
শিল্পে গ্যাস সংকটের বিষয়টি অনেক পুরানো। তবে বর্তমানে গ্যাস সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। এর প্রধান কারণ গ্যাসের চাপ ও সরবরাহ চাহিদার তুলনায় অনেক কম। তদুপরি রাতে অনেক শিল্প-কারখানায় গ্যাস পাওয়া গেলেও দিনে গ্যাস প্রায় দুষ্প্রাপ্য। ফলে দিনের বেলা শ্রমিকরা অলস সময় পার করছেন। এতে স্বভাবতই কমেছে বিভিন্ন রকমের শিল্প পণ্য উৎপাদন। সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে টেক্সটাইল শিল্প। গ্যাস সংকটে ইতোমধ্যে ৬০ শতাংশ বস্ত্রকল বন্ধ হয়েছে। এর বাইরে পোশাক খাতে ১০ শতাংশ, ইস্পাত শিল্পে ৪০ শতাংশ, সিরামিকসে ৫০ শতাংশ উৎপাদন কমেছে। খরচ বেড়ে যাওয়ায় ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে কয়েকটি শিল্প কারখানা। শুধু নারায়ণগঞ্জেই ১৯টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ক্ষুদ্র শিল্পের উদ্যোক্তারাও। অনেকে সিএনজি, এলপিজি বা ডিজেল দিয়ে কারখানা চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে মজুরিসহ শিল্পপণ্যের উৎপাদন কমেছে। ব্যাহত হচ্ছে বিদেশে পণ্য রপ্তানি। গত মার্চের চেয়ে এপ্রিলে রপ্তানি আয় কমেছে প্রায় ১২৩ কোটি ডলার। তদুপরি সময় মতো পণ্য পাঠাতে না পারায় ক্রমশ কমছে ক্রয়াদেশ। ফলে উৎপাদন, আমদানি-রপ্তানি, ব্যাংক, বিমা, কর্মসংস্থান- সবকিছুই রয়েছে সমূহ ঝুঁকিতে। এ সম্পর্কে বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠনের সাবেক সভাপতি ও বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের চেয়ারম্যান বলেছেন, এমন পরিস্থিতিতে শিল্পকারখানায় টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে। গ্যাস সংকটের পটভূমিতে শিল্প মালিকদের সঙ্গে জরুরিভাবে আলোচনায় বসেছেন জ্বালানি উপদেষ্টা। তিনি জানিয়েছেন, শিল্পে অতিরিক্ত ২৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস দেওয়া হবে। কিছু কমানো হবে বিদ্যুতকেন্দ্রে। উপরন্তু বাড়তি চার জাহাজে আমদানি করা হবে গ্যাস।
গ্যাসের অভাবে সিএনজি স্টেশনগুলোতে দেখা যায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি। গ্যাস সংকটে ব্যাহত হচ্ছে শিল্প-কারখানার উৎপাদনও। সময়মতো উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণ ও রপ্তানিতে দেখা দিয়েছে আশঙ্কা। অথচ গ্যাস বিল প্রতিমাসে নিয়মিত দিতে হচ্ছে গ্রাহকদের। গ্যাস সংকটের কথা স্বীকার করেছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ উপদেষ্টা। তবে সরকার আশ্বাসের বাণী শোনাতে পারেনি কেবল দুঃখ প্রকাশ ব্যতিরেকে। এও বলেছে, ২০২৬ সাল নাগাদ নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ পাওয়া যেতে পারে। বর্তমানে ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের স্থলে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে। এর ফলেও দেখা দিয়েছে গ্যাস সংকট। উল্লেখ্য, এ সংকট দীর্ঘদিন থেকে চলমান। এরজন্য তিতাসের সিস্টেম লসসহ অনিয়ম-দুর্নীতি এবং অবৈধ গ্যাস সংযোগ কম দায়ী নয় কোনো অংশে।
সম্প্রতি বেড়েছে গ্যাসের দামও। ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম বেড়েছে ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ। শিল্প-কারখানায় বেড়েছে আরও বেশি। বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত গ্যাস সংযোগের দাম বাড়ানোর ফলে এর চাপ গিয়ে পড়ছে দৈনন্দিন রান্নাবান্নায়। যে বা যারা বাসাবাড়িতে প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করেন, তাদের প্রতি মাসে বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে প্রায় ৪৩ শতাংশ। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। সিস্টেম লস কমালে গ্যাস সরবরাহে সাশ্রয়ী হওয়া যেত কিছুটা হলেও। তিতাস গ্যাসের দুর্নীতি-অনিয়মও ওপেন সিক্রেট। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অব্যাহত গ্যাস সংকট। এসব বিষয়ে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ও পেট্রোবাংলাকে আরও দায়িত্বশীল ও জবাবদিহির ভূমিকায় নামতে হবে।
প্যানেল