ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

রক্তের সম্পর্কের চেয়ে বড় মানবিক সম্পর্ক 

শরিফুল রোমান

প্রকাশিত: ০০:০১, ২৫ জুলাই ২০২৫

রক্তের সম্পর্কের চেয়ে বড় মানবিক সম্পর্ক 

একটা ফুলের বাগানের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেখানে একটা আস্ত বিমান ভেঙে পড়ল। সেই বাগানের ছোট্ট ছোট্র ফুলগুলোকে কেউ যেন টেনে-ছিঁড়ে উপড়ে দিল।
আহত মানুষের আহাজারি শোনা যায় না, আর এরা তো শিশু। যাদের স্কুলের জুতোটা পর্যন্ত মা-বাবাকে বেঁধে দিতে হয়। স্কুলের টিফিনের খাবারটা যেন ঠিকমতো খায় সেই কথা বারবার মনে করিয়ে দিতে হয়। সেই স্কুলের শিশুরা এত কষ্ট কীভাবে সহ্য করল। 

শিক্ষক হিসেবে যখন শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করি, তখন আমার মনে হয় প্রতিটি শিক্ষার্থী এক একটি ফুটন্ত গোলাপ, যারা শিক্ষা নামক আলো পেয়ে শুধু ফোটার অপেক্ষায় থাকে। আবার যখন তাদের সমস্যা নিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা হয়, তখন তাদের উৎকন্ঠা দেখলে বোঝা যায়, যে বাবা-মা মানে শুধু সন্তানের জন্ম দেওয়া নয়, অভিভাবক মানে ত্যাগ স্বীকার করা। কিন্তু এ কেমন ত্যাগ যে কোনো দিন আর সেই ‘বাবা-মা’ ডাকটাই শুনতে পাবেন না? এ কেমন জীবন, যে তাকে আর কখনো দেখতে পাবে না?

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে আহতদের ছবি প্রকাশ করা হচ্ছে। মোবাইল হাতে একদল বেরিয়ে পড়েছে ছবি তুলে ভিডিও দিয়ে ভিউ বাড়াতে। এমন বিপদে রাস্তায়, হাসপাতালে দর্শনার্থীদের ভিড় দেখলে অবাক লাগে ভাবতে, আমরা কোন সভ্যতায় বাস করি যেখানে কারও কষ্ট দেখার জন্য কেউ দাঁড়িয়ে থাকে? এমন দুর্ঘটনায় রাস্তাঘাট অচল করে দর্শনার্থীদের এমন আচরণ কম নিষ্ঠুর নয়। শিশুদের পাশে থাকার নামে তাদের পুড়ে যাওয়া দেহের ছবি প্রকাশ করার কোনো মানে হয় না। 

আনুষ্ঠানিকতাকে আমরা অনেক বেশি জায়গা দিয়ে ফেলেছি। আবেগকে দিয়েছি প্রদর্শনের জায়গা। এমনটা যেন আর না হয় তার জন্য কী পদক্ষেপ আসে, তার বাস্তবতা দেখতে চাই। নাকি এমন হলো যে, চোখ খুলে দেখলাম সময় কোথায়? সময় তো শেষ। 

দেশের প্রতিটা শিশু আপনার-আমার সন্তান। আমরা সবাই তাদের জন্য একত্রে কাজ করব। কারও কষ্ট দেখে শুধু বিলাপ করার সময় এটা নয়। আপনার-আমার সবার দায়িত্ব এই দুর্যোগে আহতদের সাহায্য করা। কিছু করতে না পারলে অন্তত দোয়া করি—সৃষ্টিকর্তা যেন সব সময় আমাদের সন্তানদের পাশে থাকেন।

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আদালত যদি বিবেক হয়, তাহলে সেই আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে মন থেকে নিহত-আহত সবার পাশে দাঁড়াই। প্রশ্ন করি, কেন এমন ঘটনা ঘটল? এই জায়গায় আমার সন্তান থাকলে কী করতাম আমি? 

মাহরীন চৌধুরী নামের একজন শিক্ষক, যিনি শিশুদের বাঁচাতে গিয়ে নিজেই চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তিনি বুঝিয়েছেন, এই শিশুরাই তাঁর সন্তান আর তিনি তাদের মা, যেখানে রক্তের সম্পর্কের চেয়ে বড় হলো আবেগ।

রক্তের সম্পর্কের চেয়ে বড় যে মানবিক সম্পর্ক, ভালোবাসা—তাঁর জীবন ও মৃত্যু আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়ে গেল।
 

শরিফুল রোমান,

শিক্ষক ও সংবাদকর্মী

 

রাজু

×