ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১

পলিথিন দূষণ থেকে মুক্তির উপায়

ওবায়দুল কবির

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

পলিথিন দূষণ থেকে মুক্তির উপায়

পলিথিন শপিং ব্যাগ ও পলিপ্রপিলিনের ব্যাগ নিষিদ্ধ

আগামী পহেলা অক্টোবর থেকে দেশের সুপার শপগুলোতে পলিথিন শপিং ব্যাগ ও পলিপ্রপিলিনের ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পণ্য বহনের জন্য ক্রেতাদেরকে আর পলিথিন ব্যাগ দেওয়া হবে না। বিকল্প হিসেবে পাট ও কাপড়ের তৈরি ব্যাগ ক্রেতাদের কেনার জন্য রাখা হবে। সম্প্রতি সচিবালয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সভা শেষে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এই ঘোষণা দিয়েছেন। এই কাজে শিক্ষার্থীরাও সম্পৃক্ত থাকবেন। বিষয়টি নিয়ে সচেতনা তৈরির জন্য প্রচার মাধ্যমে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। এছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তর বেসরকারি সংগঠন এসডোর সঙ্গে মিলে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে  বিকল্প পরিবেশবান্ধব উপাদানে তৈরি বা পাটবস্ত্রের ব্যাগের উৎপাদনকারীদের নিয়ে একটি মেলার আয়োজন করা হবে। মেলায় সুপার শপের কর্তৃপক্ষ এবং উৎপাদনকারীরা নিজেদের চাহিদা এবং সরবরাহের বিষয়ে আলোচনা করতে পারবেন।
প্লাস্টিক-পলিথিন নিয়ে নানা সময় দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। অনুষ্ঠিত হয়েছে সেমিনার-সিম্পোজিয়াম। প্লাস্টিক-পলিথিন জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য যে ক্ষতিকর এ নিয়ে প্রতিনিয়ত শঙ্কা ও উদ্বেগ প্রকাশ করছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। দূষণজনিত ক্ষতি নিয়ে কারও কোনো দ্বিমত নেই। ক্ষতি শুধু স্বাস্থ্য বা পরিবেশের নয়, পলিথিন নানা বিঘœ ঘটাচ্ছে মানুষের দৈনন্দিন জীবনধারায়। প্লাস্টিক বর্জ্য রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরে ড্রেনেজ ব্যবস্থা অচল করে দিচ্ছে।

আমাদের দেশে পলিথিনবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছিল মূলত এ কারণেই। সরকারের দিক থেকেও একাধিকবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পলিথিনের উৎপাদন এবং ব্যবহার নিষিদ্ধ করে আইন করা হয়েছে। ফল কিছুই হয়নি। বাস্তবতা হচ্ছে প্লাস্টিক-পলিথিন মিশে গেছে মানুষের দৈনন্দিন জীবন ব্যবস্থায়। এসব ছাড়া একদিনও চলা সম্ভব নয়- এমন ধারণা সৃষ্টি হয়েছে সবার মাঝে। শুধু আমাদের দেশে কেন, বিশ্বের কোনো দেশই পারেনি প্লাস্টিক-পলিথিন থেকে শতভাগ বের হয়ে আসতে। তবে অধিকাংশ দেশই সঠিক ব্যবস্থাপনায় এর ক্ষতি কমিয়ে এনেছে। প্লাস্টিকের বিকল্প কিছু বের না হওয়া পর্যন্ত আমাদেরও তাই করতে হবে। একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় ক্ষতি কমিয়ে আনতে হবে। 
পলিথিন হচ্ছে প্লাস্টিকেরই একটি পরিবর্তিত রূপ। একবার তৈরি হলে এর কোনোটিই আর নষ্ট হয় না। সুদীর্ঘকাল ধরে এগুলো মাটি-পানি দূষিত করতে থাকে। নষ্ট করে পরিবেশের ভারসাম্য। পলিথিন উদ্ভাবনের পর থেকেই পরিবেশ বিজ্ঞানী এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এর ক্ষতিকারক দিকগুলো নিয়ে সতর্ক করে যাচ্ছেন। প্লাস্টিকের বিকল্পও খোঁজা হচ্ছে বহুদিন ধরে। তারপরও দিন দিন বাড়ছে প্লাস্টিকের ব্যবহার।

