
জমজমাট মৎস্য ঘাট এখন কোলাহল শূন্য।
ভোলার সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা চরফ্যাসন উপজেলা, এখানকার জেলেরা সাধারণত বঙ্গোপসাগর, মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে।
উপজেলা মৎস্য অফিসের হিসাব মতে, এই উপজেলায় সরকারী নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ৪৪ হাজার ৩ শত ১১ জন । তবে বেসরকারী মতে, উপজেলার প্রকৃত জেলের সংখ্যা লক্ষাধিক। ইলিশের ভরা মৌসুম শুরু হলেও সাগর নদী কোথাও জেলেদের জালে ধরা পড়ছেনা কাঙ্ক্ষিত ইলিশ, ইলিশ পাওয়ার আশায় দিন গুনছেন আর অন্যদিকে দেনায় নুয়ে পড়ছে জেলে জীবন। এসব জেলে পরিবারে এখন হাহাকার। তারা আশায় আছেন নদী কিংবা সাগরে আবারো ইলিশের দেখা মিলবে, নিজেদের ধার দেনা শোধ করে চাপ মুক্ত হবেন।
ইলিশের রাজ্য খ্যাত উপজেলার সামরাজ মৎস্য ঘাটে মাত্র নদী থেকে মাছ শিকারে গিয়ে ঘাটে ফিরে আসা শহীদ মাঝি জানান , গাঙ্গে( নদীতে) মাছ নাই তারপরও আশায় আশায় জাল ফেলি, দু চারটা পেলেও, তেল খরচ পরিশোধ সহ ভাগীদের(অন্য জেলে) মজুরী দিয়ে উলটো দেনায় পড়ে যাই, এভাবে ক্ষণে ক্ষণে বাড়তে থাকে দেনার পরিমান, পাওনাদারদের দেনা পরিষদের চাপে ঘরে থাকা যায় না।
কথা বলার ফাকে অন্য নৌকার জেলে পলাশ মাঝি উপস্থিত হন, সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে বলেন, দীর্ঘ দিন নদীতে ইলিশ নেই। আশায় আশায় অনেক দিন জাল নিয়ে নদীতে যাই। কিন্তু ইলিশ জালে উঠে না, বরং অবৈধ বিহিন্দি জালের খুটির সাথে হাজার হাজার টাকার জাল ছিড়ে যায়। এতো ক্ষতির মাঝেও জালে মাছ না পাওয়ায় দিন দিন দেনা বাড়ছে। তাই নৌকা ডকে উঠাইছি, আবার দীর্ঘদিন ব্যবহার না করলে নৌকা অকেজো হয়ে পড়ে, তখন আবার নদীতে নামাতে হলে মালামত(মেরামত) করতে হয়, এখানেও খরচ অনেক। মহাজনদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে কতবার দেনায় পড়বো, আর পারিনা এখন নিঃস্ব।
৫ কপাট মৎস্য ঘাটের জহির মাঝি বলেন, প্রায় ৩১ হাজার টাকার সদাই ( তেল, চাল,ডাল, তরকারীসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য) কিনে সাগরে যাই, ৮ দিন পর ঘাটে এসে ১৪ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করি, এখানে ১৭ হাজার টাকা লস, এর মধ্যেও ভাগীদেরকে নিজের গাইটের(পক্ষ) থেকে মজুরি দিয়েছি। দীর্ঘশ্বাস ফেলে এই জেলে বলেন, জীবন যুদ্ধে আর পারিনা!
এদিকে জেলেদের জালে ইলিশ না উঠায় আড়তগুলোও ঝিমিয়ে পড়েছে , উপজেলার জমজমাট মৎস্য ঘাটগুলো এখন কোলাহল শূন্য।
বিভিন্ন মৎস্য ঘাটে গিয়ে আড়তদারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাগরে মাছ ধরার উপর ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা ১২ জুন শেষ হওয়ায়, সাগরে আবার ইলিশ ধরা শুরু হয় , সপ্তাহ খানেক জেলেদের জালে বেশ ইলিশ ধরা পড়ে। পরে আস্তে আস্তে কমতে থাকে ইলিশের পরিমান, নদী সাগর এখন প্রায়ই ইলিশ শূন্য। মৎস আড়ত সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরাও বেকার হয়ে পড়েছেন।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তন, পানি দূষণের কারণে বঙ্গোপসাগর, মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীতে ইলিশের আনাগোনা কম। মেঘনা ও তেতুলিয়ায় অনেক ডুবো চরের কারণেও ইলিশের গতিপথে বাধাসৃষ্টি হচ্ছে । এখন বৈরি আবহাওয়া চলছে, আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে, আশা করছি জেলেরা তাদের জালে ইলিশ পাবে।
তাসমিম