ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৮ মে ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২

সংঘাত নয় শান্তি

প্রকাশিত: ১৯:২৭, ৮ মে ২০২৫

সংঘাত নয় শান্তি

পরমাণু অস্ত্রধারী দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বুধবার কাশ্মীরের বিতর্কিত সীমান্তে ভারী গোলাবর্ষণ হয়েছে। এই পাল্টাপাল্টি গোলাবর্ষণ দুই দেশের মধ্যে বড় ধরনের উত্তেজনা ও সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি করেছে। ভারত চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর সর্বশেষ এই সংকট শুরু হয়েছে। ওই হামলায় দুই পক্ষেই প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। নয়াদিল্লি দাবি করেছে, গত ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ভয়াবহ হামলায় পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ওই হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই পর্যটক। অবশ্য ইসলামাবাদ ভারতের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
১৯৪৭ সালের রক্তক্ষয়ী দেশভাগের পর থেকে ভারত ও পাকিস্তান একাধিকবার সংঘাতে জড়িয়েছে। এই সংঘাত কখনো ছোটখাটো পরিসরে শেষ হয়ে গেছে, আবার কখনো পুরোপুরি যুদ্ধে রূপ নিয়েছে। গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ পর্যটক নিহত হওয়ার পর থেকেই ভারত ও পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলায় মদদ দেওয়ার অভিযোগ এনে ১৯৬২ সালে সই হওয়া সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করে। দুই দেশই সীমান্ত বন্ধ করার পাশাপাশি নিজ নিজ আকাশসীমায় প্রতিপক্ষের বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়।
উদ্ভূত যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ভারত ও পাকিস্তানকে সংযমের আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। লড়াই বন্ধ করতে ভারত ও পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘দুই দেশের সঙ্গেই আমাদের খুব ভালো সম্পর্ক। আমি চাই, এটা শেষ হোক। আর আমি যদি কোনোভাবে সাহায্য করতে পারি, তাহলে আমি সেটা করব।’ এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, ইতালি, সৌদি আরব, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, আজারবাইজানসহ বিভিন্ন দেশ ভারত ও পাকিস্তানের প্রতি সংযম প্রদর্শন এবং কূটনৈতিক উপায়ে সমস্যার সমাধান করার আহ্বান জানিয়েছে।
উপমহাদেশের একটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশও এ পরিস্থিতিতে নিরুদ্বিগ্ন থাকতে পারে না। দুই দেশের সঙ্গেই আমাদের ব্যবসাবাণিজ্য আছে। এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার দুই দেশকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। হামলা চালিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা কিংবা রণক্ষেত্রে শক্তি পরীক্ষা না করে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা জরুরি। যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের জীবনেই বিপর্যয় ডেকে আনে। যুদ্ধের ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব শুধু দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, গোটা বিশ্বেই তা ছড়িয়ে পড়ে। নিকট অতীতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এর প্রবল দৃষ্টান্ত।
পাক-ভারত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ। বুধবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সংবাদ বিবৃতিতে এ খবর জানানো হয়েছে। উপমহাদেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ আশা করছে, আঞ্চলিক শান্তি, উন্নতি এবং স্থিতিশীলতার জন্য কূটনৈতিকভাবে এই উত্তেজনার অবসান হবে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস যথার্থই বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সংঘাতের ভার বিশ্ব বহন করতে পারবে না। তাঁর মতের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই। তাই প্রত্যাশা, সংঘাত নয় শান্তি।

প্যানেল

×