দাম কম, সহজলভ্য এবং ব্যবহার সুবিধাজনক থাকায় ঝুঁকি নিয়ে মানুষ এটি ব্যবহার করছে। প্লাস্টিক সবচেয়ে ক্ষতি করে ব্যবহার শেষে পরিত্যক্ত হয়ে। এর উপজাত এবং কণিকা জল ও স্থলে ক্ষতিকর উপাদান ছড়ায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় মানুষ এবং জীবজগত। বিরূপ প্রভাবে মানবদেহে ক্যান্সার, অ্যাজমা, হরমোনজনিত সমস্যাসহ বিভিন্ন জটিল রোগ তৈরি হয়। রোগাক্রান্ত হয়ে পড়তে পারে গাছপালাসহ পুরো জীবজগত। তবুও প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে না পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রেই।
প্লাস্টিক উদ্ভাবন হয় ১৮৫৫ সালে। আলেকজান্ডার প্রথম প্লাস্টিক উদ্ভাবন করে নাম দিয়েছিলেন পার্কেসিন। ১৯০৭ সালে লিও বেকল্যান্ড উদ্ভাবন করেন সিনথেটিক প্লাস্টিক। এরপর আরও দুই বিজ্ঞানী নোবেলজয়ী হারমেন স্টাওডিংগার এবং হারমেন মার্ক বর্তমান কলেবরে প্লাস্টিক উৎপাদনে অবদান রাখেন।

সিনথেটিক থার্মোপ্লাস্টিক থেকে পর্যায়ক্রমে পলিথিন পর্যন্ত রূপান্তর ঘটে। বহুমুখী সুবিধার কারণে প্লাস্টিক এবং পলিথিনের বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়। মানবকল্যাণে এগুলো উদ্ভাবন হলেও তখন বিজ্ঞানীরা জানতেই পারেননি এই প্লাস্টিক একদিন জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য কতটা হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
প্লাস্টিক-পলিথিনের উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় বিক্রি মূল্যও কম। এর ব্যবহারও বহুমুখী। কাঠ কিংবা ধাতব পদার্থের জায়গা দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিক। ওজনে হাল্কা এবং সহজে বহনযোগ্য। মানুষ তাই ঘরে-বাইরে বিভিন্ন কাজে এই পণ্য ব্যবহার করছে। দরজা থেকে বসা বা শোয়ার আসন, বাথরুম ফিটিংস থেকে থালা-বাসন আসবাপত্র সবকিছুই তৈরি হচ্ছে প্লাস্টিক দিয়ে।

বিশ্বে প্রতি বছর ৩৮১ কোটি টন প্লাস্টিক উৎপাদন হয়। এর মধ্যে পরিবেশে যোগ হয় ৪৫ কোটি টনের বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য। এই বর্জ্যরে ৫১ শতাংশ এশিয়া মহাদেশে। এক সময় বাংলাদেশ প্রচুর পরিমাণ প্লাস্টিক পণ্য আমদানি করত। এখন উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রতি বছর প্রায় চার হাজার কোম্পানি ২৪ লাখ টন প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন করছে। প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হচ্ছে বছরে ৮ লাখ টন।

নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য রফতানি করছে। আরও একটি চমকপ্রদ তথ্য হচ্ছে, দেশে প্রতিবছর মাথাপিছু প্রায় ১৫ কেজি প্লাস্টিক দ্রব্য ব্যবহার হয়। বিশ্বে মাথাপিছু গড়ে ব্যবহার হয় ৬০ কেজি। উত্তর আমেরিকা, পশ্চিম ইউরোপ ও জাপানের মতো উন্নত দেশে মাথাপিছু প্লাস্টিকের ব্যবহার ১০০ কেজি।

এসব পণ্য জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ভয়ংকর ক্ষতিকর হলেও মানুষের দৈনন্দিন জীবনে জড়িয়ে গেছে অঙ্গাঙ্গিভাবে। একদিকে যেমন প্লাস্টিকের ক্ষতিকর দিকগুলো আলোচনা হচ্ছে, অন্যদিকে এর ব্যবহারও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। 
পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, একদিনে প্লাস্টিকের ব্যবহার থেকে বের হওয়া যাবে না। এজন্য নিতে হবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। প্লাস্টিকের বিকল্প কি হতে পারে তা দেখতে হবে। শুধু বিকল্প হলেই চলবে না, হতে হবে প্লাস্টিকের মতোই সহজলভ্য, ব্যবহার উপযোগী এবং সুলভ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এ নিয়ে গবেষণা শুরু করেছে। জাপান, জার্মানি এবং ইতালির কয়েকটি রাসায়নিক কোম্পানি মাটি ও পানিতে মিশে যাওয়ার উপযোগী প্লাস্টিক উদ্ভাবন করেছে।

