
ছবি: সংগৃহীত।
ধর্মীয় অনুশাসনে পবিত্রতা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। শরীর ও আত্মাকে পরিচ্ছন্ন রাখা মুসলমানদের জন্য এক মৌলিক দায়িত্ব। শরীর অপবিত্র হলে কখন অজু এবং কখন গোসল ফরজ তা স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে ইসলামী শিক্ষায়। বিশেষত স্ত্রী সহবাস, স্বপ্নদোষ, হায়েজ (ঋতুস্রাব) ও নেফাস (প্রসবজনিত রক্তস্রাব) শেষ হওয়ার পর গোসল ফরজ হয়ে যায়।
এ অবস্থায় কেউ যদি ফরজ গোসল না করেন, তাহলে তার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত বা ধর্মীয় কাজ সম্পাদন নিষিদ্ধ থাকে। নিচে উল্লেখিত পাঁচটি কাজ পবিত্রতা ছাড়া সম্পাদন করা নিষেধ:
নামাজ আদায় করা:
পবিত্র কোরআনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, “হে ঈমানদারগণ! নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সালাতের ধারে-কাছে যেয়ো না, যতক্ষণ না বুঝতে পার যে, কী বলছ। আর অপবিত্র (জুনুব) অবস্থায়ও সালাত আদায় করো না, যতক্ষণ না গোসল করো।” (সূরা নিসা, আয়াত ৪৩)
কোরআন শরিফ স্পর্শ করা:
অপবিত্র অবস্থায় কোরআন শরিফ স্পর্শ করা ইসলামি বিধানে নিষিদ্ধ। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘যারা সম্পূর্ণ পবিত্র তারা ছাড়া অন্য কেউ তা স্পর্শ করে না।’ (সূরা ওয়াকিয়া, আয়াত, ৭৯)। ইবনে ওমর (রা.) এর বর্ণনা মতে,, ‘পবিত্র না হয়ে কোরআন কারীম স্পর্শ করবে না।' (দারে কুতনী, ৪৩১)
কোরআন তিলাওয়াত করা: হাদিস অনুযায়ী, রাসূল (সা.) বড় নাপাক অবস্থায় কোরআন তিলাওয়াত করতেন না।
হযরত আলী (রা.) বলেন, “রাসূল (সা.) সবসময় আমাদের কোরআন পড়াতেন, তবে জুনুব অবস্থায় থাকলে পড়াতেন না।” (তিরমিজি, ১৪৬; আহমদ, ১০১৪)
মসজিদে অবস্থান করা:
হায়েজ ও গোসল ফরজ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান ইসলামি শরিয়তে নিষিদ্ধ। হযরত আয়েশা (রা.) বর্ণিত, “রাসূল (সা.) বলেছেন, “হায়েজ হয়েছে এমন নারী ও গোসল ফরজ এমন অপবিত্র ব্যক্তির জন্য মসজিদে যাওয়া বৈধ করি না। (আবু দাউদ, ২৩২)।” তবে মসজিদের ভেতর দিয়ে অন্য কোথাও যেতে চাইলে তা বৈধ।
কাবা শরিফ তাওয়াফ করা:
পবিত্র না হয়ে কাবা শরিফের তাওয়াফ করাও শরিয়তসম্মত নয়। রাসূল (সা.) বলেন, আল্লাহর ঘর কাবায় তাওয়াফ করা নামাজ আদায়ের সমান।' (নাসাঈ, ২৯২০) অতএব, তাওয়াফ করার আগে পবিত্রতা নিশ্চিত করা আবশ্যক।
ইসলামী বিধানে পরিষ্কার বলা হয়েছে, পবিত্রতা ছাড়া কিছু ধর্মীয় কাজ করা নিষিদ্ধ। এজন্য গোসল ফরজ হলে তা যথাসময়ে আদায় করা একান্ত জরুরি। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।” (সূরা তাওবা, আয়াত ১০৮)
ইসলামি স্কলাররা পরামর্শ দেন, মুসলমানদের উচিত নিয়মিত শরীর ও আত্মাকে পবিত্র রাখা এবং ফরজ গোসলকে অবহেলা না করা। তা না হলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
মিরাজ খান