ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩ মাঘ ১৪৩১

ফিলিস্তিনে মানবাধিকার এবং বিশ্ব সম্প্রদায়

ড. আলা উদ্দিন

প্রকাশিত: ১৮:৫৯, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪

ফিলিস্তিনে মানবাধিকার এবং বিশ্ব সম্প্রদায়

চলমান ফিলিস্তিন সংকট শুধু একটি আঞ্চলিক বা রাজনৈতিক সমস্যা নয়, এটি একটি মানবাধিকারের প্রশ্ন। ফিলিস্তিনি জনগণের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং তাদের ভূমির অধিকার ও নিজস্ব ভূমিতে প্রত্যাবাসনের অধিকার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের মাধ্যমে স্বীকৃত হলেও, সেগুলো এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। ইসরাইলি দখলদারিত্ব, ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ এবং একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের জন্য তাদের সংগ্রাম আজও অমীমাংসিত।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবনায় যে অধিকারগুলো ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য স্বীকৃত হয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম: ফিলিস্তিনি জনগণের নিজের জাতীয় ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করার ক্ষমতা, কোনো বহিরাগত হস্তক্ষেপ ছাড়াই অর্থাৎ তাদের স্বনিয়ন্ত্রণের অধিকার রয়েছে। তাদের রয়েছে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অধিকার। একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার। ইসরাইলি দখলদারিত্ব ও নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া এই অধিকারকে প্রতিহত করেছে। ফিলিস্তিনের জনগণের মধ্যে যাদের নিজভূমি থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে, তাদের নিজ ভূমিতে ফিরে যাওয়ার অধিকার রয়েছে। ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর থেকে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থী হয়েছেন এবং তাদের স্বদেশে ফেরার অধিকার এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।
১৯৪৮ সালে ইসরাইলের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর থেকে ফিলিস্তিনিরা তাদের ভূমি হারিয়েছে এবং শরণার্থী হয়ে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ১৯৬৭ সালের ছয়দিনের যুদ্ধে ইসরাইল পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা এবং পূর্ব জেরুজালেম দখল করে। সেই থেকে দখলদারিত্বের অধীনে ফিলিস্তিনি জনগণের জীবনযাত্রা ক্রমশ দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর কঠোর ব্যবস্থা, বসতি স্থাপন সম্প্রসারণ, অবকাঠামোগত নিয়ন্ত্রণ এবং ফিলিস্তিনিদের দৈনন্দিন জীবনে বাধা সৃষ্টি করে চলেছে। এত বছর পরও এই সংকটের কোনো মীমাংসা হয়নি। একদিকে ইসরাইল তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কঠোর ব্যবস্থা অবলম্বন করছে সর্বশক্তি প্রয়োগ করার মাধ্যমে, অন্যদিকে ফিলিস্তিনি জনগণ তাদের ভূমি ফিরে পাওয়ার এবং একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে লাখো ফিলিস্তিনি শরণার্থী তাদের নিজভূমি থেকে বিতাড়িত থেকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
দশকজুড়ে এই সংগ্রাম ও সংঘাতের মধ্যে ২০২৩-এর শেষের দিক থেকে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ২০২৩-এর ৭ অক্টোবর ইসরাইলি ভূখণ্ডে অতর্কিতভাবে গাজার হামাসের হামলা (১২০০ এর অধিক ইসরাইলি হত) এবং এর প্রতিশোধে গাজাবাসীর ওপর ইসরাইলের সর্বাত্মক আগ্রাসী আক্রমণের ফলে গাজার জনজীবন প্রায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। গাজার স্বাভাবিক জীবনযাপন এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। মৃত্যুর মিছিল, বোমা হামলা, গুলি, বোমা বর্ষণ এসব মোকাবিলা করতে করতে গাজাবাসীদের জীবন এখন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বাস্তুচ্যুতি, খাদ্যাভাব ও চরম নিরাপত্তাহীনতার মাঝে বেঁচে থাকার সংগ্রামই বর্তমানে গাজাবাসীর চরম বাস্তবতা।
২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত গাজার ওপর চলমান ইসরাইলি বিমান হামলায় প্রাণহানির সংখ্যা ভয়াবহভাবে বেড়েছে। মৃতের সংখ্যা প্রায় ৪৫,০০০ এবং আহতের সংখ্যা ১,০০,০০০ এরও বেশি। নিহতদের মধ্যে অন্তত ১৭,৩৮৫ জন শিশু (প্রায় ৪৪ শতাংশ, যাদের মধ্যে ৫-৯ বছর বয়সী সর্বাধিক), ১১,৮৯১ জন নারী এবং ২,৪২১ জন বৃদ্ধ। নিহতদের মধ্যে ৭০ শতাংশ নারী ও শিশু। ইতিহাসে এটি নজিরবিহীন। পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটাপন্ন, হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুর মুখে বা ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়েছেন, যাদের উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না তীব্র বোমাবর্ষণের কারণে।
