
ছবি: সংগৃহীত।
“দুই দিন আগেও বলেছিলেন শেখ হাসিনা পালায় না। কিন্তু পরে তিনিই পালিয়ে গেলেন”—এমন মন্তব্য করেছেন লেখক ও বিশ্লেষক মারুফ কামাল খান। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে অংশ নিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।
মারুফ কামাল বলেন, “২৪-এর ছাত্রগণ অভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, আমি তাঁদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। কিন্তু সেই আন্দোলন দমন করতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল আন্দোলনকারীদের গুলি করে হত্যা করার। পুলিশ তখনো জানত না হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। তারা শুধু সেই রক্তক্ষয়ী নির্দেশই পালন করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “যাত্রাবাড়িকে আন্দোলনের ‘স্টালিনগ্রাদ’ বলা হচ্ছিল। সেখানেই সবচেয়ে বেশি মানুষ নিহত হয়, কারণ হাসিনার দেশত্যাগের খবর তখনও সবার কাছে পৌঁছায়নি। ফলে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে।”
টকশোতে মারুফ কামাল বলেন, “শেখ হাসিনার কণ্ঠে দেওয়া সেই হুকুমের প্রমাণ এখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের হাতেও রয়েছে। বিবিসির সম্প্রচারিত অডিওটি ফরেনসিক পরীক্ষায়ও প্রমাণিত হয়েছে। সেখানে স্পষ্ট নির্দেশ ছিল, ‘যাকে যেখানে পাওয়া যাবে, গুলি করে মেরে ফেলো।’ এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের নজির বিশ্ব ইতিহাসে খুব কমই আছে।”
তিনি বলেন, “শেখ হাসিনার বিচারের বিকল্প নেই। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হবেই, দুনিয়া যদি সভ্য হয়। ১,৪০০ জন নয়, আমাদের হিসাবে ২,৫০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এর বিচারে কোনো ছাড় দেওয়া চলবে না।”
ভারতের ভূমিকার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “ভারত তাঁকে হয়তো সাময়িকভাবে আশ্রয় দিয়েছে, কিন্তু বেশি দিন তা সম্ভব হবে না। একজন খুনি, লুটপাটকারী ও গণতন্ত্র হত্যাকারীকে পৃথিবীর কোনো সভ্য রাষ্ট্র আশ্রয় দিয়ে রাখবে না।”
আওয়ামী লীগের বিচার প্রসঙ্গে মারুফ কামাল খান বলেন, “আমি দল নিষিদ্ধ করার পক্ষপাতী নই। কিন্তু যদি প্রমাণ হয় যে অপরাধ সংঘটনে দলটিকে একটি ‘এপারেটাস’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, তাহলে দলটির বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। ব্যক্তিরা অপরাধ করলে তাদের বিচার অবশ্যই হওয়া উচিত।”
তিনি জানান, আওয়ামী লীগ ইতিহাসে বহুবার এ ধরনের দমনপীড়ন চালিয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমানের আমলেও ‘নকশাল দেখামাত্র গুলি’ নির্দেশের উদাহরণ তুলে ধরেন তিনি।
শেষ কথা হিসেবে মারুফ কামাল বলেন, “এই বিভৎস গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিকভাবে নিশ্চিত করতেই হবে। শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বর, নির্দেশ, ঘটনা—সব কিছুই প্রমাণিত। বিচার হবেই, ইতিহাসের দায় এড়ানো যাবে না।”
নুসরাত