এগুলো এখনো বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হয়নি। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা কাজ করছে। এখনই প্লাস্টিকের ক্ষতিকারক প্রভাব কমাতে একমাত্র পথ হচ্ছে সঠিক ব্যবস্থাপনা। প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনা হচ্ছে এটিকে বর্জ্যে পরিণত না করে রিসাইকেলের দিকে নিয়ে যাওয়া। ব্যবহার শেষে এগুলো মাটি, পানি বা যত্রতত্র না ফেলে যদি শতভাগ রিসাইকেল করা যায় তবেই আপাতত এই ভয়ংকর ক্ষতি থেকে কিছুটা হলেও মানবজাতি রক্ষা পেতে পারে। 
বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিকের ব্যবহার দুভাবে হয়। একটি হচ্ছে সরাসারি প্লাস্টিক দিয়ে আসবাবপত্র তৈরি, অন্যটি হচ্ছে পলিথিন। দুই ধরনের প্লাস্টিকের ব্যবহারই বাড়ছে দিনের পর দিন। এর মধ্যে বিশ্বের কিছু স্থানে পলিথিন ব্যবহার সীমিত করা হয়েছে। কিছু শহরে দৈনন্দিন কাজে পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধও করা হয়েছে। বাংলাদেশে ২০০২ সালে পলিথিনের ব্যবহার সীমিত করে আইন পাস করা হয়।

সেই সময় পলিথিনের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযান চালানো হয় বিক্রেতা কিংবা উৎপাদক পর্যায়ে। এসব উদ্যোগের ফলে সাময়িক হলেও কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হয় পলিথিনের ব্যবহার। সরকারের পক্ষ থেকে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাটের ব্যাগ কিংবা কাগজের ঠোঙ্গা ব্যবহারে উৎসাহিত করা হয়। বাস্তবতার নিরিখে দেখা গেছে, যে পরিমাণ পলিথিন মানুষের জীবনযাত্রায় দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার শুরু হয়েছে সেই পরিমাণ বিকল্প ব্যবহার্য বাজারে আসেনি। বিকল্পগুলো খুব সুলভও হয়নি।

সহজ ব্যবহারের দীর্ঘ অভ্যাস ত্যাগ করে তাই মানুষ স্থায়ীভাবে বিকল্প ব্যবহারের দিকে যেতে পারেনি। আবারও নানা কৌশলে, ভিন্ন আকারে বাজারে ফিরতে থাকে পলিথিন। কখনো নেট, কখনো কাপড়ের ব্যাগ। এখন আর রাখঢাক কিছুই নেই। পলিথিনের সা¤্রাজ্য সর্বত্র। 

পলিথিন ছাড়া প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হয়নি কোনো সময়। উন্নত বিশ্বও প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেনি। তবে প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনা ভালভাবে করার চেষ্টা করছে। মানুষের ব্যবহার্য প্লাস্টিকের অধিকাংশের শেষ গন্তব্য সাগর। প্লাস্টিক কখনোই পচে না। পরিত্যক্ত অবস্থায় নদ-নদীসহ বিভিন্ন জলাশয়ে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের একটি বড় অংশ ভাসতে ভাসতে নদী থেকে সাগরে পতিত হয়।

অসচেতন পর্যটকরা সমুদ্র তীরে প্লাস্টিক পাত্র ব্যবহারের পর পানিতে ছুড়ে ফেলে। সমুদ্রে চলাচলকারী জাহাজ ও ট্রলার থেকেও প্লাস্টিক পণ্য পানিতে নিক্ষেপ করা হয়। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও বন্যায় স্থলভাগের পরিত্যক্ত প্লাস্টিক সাগর-মহাসাগরে চলে যায়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের গবেষণা রিপোর্ট অনুসারে সারাবিশে^ প্রতি বছর ১৬ কোটি ৫০ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সাগরে পতিত হয়। এভাবে চলতে থাকলে ২০২৫ সালের মধ্যে সাগরে মাছের চেয়ে প্লাস্টিক কণার সংখ্যা বেশি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। 
প্লাস্টিকের ক্ষতি কমাতে পরিবেশবিদরা বলছেন যথাযথ ব্যবস্থাপনার কথা। সিঙ্গাপুরে প্লাস্টিক কিংবা পলিথিন কোনোটাই নিষিদ্ধ নয়। দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে ড্রেনেজ ব্যবস্থায় পলিথিন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এমন ইতিহাস নেই। সিঙ্গাপুরে প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এদের ব্যবহৃত প্লাস্টিক শতভাগ রিসাইক্লিংয়ের দিকে চলে যায়। এটি সম্ভব হয়েছে সাধারণ বর্জ্য থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য আলাদা করতে পারার কারণে।

