দ্রব্যমূল্যের ঘোড়া লাগামহীন
দ্রব্যমূল্যের ঘোড়া লাগামহীন। ফলে বিপদাপন্ন হয়ে পড়েছে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত স্বল্প আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা। বাসা ভাড়া বেড়েছে, পরিবহন ব্যয় বেড়েছে, বেড়েছে শিক্ষা ব্যয়ও, বাড়েনি শুধু শ্রমজীবী মানুষের শ্রমের মূল্য। ফলে সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বল্প আয়ের এসব মানুষগুলোকে। যে ডাল-ভাত গরিবের খাবার হিসেবে পরিচিত ছিল তা আজ গরিবের বিলাসী খাবারে পরিণত হয়েছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের চড়া দাম শ্রমজীবী মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় দেহে প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান দিতে বর্তমানে অপারগ এসব শ্রেণিপেশার মানুষ। বাজারে চাল, ডাল, তরিতরকারির দাম নিয়ন্ত্রণে নেই প্রয়োজনীয় তদারকি ব্যবস্থা। দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধিতে বন্যা, চাঁদাবাজি, পরিবহন ব্যয়কে দোষী সাব্যস্ত করা হলেও বাজারে পণ্য সংকট তৈরির নীরব ঘাতক সিন্ডিকেটের গেট এখন অবধি সরকার ভাঙতে পারছেন না বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
অন্যদিকে কৃষক শ্রেণি তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম না পাওয়া এবং ফসল উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে কৃষকরা ফসল উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। কারণ কৃষকশ্রেণি কষ্ট করে ফসল উৎপাদন করে কিন্তু লাভবান হয় মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়ারা। এদের বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে না কার্যত জোরালো কোনো পদক্ষেপ। বাজার অস্থিতিশীলকারীদের বিরুদ্ধে নেই দৃশ্যমান কোনো শাস্তির ব্যবস্থা। আলু, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, ডিমসহ বেশকিছু পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করা হলেও দৃশ্যমান বাজারে এখন অবধি কমছে না এসব পণ্যের দাম। দাম স্থিতিশীল কিংবা সহনীয় পর্যায়েও নেই।
নিম্ন আয়ের মানুষের এখন নূন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। এহেন পরিস্থিতিতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বর্তমানে তাদের খাবারের মেনু ছোট করে আয় অনুযায়ী ব্যয় নির্বাহ করে চলতে হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের যাঁতকলে পিষ্ট খেটে খাওয়া মানুষগুলোর তিনবেলা পেটপুরে খাবার গ্রহণ করাটা এখন অনেকটা বিলাসিতা মনে হয়। অর্থাৎ তিনবেলার পরিবর্তে তাদেরকে দুইবেলা কিংবা দুইবেলার পরিবর্তে একবেলা খাবার খেয়ে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হচ্ছে। এটা কোনো শুভ বার্তা নয়, বরং এটা ভবিষ্যতের অশনিসংকেত বহন করছে।
ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের ফলে অর্জিত স্বাধীনতা এবং স্বাধীনতাপরবর্তী বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে চাওয়া অনতিবিলম্বে সিন্ডিকেটের দ্বার রুদ্ধ করে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সর্বসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে এসে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা জরুরি।
গোয়াইনঘাট, সিলেট থেকে