নাগরিক প্রাণহানির পাশাপাশি, এই সংঘাতে বহু সাংবাদিকও নিহত হয়েছেন। অন্তত ১৩৭ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, যা ১৯৯২ সাল থেকে মিডিয়া কর্মীদের জন্য সবচেয়ে বিধ্বংসী সময়। তাদের মধ্যে কিছু সাংবাদিককে সরাসরি ইসরাইলি বাহিনী টার্গেট করেছে। এ ছাড়া এই সংঘাতে মৌলিক পরিকাঠামোও ধ্বংস হয়েছে। স্কুল, হাসপাতাল এবং জাতিসংঘের আশ্রয়কেন্দ্র ধ্বংস হয়ে গেছে এবং বহু বাস্তুচ্যুত মানুষ সাহায্য পাওয়ার জন্য অক্ষম। জাতিসংঘ এবং মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলো তীব্র সংকটের কথা জানাচ্ছে এবং সহায়তায় প্রবেশের পথ অত্যন্ত সীমিত হয়ে পড়েছে সহিংসতার কারণে। মানবিক সংকট চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অনেক মানুষ এখনো নিখোঁজ এবং খাদ্য ও মৌলিক সরঞ্জামের অভাবে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে গাজায়।
গাজায় ইসরাইলের হামলার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া ব্যাপক বিভাজনের মধ্যে পড়েছে, বিভিন্ন রাষ্ট্র এবং সংস্থা ইসরাইলের সামরিক অভিযানের আইনি ও নৈতিকতা নিয়ে বিভিন্ন মতামত প্রকাশ করছে। ইসরাইলের সামরিক পদক্ষেপগুলো হামাসের আকস্মিক আক্রমণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে, যা বেসামরিক নাগরিকদের ব্যাপক ক্ষতি করেছে, তবে আন্তর্জাতিক আইন যুদ্ধের সময় জনগণের সুরক্ষা এবং সমতা বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। জাতিসংঘ বারবার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে, গাজার মানবিক সংকটের কারণে, যেখানে আকাশপথে হামলা এবং অবরোধের ফলে হাসপাতাল, স্কুল এবং মসজিদসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের রায় (নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার) ও লেবাননের সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধের চুক্তি সত্ত্বেও ইসরাইল এখনো হুংকার দিচ্ছে, গাজায় আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে, গাজাবাসীকে নির্বিচারে হত্যা ও আহত করছে; এমনকি এক বছর ধরে জিম্মি থাকা ইসরাইলিরাও নিহত হয়েছে।
ইসরাইলের প্রধানতম মিত্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার সমর্থন করে এসেছে। এই অবস্থানটি মূলত মধ্যপ্রাচ্যে কৌশলগত জোট, নিরাপত্তা উদ্বেগ এবং ইসরাইলের সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্কের কারণে গৃহীত হয়েছে। মার্কিন সরকার ইসরাইলের নাগরিকদের সুরক্ষা রক্ষার অধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে শান্তি প্রচেষ্টাগুলোর এবং মানবিক সাহায্যের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই সমর্থন বিতর্কিত হয়েছে, বিশেষ করে সমালোচকরা দাবি করছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করেনি, যাতে ইসরাইল তার সামরিক পদক্ষেপ সীমিত করে এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলে।
গাজায় ইসরাইলের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্যের আরও কয়েকটি দেশ জড়িত হয়ে পড়েছে। অক্টোবর ২০২৩ সালের হামাসের ইসরাইল হামলা আঞ্চলিক গতিপথকে তীব্র করে তুলেছিল, যেখানে তেহরানের হামাসের প্রতি সমর্থন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই আক্রমণটি ইরানের বৃহত্তর কৌশলের একটি প্রতিফলন হিসেবে দেখা হয়েছে, যার লক্ষ্য ইসরাইল এবং পশ্চিমা শক্তির প্রভাব চ্যালেঞ্জ করা। ইরানের উদ্দেশ্য হলো হামাসকে সমর্থন দেওয়া, তার প্রভাব বৃদ্ধি করা এবং একাধিক দিক থেকে ইসরাইলের ওপর চাপ সৃষ্টি করা, যার মধ্যে গাজা, লেবানন, সিরিয়া এবং ইরাক অন্তর্ভুক্ত। গাজায় ইসরাইলের হামলায় ইরান, লেবানন এবং ইরাকের সম্পৃক্ততা একটি জটিল ভূরাজনৈতিক এবং আদর্শিক সম্পর্কের ফলস্বরূপ, যা প্রধানত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ নামে পরিচিত একটি নেটওয়ার্কের মধ্যে পড়ছে, যার নাম ইরান। এর ফলস্বরূপ, ইসরাইলি বিমান হামলা ইরানি স্থাপনাগুলোর দিকে নির্দেশিত হয়েছে, যার ফলে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং হিজবুল্লাহসহ অন্যান্য গোষ্ঠীও সম্পৃক্ত হয়েছে। এমতাবস্থায়, ইরান-ইসরাইলের পারস্পরিক হামলার চূড়ান্ত রূপ (সম্ভাব্য তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ) নিয়ে বিশ্ববাসীর মাঝে চরম শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
জাতিসংঘ বরাবরই ফিলিস্তিনিদের অধিকারের স্বপক্ষে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐক্যহীনতা এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানিসহ কিছু শক্তিশালী রাষ্ট্রের পক্ষপাতিত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে এই সংকটের মীমাংসা এখনো সম্ভব হয়নি। ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের দাবি বিশ্বজুড়ে সমর্থন পেলেও, রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক সমঝোতার অভাবে বিশেষ করে ইসরাইলের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের অকুণ্ঠ সমর্থনের কারণে এই সংকট দীর্ঘায়িত হয়েছে।
