
ছবি: সংগৃহীত
সড়কে গাড়ি চালানোর সময় গতি নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রতিটি চালকের জন্যই অত্যন্ত জরুরি। ট্রাফিক নিয়ম মানা, দুর্ঘটনা এড়ানো—সবকিছুর কেন্দ্রেই রয়েছে গাড়ির গতি। কিন্তু আপনি কি কখনও লক্ষ্য করেছেন, গাড়ির ড্যাশবোর্ডে দেখানো গতি আর স্মার্টফোনে জিপিএস অ্যাপে দেখানো গতির মাঝে কিছুটা পার্থক্য থাকে? প্রশ্ন উঠতেই পারে—আসল গতিটা কোনটা?
স্পিডোমিটার: সচেতনতার জন্যই বাড়তি গতি
প্রথমেই জেনে রাখা ভালো, গাড়ির স্পিডোমিটার ইচ্ছাকৃতভাবেই আসল গতির চেয়ে একটু বেশি দেখায়। এটি কোনো ত্রুটি নয়, বরং চালকদের নিরাপদ রাখার জন্য প্রস্তুতকারকদের একটি কৌশল। উদ্দেশ্য হলো—কখনো যেন চালক গাড়ির গতি আসলে যতটা, তার চেয়ে কম না ভাবেন।
ধরুন, আপনার গাড়ির প্রকৃত গতি ৫০ কিমি/ঘণ্টা, অথচ স্পিডোমিটার দেখাচ্ছে ৫৩ থেকে ৫৫ কিমি/ঘণ্টা। একইভাবে, হাইওয়েতে ১৩০ কিমি/ঘণ্টা গতিতে গাড়ি চালালে স্পিডোমিটার ১৩৫ থেকে ১৩৮ কিমি/ঘণ্টা পর্যন্ত দেখাতে পারে। এতে আপনি মনের অজান্তেই গতি সীমা অতিক্রম করছেন ভাবলেও, আসলে হয়তো সীমার মধ্যেই রয়েছেন।
জিপিএস (যেমন Waze): স্যাটেলাইট-ভিত্তিক সঠিক পরিমাপ—but with a catch
জিপিএস-ভিত্তিক অ্যাপ যেমন Waze, আপনার স্মার্টফোনের জিপিএস চিপ ব্যবহার করে আপনার অবস্থান ও গতি নির্ণয় করে। এই প্রযুক্তি বেশ নির্ভুল—বিশেষ করে খোলা সড়কে যেখানে সিগন্যাল শক্তিশালী থাকে। ফ্রান্সে চালকদের প্রায় ৪০ শতাংশ এই অ্যাপ ব্যবহার করেন এবং বিশ্বব্যাপী এটি ১৪ কোটিরও বেশি মানুষের পছন্দ।
তবে শহরের ভিতরে, সুউচ্চ ভবন, টানেল বা আবহাওয়াজনিত কারণে জিপিএস সিগন্যাল দুর্বল হয়ে পড়ে। এতে গতি মাপায় সাময়িক ভুল হতে পারে বা সামান্য বিলম্ব হতে পারে। ফলে হঠাৎ গতি বাড়ালে, জিপিএস হয়তো তা সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারবে না—তখন কিছুটা ‘ল্যাগ’ দেখা দেয়।
স্থির গতি মানে নির্ভুল জিপিএস রিডিং
যখন আপনি সমান গতিতে গাড়ি চালান—ধরা যাক গ্রামীণ রোডে ৮০ কিমি/ঘণ্টা বা হাইওয়েতে ১৩০ কিমি/ঘণ্টা—তখন জিপিএস রিডিং অনেকটাই নির্ভরযোগ্য হয়। কারণ তখন সিস্টেমের গতি গণনার জন্য তেমন পরিবর্তন ধরা লাগে না। তবে যদি আপনি সর্বোচ্চ গতিসীমার কাছাকাছি চালান, এমনকি ৫ কিমি/ঘণ্টা বেশি হলেও ট্রাফিক ক্যামেরা ফাঁকি দেবে না। তাই একটু বাড়তি সতর্কতা জরুরি।
তাহলে কাকে বিশ্বাস করবেন?
উত্তর হলো—দুইটিকেই, তবে নিজের সচেতনতা দিয়ে যাচাই করে। স্পিডোমিটার কিছুটা বাড়তি দেখালেও সেটিই আপনার গাড়ির অফিসিয়াল গতি নির্দেশক। আইনি ও নিরাপত্তাজনিত কারণে এটিকেই ভিত্তি ধরা উচিত। আর জিপিএস ব্যবহার করুন গতি পর্যবেক্ষণ ও রুট প্ল্যানিংয়ের সহায়ক হিসেবে।
একটা জিনিস মনে রাখতে হবে—স্পিড লিমিট হলো সর্বোচ্চ সীমা, লক্ষ্য নয়। নিরাপদ গতি সব সময় এর চেয়ে কিছুটা কম রাখলেই ভালো।
গাড়ির গতি পরিমাপের ক্ষেত্রে স্পিডোমিটার আর জিপিএস—দুইয়েরই ভূমিকা রয়েছে। স্পিডোমিটার কিছুটা বাড়তি দেখিয়ে আপনাকে সজাগ রাখে, আর জিপিএস দেয় বাস্তবসম্মত পরিমাপ। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—আপনার নিজের দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোযোগ। প্রযুক্তি হতে পারে সহায়ক, কিন্তু স্টিয়ারিং হাতে থাকা মানুষটিই সর্বশেষ সিদ্ধান্ত নেবেন। নিরাপদ থাকুন, সচেতন থাকুন।
সূত্র: https://www.itmag-dz.com/en/trends/speedometer-vs-gps-which-one-shows-your-real-speed/
রাকিব