ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩ মাঘ ১৪৩১

দরকার হলে ‘কামান’ দাগুন

প্রকাশিত: ১৮:৪৫, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪

দরকার হলে ‘কামান’ দাগুন

মশা মারতে কামান দাগার প্রবচনটি চালু থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে ‘কামান’ না দাগলে ডেঙ্গুকে যেন থামানো যাচ্ছে না। কামান বলতে শুধু ফগার মেশিন দিয়ে মশা মারার কথা বলা হচ্ছে না, ডেঙ্গুকে সার্বিকভাবে মোকাবিলা করার জন্য যুদ্ধংদেহি মনোভাব নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। এ বছর এডিস মশাবাহিত রোগটিতে মৃত্যু হয়েছে ৫২২ জনের। শনিবার গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছে, ডিসেম্বরের প্রথম ৭ দিনেই ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৩৪ জনের। এটিকে এখন মহামারি বললে অত্যুক্তি হবে কি?
২০১৯ সালে ডেঙ্গুর ভয়াবহ অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল ঢাকাবাসী। আমরা গভীর হতাশা ও ক্ষোভের সঙ্গে দেখেছিÑ ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় যখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশনসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর সর্বাত্মক সক্রিয়তার প্রত্যাশা ছিল, তখন এর কর্তাব্যক্তিরা গা বাঁচানোয় ব্যস্ত ছিলেন। ডেঙ্গু মোকাবিলায় যৌথ অভিযানে নামার প্রস্তাব দিয়েছি আমরা সম্পাদকীয়তে। কাজের কাজ হয়নি। মনে রাখা জরুরি, এই সংকট একদিনে প্রকট হয়নি; কেবল এক সংস্থা মোকাবিলাও করতে পারবে না। সরকারের পাশাপাশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক এমনকি রাজনৈতিক সংগঠনগুলোরও এগিয়ে আসা জরুরি ছিল। ডেঙ্গু রোগের কারণ এডিস মশা নির্মূলে সিটি করপোরেশনের সক্রিয় উদ্যোগের অনুপস্থিতি নিয়ে বিস্তর সমালোচনা রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার ‘প্রাক-বর্ষা জরিপে’ ঢাকার ১০ শতাংশ এলাকায় মশার লার্ভা থাকার বিষয়টি উঠে এসেছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সতর্কবার্তায় কর্ণপাত করেনি তৎকালীন দুই সিটি করপোরেশনের শীর্ষ ব্যক্তিদ্বয়।
আমরা বারবার বলে আসছি যে, দূরদর্শী পরিকল্পনা ও সময়োগযোগী যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিন্তু দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর দায়িত্বহীনতার কারণে প্রতিবছরই ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবছরই ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ ঘটে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামে। ঘরে ঘরে প্রবেশ করে মশা মারা কোনো কর্তৃপক্ষের পক্ষেই সম্ভব নয়। তবে জলাবদ্ধ অপরিচ্ছন্ন মহানগরীর নালা-নর্দমা-পয়োবর্জ্য-আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং মশা-মাছির ওষুধ ছিটানো কর্তৃপক্ষের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। এক্ষেত্রে যথেষ্ট ঘাটতি ও শৌথিল্য আমরা অতীতে দেখেছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন মহাপরিচালক জনকণ্ঠ প্রতিনিধির কাছে বাস্তবতা স্বীকার করে যে বার্তা দিয়েছেন, সেটি সময়োচিত। তার কথায় টিকা প্রদানের বদলে সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় মশা মারার কথাই উঠে এসেছে। কেননা, ডেঙ্গুর টিকার দাম বেশি। তাছাড়া কেউ যদি একবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়, তাহলেই এটি শরীরে কাজ করবে। এতে করে প্রত্যেককে ডেঙ্গু পরীক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তাই টিকা দেওয়া একটি জটিল প্রক্রিয়া। তার চেয়ে মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার করা ফলদায়ক হতে পারে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করলেই যেহেতু এই রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, তাই এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেন এডিস মশার প্রজনন না ঘটে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, অনেক বিলম্ব হয়ে গেলেও মশা মারার কর্মসূচি বেগবান করতে সক্রিয় উদ্যোগ নেওয়া হোক।

×