুরুতে হয়তো কেউ দেখবে না, ফলোয়ার বাড়বে না, ইনকামও হবে না। কিন্তু নিয়মিত চেষ্টা করলে এক সময় ফল আসবেই। অনেক বড় বড় গেমারদের শুরুও হয়েছিল একদম সাধারণভাবে, কিন্তু তারা ধৈর্য ও পরিশ্রম দিয়ে সাফল্য পেয়েছেন।

বাংলাদেশে এখন গেমিং স্টুডিও, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, গেম ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। চাইলে আপনি ভবিষ্যতে গেম ডেভেলপার, গেম ডিজাইনার, এনিমেটর, টেকনিক্যাল সাপোর্ট এক্সপার্ট, বা এমন অনেক পেশায় যুক্ত হতে পারেন।

গেমিংকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চাইলে পড়াশোনাকেও অবহেলা করা যাবে না। সময় ম্যানেজমেন্ট খুব জরুরি। পড়াশোনার পাশাপাশি সময় ভাগ করে গেমিং ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে হবে। পরিবারকে বোঝাতে হবে আপনি কী করতে চান, কিভাবে এটা আপনার ভবিষ্যৎ গড়তে পারে।

সঠিক পরিকল্পনা, নিষ্ঠা ও ধৈর্য থাকলে গেমিং হতে পারে আপনার জন্য একটি সফল এবং আনন্দদায়ক ক্যারিয়ার। এখন সময়, নিজের স্বপ্নের পথ শুরু করার!

এম.কে.

আরো পড়ুন  

×