এই দীর্ঘস্থায়ী সংকটের সমাধানের লক্ষ্যে জাতিসংঘে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৪৭ সালে ‘দুই-রাষ্ট্র’ (ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল ও আরব রাষ্ট্র ফিলিস্তিন) সমাধান নামে পরিচিত একটি পরিকল্পনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, যেখানে ইসরাইল এবং ফিলিস্তিন দুটি আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে সহাবস্থান করবে। কিন্তু ইসরাইলের বেআইনি বসতি সম্প্রসারণ এবং দখলদারিত্বের কারণে এই সমাধান কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। বসতি সম্প্রসারণ এবং পূর্ব জেরুজালেমে ইসরাইলি কার্যকলাপের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের তাদের জমি থেকে আরও বেশি দূরে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা বারবার এর বিরুদ্ধে সতর্ক করে আসছে।
ফিলিস্তিনিদের অধিকার শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি একটি মানবাধিকার এবং ন্যায়বিচারের প্রশ্ন। জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণা অনুসারে, প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে বসবাসের অধিকার রয়েছে। ফিলিস্তিনিদের অধিকার আদায়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন। ফিলিস্তিনিরা বছরের পর বছর ধরে ইসরাইলের অধীনে দখলদারিত্বের শিকার। তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অধিকার বারবার লঙ্ঘিত হয়েছে। তারা নিজেদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি এবং তাদের জীবিকা, শিক্ষা এবং স্বাধীন চলাচলের অধিকারে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এই সংকটের একটি ন্যায়সঙ্গত সমাধান হলো ফিলিস্তিনিদের স্বায়ত্তশাসন এবং স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করা, যেখানে তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে। ফিলিস্তিনি শরণার্থীরা একাধিক প্রজন্ম ধরে তাদের নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত রয়েছেন। তারা মানবেতর পরিবেশে জীবনযাপন করছেন, যেখানে তাদের মৌলিক অধিকারগুলো বারবার লঙ্ঘিত হচ্ছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ তাদের ফেরা এবং পুনর্বাসনের অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে, কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব হলো ফিলিস্তিনিদের অধিকার আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। জাতিসংঘের সংস্থাগুলো এবং অন্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে এই সংকটের সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে একটি সম্মানজনক ও কার্যকর সমঝোতা না হলে এই সংকটের স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত, উভয় পক্ষকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ তৈরি করা। এটি কেবল ফিলিস্তিনিদের জন্য নয়, ইসরাইলেরও জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
ফিলিস্তিনের শরণার্থীরা বছরের পর বছর ধরে মানবিক সংকটের শিকার। তাদের পুনর্বাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। জাতিসংঘের রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজিস (টঘজডঅ) শরণার্থীদের জন্য বিভিন্ন সেবা প্রদান করছে, কিন্তু এটি যথেষ্ট নয়। বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত আরও বেশি তহবিল এবং মানবিক সহায়তা প্রদান করা, যাতে ফিলিস্তিনিরা তাদের মৌলিক অধিকার এবং জীবনযাত্রা ফিরে পায়। বিশ্বব্যাপী ফিলিস্তিনিদের সংগ্রাম এবং তাদের অধিকার নিয়ে আরও বেশি সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। গণমাধ্যম এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফিলিস্তিনি সংকটের বিষয়ে সত্যিকার তথ্য প্রদান করা উচিত, যাতে মানুষ বুঝতে পারে এই সংকটের বাস্তব চিত্র।
ফিলিস্তিনের সংকট একটি দীর্ঘায়িত মানবাধিকার সমস্যা, যার সমাধান কেবল রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমেই সম্ভব। এই সংকটের সমাধান না হলে মানবতার পক্ষে অবস্থান বিশ্ব সম্প্রদায়ের ও গণহত্যার প্রতিরোধ নৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে। এমতাবস্থায়, বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত ফিলিস্তিনিদের অধিকার আদায়ে এবং ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকটের ন্যায়সঙ্গত সমাধানে একযোগে কাজ করা। ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার এবং তাদের সংগ্রামের প্রতি সংহতি প্রকাশ করা আমাদের নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব।

লেখক : অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

×