
সংগৃহীত
মুসলিম উম্মাহর কাছে জিলহজ্জ মাস অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও পবিত্র সময়। এ মাস শুধু হজ পালনের ক্ষেত্রেই নয়, বরং আত্মশুদ্ধি, আত্মত্যাগ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের এক অনন্য সুযোগ হিসেবে বিবেচিত।
চাঁদ দেখার সম্ভাব্য হিসাব অনুযায়ী, "২০২৫ সালে পবিত্র জিলহজ্জ মাস শুরু হতে পারে ২৮ মে"। সে হিসেবে "৫ জুন পড়বে ৯ জিলহজ্জ (আরাফার দিন)" এবং পরদিন, "৬ জুন, উদ্যাপিত হবে ঈদুল আযহা"। তবে ইসলামিক চন্দ্র পঞ্জি অনুসারে, চূড়ান্ত তারিখ নির্ধারণ হবে স্থানীয়ভাবে চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে।
সম্ভাব্য তারিখসমূহ - ২০২৫
- ১ জিলহজ্জ: ২৮ মে (সম্ভাব্য)
- ৯ জিলহজ্জ (আরাফা): ৫ জুন (সম্ভাব্য)
- ১০ জিলহজ্জ (ঈদুল আযহা): ৬ জুন (সম্ভাব্য)
তবে দেশের ভৌগোলিক অবস্থান এবং চাঁদ দেখার পার্থক্যের কারণে এই তারিখগুলোতে এক-দুই দিনের তারতম্য হতে পারে।
কেন বিভিন্ন দেশে এক তারিখে রোজা ও জিলহজ্জ শুরু হয় না?
ইসলামিক মাসগুলো চন্দ্র পঞ্জিকার ওপর নির্ভরশীল হওয়ায়, নতুন চাঁদ (হিলাল) দেখার মাধ্যমে মাসের শুরু নির্ধারণ করা হয়। ইসলামি শরিয়তে নির্দেশ আছে, খালি চোখে চাঁদ দেখা গেলে তবেই নতুন মাস গণ্য করা যাবে। আর এখানেই মূল পার্থক্য: ভৌগোলিক অবস্থান, আবহাওয়ার পার্থক্য এবং চাঁদের দৃশ্যমানতা এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভিন্ন হয়ে থাকে।
"সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে" আকাশ সাধারণত পরিষ্কার থাকে এবং পশ্চিমে অবস্থিত হওয়ার কারণে সেসব অঞ্চলে চাঁদ তুলনামূলক আগে দেখা যেতে পারে। পক্ষান্তরে,"দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোতে" মেঘলা আবহাওয়া ও ভিন্ন ভৌগোলিক পরিস্থিতির কারণে চাঁদ দেখা দেরিতে হয়।
অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক বা ইউরোপের কিছু দেশে চাঁদ দেখার পরিবর্তে জ্যোতির্বিদ্যাগত হিসাব অনুযায়ী আগে থেকেই মাসের শুরু ও ইদ নির্ধারণ করা হয়। এতে সময় ব্যবস্থাপনায় সুবিধা হলেও, অনেক আলেম একে শরিয়তের মৌলিক নিয়মের ব্যত্যয় মনে করেন।
ফলাফল হিসেবে দেখা যায়, এক দেশে রোজা, আরাফা বা ঈদ শুরু হয় একদিন আগে, অন্য দেশে একদিন পরে। এক্ষেত্রে শারীরিকভাবে বৈচিত্র্য থাকলেও, ইমান ও উদ্দেশ্যে সব দেশের মুসলমানরা একসাথে সংযুক্ত থাকেন।
ধর্মীয় ব্যাখ্যা ও ঐক্যের দৃষ্টিভঙ্গি
প্রতিবার এই পার্থক্য সামনে আসর পর প্রশ্ন ওঠে গোটা মুসলিম বিশ্বের জন্য একীভূত দিন নির্ধারণ কি সম্ভব নয়? ফিকহবিদদের মতে, ইসলামে স্থানীয়ভাবে চাঁদ দেখা এবং তদনুযায়ী রোজা ও ঈদ পালনের নির্দেশ রয়েছে। তাই সৌদি আরবের চাঁদ দেখা বাংলাদেশ বা অন্য দেশের জন্য বাধ্যতামূলক নয়।
তবে অনেকে মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে সৌদি আরবের সিদ্ধান্তকে অনুসরণ করেন, যা শরিয়তি দৃষ্টিকোণ থেকেও বৈধ। স্থানীয় অনুসরণ এবং বৈশ্বিক সংহতির মধ্যে এই ভারসাম্যই ইসলামের বহুত্ববাদী সৌন্দর্য।
২০২৫ সালের জিলহজ্জ মাস মুসলমানদের জন্য আত্মশুদ্ধি, ত্যাগ ও তাকওয়ার এক মহান সুযোগ। এই সময়টা শুধু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা একটি আত্মিক বিপ্লবের আহ্বান। ভিন্ন ভিন্ন তারিখে রোজা বা ঈদ পালনের ভেতরেও মুসলিম উম্মাহর মাঝে রয়েছে অভিন্ন চেতনার ঐক্য। ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্যই হলো বৈচিত্র্যের মাঝেও ঐক্যের অনুপম দৃষ্টান্ত।
হ্যাপী