
মহান মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পর ২৪-এর জুলাই-আগস্টে প্রায় দুই হাজার ছাত্র-জনতার জীবনের বিনিময়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী মাফিয়াতন্ত্রের সাড়ে ১৫ বছরের দুঃশাসন ও শোষণের অবসান হয়। বাংলাদেশের আমজনতার বহুল কাক্সিক্ষত ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ চূড়ান্তের পথে। সম্প্রতি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সনদের খসড়াপত্র ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর কাছে পাঠিয়েছে। চার পৃষ্ঠার খসড়ায় জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে সাত দফা অঙ্গীকারনামা রয়েছে। মূলত জুলাই সনদের খসড়ায় ২৪-এর বৈষম্যবিরোধী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সংবিধানে যথাযোগ্য স্বীকৃতি দিতে অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে দেশের সংবিধান, বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন, জনপ্রশাসন, পুলিশ ও দুর্নীতি দমন ব্যবস্থার বিষয়ে কিছু প্রস্তাব রয়েছে, যা সনদ গৃহীত হওয়ার পর নির্বাচিত সরকার দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে।
জুলাই সনদের খসড়া হাতে পাওয়ার পর বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ রাজনৈতিক দলগুলো আলাদাভাবে সোমবার রাতেই এ নিয়ে বৈঠকে বসেছে, যা খুবই ইতিবাচক বার্তা দেয়। সনদের খসড়ায় সংযোজন-বিয়োজন বা কোনো পরামর্শ থাকলে মতামত আকারে দ্রুত কমিশনকে জানাবে দলগুলো। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত দলগুলোর আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে এই সনদে স্বাক্ষর করার কথা রয়েছে। ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির আগেই যা চূড়ান্ত আকারে গোটা জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সনদের খসড়ার টেক্সট রাজনৈতিক দলগুলোকে দিয়ে অনুরোধ করেছে, ৩০ জুলাই দুপুর ১২টার মধ্যে যেন ফেরত দেয়। কমিশন এও আশা করছে, রাজনৈতিক দলগুলোর যদি কোনো সুপারিশ বা পরামর্শ বা পরিবর্তনের বিষয় থাকে তা যেন স্পষ্ট করে তারা লিখে দেন, পরে সেগুলো সমন্বয় করা হবে। পাশাপাশি সনদে দলগুলোর অঙ্গীকারের বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে। অঙ্গীকারের একটি তালিকাও দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি আরও কিছু যুক্ত করতে চান, পরামর্শ দেন তা কমিশন বিবেচনা করবেন।
খসড়া সনদের পটভূমিতে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের নীতিকে ধারণ করে সংঘটিত মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো গঠনের আকাক্সক্ষা বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে তৈরি হয়েছিল, দীর্ঘ ৫৩ বছরেও তা অর্জন করা যায়নি। কারণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ও সংস্কৃতি বিকাশের ধারা বারবার হোঁচট খেয়েছে। বস্তুতপক্ষে বিগত পাঁচ দশকে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে একদিকে টেকসই ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো নামমাত্র থাকলেও তা অত্যন্ত দুর্বলভাবে কাজ করেছে। বস্তুত রাষ্ট্র কাঠামোতে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারে সুরক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যে দলীয় প্রভাব বিস্তারের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে অকার্যকর ও বিচারহীনতার সহায়ক হিসেবে পরিচালনা করা হয়েছে। আশাহত জাতির পথ প্রদর্শনে জুলাই সনদ হোক আলোর মশাল, এমনটিই আশা দেশবাসীর।
প্যানেল/মো.