একদিকে রয়েছে আইনগত বাধ্যবাধকতা, অন্যদিকে মানুষও সচেতন হয়েছে। প্রতিবেশী ভারতে ট্রেন স্টেশনসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে পাশাপাশি দুই রঙের দুটি বর্জ্য রাখার বাস্কেট দেখা যায়। একটিতে শুধু পলিথিনসহ প্লাস্টিক বর্জ্য এবং আরেকটি প্লাস্টিক ছাড়া সাধারণ বর্জ্য। জাপানে প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইকেল করে নতুন পণ্যের পাশাপাশি পেট্রোলিয়াম দ্রব্য উৎপাদন করছে। 
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিকল্প উৎসাহিত করে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করা যায়। বিষয়টি মানুষের অভ্যস্ততার। যে কোনো কিছু শুরু করতে একটু অসুবিধা হয়। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়। এক সময় সরকারের অভিযানে পলিথিন প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পলিথিনের দোকানে কাগজের ঠোঙ্গা বিক্রি হতো। বিশ্বের বেশ কিছু দেশ পলিথিনের বিকল্প দিয়ে চলছে। এজন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনা কৌশল।

প্লাস্টিক ব্যবহার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রেও আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। বিয়ে কিংবা কোনো বড় অনুষ্ঠানে প্রত্যেকের জন্য আলাদা বোতলে পানি দেওয়ার প্রয়োজন নেই। বড় বোতলে পানি দিলে একদিকে যেমন প্লাস্টিকের ব্যবহার কম হবে, অপরদিকে পানির অপচয়ও রোধ হবে। আগে সফট ড্রিঙ্কস বিক্রি হতো কাচের বোতলে। এখন প্লাস্টিকের বোতলে হওয়ায় যত্রতত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ফেলা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আবার কাচের বোতলে ফিরে যাওয়া যায়। প্লাস্টিক বোতলের দাম বাড়িয়ে দিলে মানুষ আবার কাচের বোতলে ফিরে যাবে।
এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন খুব সহজ নয়। মানুষের অভ্যাস পরিবর্তন করা কঠিন একটি কাজ। এটি শুধু আইন প্রয়োগ করে হবে না, মানুষকেও সচেতন করতে হবে। বিশ্বের সকল দেশে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করে প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনা সহজ করা যায়। প্রথমত- যত্রতত্র প্লাস্টিক বা পলিথিন ফেলা নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে। দ্বিতীয়ত- আলাদা করতে হবে সাধারণ বর্জ্য থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য।

তৃতীয়ত- প্লাস্টিক বর্জ্যরে শতভাগ নিতে হবে রিসাইকেলের আওতায়। চতুর্থত- বাড়ি, দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অনুষ্ঠানস্থল, বাজার, বাস-রেল-লঞ্চ স্টেশনসহ লোক সমাগমের সকল স্থানে দুই রঙের আলাদা দুটি বাস্কেট স্থাপন করতে হবে। একটি শুধু প্লাস্টিক বর্জ্য এবং অপরটি সাধারণ বর্জ্য। সর্বোপরি নাগরিক হিসেবে প্রত্যেককে দায়িত্বশীল হতে হবে। মানুষকে অভ্যস্ত করাতে পারলেই কেবল প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান নিজে একজন পরিবেশ কর্মী। দীর্ঘদিন ধরে তিনি পরিবেশ নিয়ে কাজ করছেন। পলিথিনের ক্ষতিকারক দিকগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময় মতামত দিয়েছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা ভাবনা করবেন এটিই স্বাভাবিক। দীর্ঘদিন পরিবেশ নিয়ে কাজ করার সুবাদে তিনি জানেন কোথায় সমস্যা রয়েছে।

তার পক্ষে পরিবেশবান্ধব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নও তাই সহজ হবে। অতীতের মতো তিনি নিশ্চয়ই শুধু অভিযানে না গিয়ে পলিথিন ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দেবেন। মানুষকে সচেতন করার জন্য চালাবেন সর্বোচ্চ চেষ্টা। মানুষ সচেতন হলে পলিথিন সমস্যা অর্ধেক কমে যাবে। 

  
লেখক :   নির্বাহী সম্পাদক, জনকণ্ঠ

×