ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২

গাজায় ড্রোন দিয়ে হামলা এবং নজরদারি চালাচ্ছে ইসরায়েল

প্রকাশিত: ২২:১৭, ৮ মে ২০২৫; আপডেট: ২২:২৫, ৮ মে ২০২৫

গাজায় ড্রোন দিয়ে হামলা এবং নজরদারি চালাচ্ছে ইসরায়েল

ছবিঃ সংগৃহীত

আল জাজিরার সানাদ এজেন্সির একটি সাম্প্রতিক তদন্তে জানা গেছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী চীনা প্রযুক্তি কোম্পানি DJI-এর বাণিজ্যিক ড্রোনগুলি আক্রমণ এবং নজরদারি কাজের জন্য পরিবর্তন করেছে। মূলত সিভিলিয়ান কাজে ব্যবহৃত এই ড্রোনগুলি এখন গাজায় হাসপাতাল, আশ্রয়কেন্দ্র, এবং সাধারণ নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ইসরায়েলি বাহিনী যে DJI ড্রোনগুলি ব্যবহার করছে, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে DJI Agras। এটি মূলত কৃষির কাজে ব্যবহৃত হয়, তবে এটি এখন যুদ্ধের জন্য বোমা বহন এবং সেগুলি টার্গেটে ফেলার কাজে ব্যবহার হচ্ছে। এই ড্রোনের শক্তিশালী ফিচার, যেমন বড় পণ্য বহন এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে সঠিকভাবে আঘাত করতে সক্ষম হওয়া, ইসরায়েলি বাহিনীকে সেগুলোকে অত্যন্ত কার্যকরী অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ দিয়েছে।

এছাড়াও, DJI Mavic এবং DJI Avata মডেলগুলি গাজায় নজরদারি এবং শত্রু বাহিনীর অবস্থান নির্ধারণের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। DJI Avata ড্রোনটি বিশেষভাবে গাজার ভূগর্ভস্থ টানেল নেটওয়ার্ক মানচিত্র তৈরি করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে, যা ইসরায়েলি বাহিনীর জন্য কৌশলগত গুরুত্ব বহন করে।

তবে এই ড্রোনগুলির ব্যবহার নতুন নয়। ২০১৮ সাল থেকে ইসরায়েলি বাহিনী DJI ড্রোনগুলি ব্যবহার করে আসছে এবং সেসময়ও তারা এই ড্রোনগুলি ব্যবহার করে গাজায় বিক্ষোভরত নাগরিকদের ওপর গ্যাস ছড়ানোসহ অন্যান্য আক্রমণ চালিয়েছিল। তবে, এই ড্রোনগুলির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা, বিশেষত সাধারণ মানুষের এবং সুরক্ষিত লক্ষ্যবস্তু, যেমন হাসপাতাল এবং আশ্রয়কেন্দ্র, টার্গেট করা, একটি নতুন এবং বিতর্কিত দিক।

গাজায় এসব ড্রোনের ব্যবহারের ফলে বেশ কিছু গুরুতর ঘটনা ঘটেছে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে, গাজার উত্তরের জাবালিয়া শহরে, একটি DJI Agras ড্রোন একটি তুর্কি দাতব্য সংস্থার ভবনে বোমা ফেলেছিল, যেখানে একটি স্কুল আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। এছাড়া নভেম্বর মাসে, বিইট লাহিয়া শহরে, একই ধরনের ড্রোন একটি আবাসিক এলাকায় বোমা ফেলেছিল যেখানে সাধারণ মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। এই ধরনের হামলা সাধারণ জনগণের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে এবং জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকদের মতে, পরিস্থিতি "অ্যাপোক্যালিপটিক" হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে, শুধুমাত্র আক্রমণ নয়, ড্রোনগুলি গাজায় নজরদারি এবং কৌশলগত অপারেশনেও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এমন একটি ঘটনা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ঘটেছিল, যেখানে DJI Avata ড্রোনটি একটি প্যালেস্টিনীয় বন্দীকে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ইসরায়েলি সেনাদের সাহায্য করার জন্য নজরদারি করছিল। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এটি একটি অবৈধ কার্যক্রম, তবে এটি ইসরায়েলি বাহিনীর কৌশলগত ব্যবহারকে স্পষ্ট করে।

একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো DJI কোম্পানি, যা এই ড্রোনগুলি তৈরি করেছে, ২০২২ সালে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে সংঘর্ষের সময় তাদের ড্রোন বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছিল এবং সেই সময়ে তারা দাবি করেছিল যে তাদের ড্রোনগুলো কখনোই ক্ষতি করার জন্য ব্যবহৃত হবে না। তবে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে এই ড্রোনগুলির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার ঘটনা ঘটার পর, DJI এখনও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি এবং তাদের ড্রোন বিক্রির ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি।

এই পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, বিশেষত যেহেতু বাণিজ্যিক ড্রোন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলি এখন আধুনিক যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই ঘটনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি বড় প্রশ্ন রেখে গেছে: বাণিজ্যিক প্রযুক্তি কি যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া উচিত, এবং কীভাবে এই প্রযুক্তি ব্যবহার সম্পর্কে নৈতিক এবং আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?

সূত্রঃ https://aje.io/m49224

 

আরশি

×