সমস্যা আমাদের জীবনে নতুন কিছু নয়
সমস্যা আমাদের জীবনে নতুন কিছু নয়। চলার প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের নতুন নতুন সমস্যা থেকে নতুন অভিজ্ঞতার সঞ্চারিত হয়। নিজেদের সমস্যা সমাধানের পথ নিজেদেরই বের করে নিতে হয়। যার ফলে অন্যের ক্ষতি করে আমাদের সমস্যা সমাধানের পথ বের করা ইদানিং আমাদের একটা চিরাচরিত প্রথা হয়ে গেছে। যেকোনো সেক্টরে সমস্যা দেখা দিলে রাস্তা অবরোধ করে রাখে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিঘিœত হয়, সেদিকে কারো কোন কর্ণপাত নেই। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ সমাবেশ করা কতটো যুক্তিযুক্ত বুঝতে পারি না। প্রতিবাদের ভাষা আসলেই কি এরকম হওয়া উচিত।
যেখানে মনুষত্বে বিবেকের নেই কোন মূল্যায়ন। রাষ্ট্রীয় সমস্যা হলে সেটা অন্য ব্যাপার। কিন্তু গোষ্ঠী বিশেষের সমস্যা তো জাতীয় পর্যায়ের নয়। কখনো দুই থেকে চার ঘণ্টা পর্যন্ত রাস্তা অবরোধের কারণে গাড়ির এতোটাই যানজট সৃষ্টি হয় যে জীবনের প্রতিটি নিঃশ্বাস যেন তখন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। শুধু কি তাই, অফিসে সময় / স্কুলে সময় মতো আদৌ পৌঁছাতে পারবে কি না যার নেই কোন ঠিক ঠিকানা। তাছাড়া প্রচণ্ড যানজটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বৃদ্ধ, মহিলা ও শিশুরা। কখনো এরকম অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কারণে কেউ কেউ তীব্র দাবদাহে হার্টএটাক করে মারাও যায়। কিন্তু এদের দায়ভার কার উপর বর্তাবে, কেউ বলতে পারেন?
রাস্তা অবরোধ কি সব সমস্যার সমাধান? অথচ এই রকম পরিস্থিতিতে অনেক সময় ছিচকে চোরেরা সুযোগ নেয়। কোথায় মানুষের জানমালের নিরাপত্তা। সমস্যা আমাদের আদৌ কি পিছু ছাড়ে? নিজের আলাপচারিতা, ব্যক্তিগত উদ্যোগ, ভিন্ন উপায়ে পন্থা অবলম্বন করেও এই সকল সমস্যার সমাধান সম্ভব। অফিসগামী মানুষ, হাসপাতালগামী অসুস্থ বৃদ্ধ, স্কুল পড়ুয়া কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের কেন এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
রাস্তা অবরোধের সময় অনেকে গাড়ি ভাঙচুর করে, ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে, এগুলোর কারণে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কতো ক্ষতি হয়, কেউ কি ভেবে দেখেছে? সারাদিনের কর্মব্যস্ত জীবনে নীড়ে ফেরার তাড়া, তখন যদি এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সে কি জানে আদৌ বাড়িতে যেতে পারবে কি? বাড়ির ছোট্ট ছোট্ট ছেলেমেয়ে, পরিবারের প্রিয়জন কতো অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে বসে আছে বাসায় আসলে একসাথে খাওয়া হবে। এরকম অনেক স্বপ্ন ভেঙে যেতে দেখি, অথচ প্রতিবাদের ভাষা যেন মৌনতায় তৃষ্ণা সুধায়।
শুধু কি তাই অবরোধের কারণে শত শত অর্ডার ঠিকমতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না। এতে এক ধরনের ক্রেতাদের মধ্যে বিতৃষ্ণা ভাব আসে। যার ফলে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। এই ক্ষতিগ্রস্ত লোকসানের ভার কি আপনি আমি নিব। ভেবে দেখেছেন কি। জীবন বড় বিচিত্র, সমস্যা তার একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমরা কেউ এই দায়ভার এড়িয়ে যেতে পারি না।
তাই আমাদের সচেতন হতে হবে, সাধারণ কোন সমস্যা হলেই জনগণের দুর্ভোগ পোহাতে হয় এমন কোন পন্থা অবলম্বন না করা। বিষয়, পরিস্থিতি, সবকিছু পর্যালোচনা করে কঠিন সিদ্ধান্তে নামতে হবে। এমনিতেই আমাদের জীবন যাত্রার মান দিনদিন যে হারে করুণ পরিণতির দিকে যাচ্ছে, তাতে করে নিত্যদিনের পণ্য এভাবে রাস্তা অবরোধের কারণে সঠিক সময়ে সরবরাহ করতে না পারলে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম কোথায় কি দাঁড়াবে একটু ভেবে দেখবেন। রোজ রোজ সকাল সন্ধ্যা এরকম পরিস্থিতি কার ভালো লাগে। সকালের সতেজ মনোভাব, অফিসে বসের পেরেশানি, সংসারে টানাপোড়েন, শিশুাদের নিত্যনতুন আবদার, তার উপর এই ধরনের নাজুক পরিস্থিতি কতোটা আর সহ্য করা যায়।
সারাক্ষণ এই ধরনের ভাবনা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকলে জীবনে বেঁচে থাকাটাই দায় হয়ে পড়বে। তাই নিজেদের একার কথা না ভেবে জনগণের জানমালের নিরাপত্তার কথা ভাবুন। খেটে খাওয়া মানুষের কথা ভাবুন। যাদের সামান্য আয়ে চলে পরিবারের ভরণপোষণ। সমস্যা যেমন থাকবে সমাধানের পথও আছে। আসুন, সমাধানের পথ রাস্তা অবরোধ করে নয়; বরং আলোচনা, পরিকল্পনা করে বের করি। আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় আসা যায়। বিশৃঙ্খলা, লুটপাট, কারও ক্ষতি করে নয়। সময়ের যেমন মূল্য আছে, ঠিক তেমনি জীবনে সুস্থভাবে বাঁচার অধিকার সবার আছে।
উত্তরা, ঢাকা থেকে