বাংলা সাহিত্যে শাক্ত ধারা
বাংলা সাহিত্যে প্রাচীন কাল থেকে বর্তমান অবধি যতটা ধারা সংযোজিত হয়েছে তার মধ্যে শাক্ত ধারা এক অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। বাঙালিরা শাক্ত ও শক্তির উপাসনা করে বলেই ধর্ম চিন্তায় শক্তি ও মাতৃ পুজোয় একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে। সে বিবেচনায় খ্রিষ্টীয় দ্বাদশ - ত্রয়োদশ শতকে বৈষ্ণব ভাবধারার পাশাপাশি শাক্ত ধর্মের উন্মেষ ঘটে। শাক্ত সাধনার দুটি ধারা কন্যাভাব ও মাতৃভাবকে সাধকরা তাঁদের সাধন কর্মে উপজীব্য হিসেবে গ্রহণ করে রচনা করেন মাতৃসঙ্গীত বা শাক্ত পদাবলী।
তবে, এ শাক্ত সঙ্গীতগুলো শাস্ত্রাচার ও তান্ত্রিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। অসিতকুমার বন্দোপাধ্যায় এর মতে, " শক্তি অর্থ উমা-পার্বতী- দুর্গা- কালিকাকে কেন্দ্র করে যে গান রচিত হয় তাকে বলা হয় শাক্ত গান।" অষ্টাদশ শতকে রামপ্রসাদ সেন শাক্ত পদাবলীকে তান্ত্রিকতা মুক্ত করে নবরূপে প্রাণের সঞ্চার করেন। তাঁর কবিরঞ্জন বিদ্যাসুন্দর, কালীকীর্তন এ ক্ষেত্রে অনন্য ভ‚মিকা রাখে। আর তখন থেকেই শাক্ত পদগুলো বাংলা সাহিত্যে এক সোনালি অধ্যায় হিসেবে সংযুক্ত হয়। রামপ্রসাদের পরেই শাক্ত পদ রচনায় কমলাকান্ত ভট্টাচার্যের ভ‚মিকা অনস্বীকার্য।
এছাড়া, মহেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, নীলাম্বর মুখোপাধ্যায়, গোবিন্দ চৌধুরী, মহারাজ কৃষ্ণচন্দ, মহারাজ নন্দকুমার, নিধুবাবু, দাশরতি রায়, ঈশ্বর গুপ্ত, কাঙাল হরিনাথ, নবীনচন্দ্র সেন, অ্যান্টনী ফিরিঙ্গী প্রমুখ শাক্ত পদকর্তারা শাক্ত পদাবলীগুলোকে উচ্চমাত্রা দান করেন। এদিকে, বিশ শতকের তৃতীয় দশকে শাক্ত পদ রচনায় কাজী নজরুল ইসলাম অভাবনীয় সাফল্য দেখান। তিনি শাক্ত পদাবলীকে এক ভিন্ন মাত্রা দান করে উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করেন। তাই নজরুলকে দ্বিতীয় রামপ্রসাদ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
বাংলা কাব্য সাহিত্য ছাড়াও কথাসাহিত্য তথা উপন্যাস, গল্প, নাটকেও শাক্ত ভাবধারা উজ্জলবর্ণে রূপায়িত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'কপালকুÐলা', শরৎচন্দ্রের 'দেনা পাওনা',রবিভ‚তিভ‚ষণের 'তান্ত্রিকের গল্প', তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের ' ছলনাময়ী ' গল্প রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'বিসর্জন' নাটক এবং সা¤প্রতিক কালের সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ' কিশোর সন্ন্যাসিনী',ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়ের ছোটগল্প 'বশীকরণ' এর কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
মুলত: শাক্ত পদগুলো বাংলা সাহিত্যের এক অমুল্য সম্পদ। আজও তাই ভক্ত হৃদয়ে অনুরণিত হয়
"মা তোমারে বারে বারে জানাব
আর দুঃখ কত,
ভাসিতেছি দিবানিশি দুঃখ নীরে
স্রোতের শ্যাওলার মত"।
বড়লেখা, মৌলভীবাজার থেকে
শহিদ