ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৫ জুলাই ২০২৫, ১০ শ্রাবণ ১৪৩২

আপনার মোবাইল যদি হ্যাক হয়, ৫ মিনিটে কী করবেন?

প্রকাশিত: ০৯:৩৩, ২৪ জুলাই ২০২৫

আপনার মোবাইল যদি হ্যাক হয়, ৫ মিনিটে কী করবেন?

ছ‌বি: প্রতীকী

আজকাল মোবাইল ফোন শুধু ফোন করার বা মেসেজ পাঠানোর যন্ত্র নয়। এটি আমাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও, এমনকি কাজের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল রাখার জায়গা। তাই ফোন হ্যাক হওয়া মানে যেন নিজের পুরো জীবন কারও হাতে তুলে দেওয়া। যদি হঠাৎ মনে হয় আপনার মোবাইল হ্যাক হয়েছে বা কেউ আপনার ডিভাইসে অনধিকার প্রবেশ করেছে, তাহলে ভয় না পেয়ে সচেতনভাবে কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে হবে। এসব কাজ আপনি মাত্র ৫ মিনিটেই করতে পারেন।

প্রথমে নিজের ফোনে অস্বাভাবিক কিছু দেখেছেন কিনা খেয়াল করুন। যেমন, অচেনা অ্যাপ ইনস্টল হয়ে যাওয়া, ফোন হঠাৎ গরম হয়ে যাওয়া, ব্যাটারি দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়া, ইনটারনেট খরচ বেড়ে যাওয়া, নিজের অজান্তে কল বা মেসেজ চলে যাওয়া — এসবই হতে পারে হ্যাক হওয়ার লক্ষণ। যদি এমন কিছু বুঝতে পারেন, তাহলে দ্রুত নিচের কাজগুলো করুন।

প্রথমে মোবাইলটি ফ্লাইট মোডে বা এয়ারপ্লেন মোডে নিয়ে নিন। এতে ইন্টারনেট, কল, ব্লুটুথ সব ধরনের নেটওয়ার্ক সংযোগ বন্ধ হয়ে যাবে এবং হ্যাকার যদি ফোনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করে থাকে, তাহলে সেটি সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে যাবে। ফ্লাইট মোড চালু করার পর আপনি নিরাপদে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারবেন।

এরপর ফোনে থাকা সব গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন। বিশেষ করে আপনার ইমেইল, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, ব্যাংকিং অ্যাপ, গুগল অ্যাকাউন্ট— এগুলোর পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা সবচেয়ে জরুরি। সম্ভব হলে অন্য কোনো ডিভাইস যেমন ল্যাপটপ বা অন্য মোবাইল থেকে লগইন করে পাসওয়ার্ড বদলান। কারণ আপনার হ্যাক হওয়া ফোনে এখনও হ্যাকার নজর রাখছে — এমন আশঙ্কা থাকতেই পারে।

এরপর ফোনের সব অ্যাপ চেক করুন। আপনি কোনো অজানা বা অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ দেখতে পেলে সঙ্গে সঙ্গে তা আনইনস্টল করে দিন। হ্যাকাররা অনেক সময় ম্যালওয়্যার বা স্পাইওয়্যার অ্যাপ ইন্সটল করে ফেলে যা ফোনের সব তথ্য চুরি করতে পারে। এমনকি পরিচিত অ্যাপের নামেও নকল অ্যাপ থাকতে পারে। তাই সন্দেহজনক কিছু দেখলে গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপ স্টোর থেকে যাচাই করে নিন।

আরও নিশ্চিত হতে আপনি ফোনে একটি ভালো অ্যান্টিভাইরাস বা সিকিউরিটি অ্যাপ ইনস্টল করে স্ক্যান করুন। এতে যদি কোনো ম্যালওয়্যার বা ভাইরাস থাকে, সেটা ধরা পড়বে এবং আপনি তা মুছে ফেলতে পারবেন। অনেক অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ হ্যাকারদের অ্যাকসেস ব্লক করে দেয় এবং আপনার ফোন আরও সুরক্ষিত রাখে।

আপনার ফোনের ‘অ্যাপ পারমিশন’ সেটিংসে গিয়ে খেয়াল করুন কোন অ্যাপ কোন অনুমতি চাচ্ছে। অনেক সময় হ্যাকার অ্যাপ গোপনে মাইক্রোফোন, ক্যামেরা, লোকেশন, মেসেজ এমনকি কন্টাক্ট লিস্টেও প্রবেশাধিকার চায়। যেসব অ্যাপ অপ্রয়োজনীয় অনুমতি চেয়েছে বা যার প্রয়োজন নেই, সেগুলোর অনুমতি বন্ধ করে দিন।

পরবর্তী ধাপে, আপনি যদি বুঝতে পারেন ফোন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, তাহলে ফোনটি ‘ফ্যাক্টরি রিসেট’ করুন। তবে মনে রাখবেন, এতে ফোনে থাকা সব তথ্য মুছে যাবে। তাই রিসেট করার আগে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অন্য ডিভাইসে ব্যাকআপ নিয়ে রাখুন। তবে হ্যাক হওয়া অবস্থায় ব্যাকআপ নেওয়ার সময় সাবধান থাকতে হবে, যেন ক্ষতিকর কিছু অন্য ডিভাইসে না ছড়িয়ে পড়ে।

এরপর মোবাইল অপারেটর বা সংশ্লিষ্ট সেবা প্রদানকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করুন। যেমন, যদি ফোন নম্বর ক্লোন বা ডুপ্লিকেট করা হয়ে থাকে, তাহলে অপারেটরকে জানিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা বিকাশ, নগদ ইত্যাদিতে সন্দেহজনক কিছু ঘটেছে কিনা খেয়াল করুন এবং প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিন।

সবশেষে, আপনার গুগল অ্যাকাউন্ট বা আইক্লাউড অ্যাকাউন্টে গিয়ে দেখুন কোনো নতুন ডিভাইস থেকে লগইন করা হয়েছে কি না। অচেনা ডিভাইস বা লোকেশন থেকে যদি লগইন হয়ে থাকে, তাহলে দ্রুত সেই ডিভাইসগুলো লগআউট করে দিন এবং নিরাপত্তা বাড়াতে টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন চালু করুন।

মোবাইল হ্যাক হওয়ার বিষয়টি ভয়ের হলেও, দ্রুত ব্যবস্থা নিলে বড় ক্ষতি এড়ানো সম্ভব। মাত্র ৫ মিনিট সময় নিয়ে সচেতনভাবে এই পদক্ষেপগুলো নিলে আপনি নিজেকে ও আপনার তথ্যকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন। প্রযুক্তির দুনিয়ায় নিরাপদ থাকতে হলে সতর্কতাই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।

এম.কে.

আরো পড়ুন  

×