ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১

বিশ্বব্যাংকের সহায়তা

প্রকাশিত: ২০:৩৯, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বিশ্বব্যাংকের সহায়তা

সম্পাদকীয়

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রুত সার্বিক সংস্কার কার্যক্রমে সর্বাত্মক সহযোগিতাদানের অঙ্গীকার নিয়ে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে বিশ^ব্যাংক। ঢাকাস্থ বিশ^ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেখ মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসে এ কথা বলেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিকে বলেন, তার সরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ঠিক করার জন্য প্রায় সর্বত্র বড় ধরনের সংস্কারের যে সুযোগ পেয়েছে, তা হারাতে চায় না।

আমাদের দেশের নতুন কাঠামো তৈরি করতে হবে। এর জন্য একটি বড় ধরনের ধাক্কা দরকার। দেশের শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমাদের মনোনিবেশ করতে হবে। এ সময়ে বিশ^ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেখ আশ^াস দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের বন্যাদুর্গতদের উদ্ধার ও পুনর্বাসন, বায়ু দূষণ রোধ ও স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের জন্য ২শ’ কোটি ডলার বা ২ বিলিয়ন ডলার দেবে বিশ^ব্যাংক।

এর বাইরেও মাল্টিল্যাটারাল ঋণের আওতায় প্রায় এক বিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত অর্থায়ন করবে বিশ^ব্যাংক, যা বিদ্যমান কর্মসূচি থেকে পুনর্বিন্যাস করা হবে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে। আবদুলায়ে সেখ এও বলেন, বিশ^ব্যাংক বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার এবং আর্থিক চাহিদাগুলোতে সবসময়ই সহায়তা করতে প্রস্তুত। যেটি উল্লেখ্য, তা হলো চলতি অর্থবছরে বিশ^ব্যাংক বাংলাদেশকে যে সফট লোন ও অনুদান দেবে তার পরিমাণ আরও বাড়বে।

সর্বোপরি বিদ্যমান প্রকল্পগুলো তহবিল পুনর্বিবেচনা সাপেক্ষে উন্নীত করা হবে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারে। তদুপরি বিশ^ব্যাংকের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা করতে প্রস্তুত বলেও জানান তিনি। 
বাংলাদেশের নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশের পাশে বরাবরই থেকেছে বিশ্বব্যাংক।

যেগুলোর মধ্যে রয়েছে কোভিড-১৯ পরবর্তী প্রতিকূল পরিস্থিতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জ্বালানি ও নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি, মূল্যস্ফীতি, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সমস্যা, স্কুল থেকে ঝরে পড়া রোধ, লৈঙ্গিক সমতাসহ লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ, সর্বোপরি বিদ্যমান রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ। এসব ঝুঁকি সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সময় সময় যথাযথ সহায়তা ও পরামর্শ দিয়ে থাকে বিশ^ব্যাংক।

সরকারি খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পুষ্টিমান নিশ্চিতকরণ, সামাজিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বিধানেও সহযোগিতা করে সংস্থাটি। ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করতে সরকার ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে বিশ^ ব্যাংক। 
ইতোপূর্বে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) পূর্বাভাস দিয়েছিল যে, ২০২৩ সাল হবে মহামন্দার বছর। তবে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, চীনের অর্থনীতি মন্দাবস্থা মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হতে পারে।

মন্দার কারণে বাংলাদেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধির ধারা কমে দাঁড়াতে পারে ছয় শতাংশ। বিশ্বব্যাংক এক প্রতিবেদনে বলেছে, তা হতে পারে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। সরকার চলতি অর্থবছরে সাড়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করেছে। আইএমএফ সতর্কবার্তা উচ্চারণ করে এও বলেছে যে, কিছু দেশে খাদ্য সংকট প্রকট হতে পারে। কোনো কোনো দেশে দেখা দিতে পারে আরও মূল্যস্ফীতি। ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার মানও কমতে পারে।

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সঠিক সময়ে আইএমএফের ঋণ পেতে আবেদন করেছে এবং তা অবমুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। তা না হলে বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানের মতো হতে পারত। তবে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের পরামর্শ অনুযায়ী বাংলাদেশকেও যেতে হবে যথাযথ সংস্কারের পথে। বাংলাদেশ বর্তমানে সেই পথে হাঁটছেও।

দেশে খাদ্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখাসহ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে খাদ্যপণ্য আমদানিতে উৎসে কর ছাড় দেওয়া, খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো, বিদেশে দক্ষ জনবল প্রেরণ, প্রবাসী আয় বাড়ানো, দেশে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানো, সর্বোপরি খাদ্য মজুত সন্তোষজনক পর্যায়ে উন্নীত করা হতে পারে আগামী দিনের সংকট উত্তরণে সহায়ক। সে অবস্থায় বাংলাদেশের পাশে বিশ^ব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসাটা স্বস্তিদায়ক অবশ্যই।

×