ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

পিএসপিতে প্রশ্নফাঁস চক্র

-

প্রকাশিত: ২০:৩০, ১০ জুলাই ২০২৪

পিএসপিতে প্রশ্নফাঁস চক্র

সম্পাদকীয়

দেশে প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রায় একটি নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাধ্যমিক থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিক, উচ্চ শিক্ষা তথা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, মেডিক্যালে ভর্তিসহ নি¤œ মধ্য ও উচ্চপর্যায়ে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটছেই। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ বিমানের বিভিন্ন পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম-দুর্নীতি তথা প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি উদ্ঘাটিত হয়েছে। এর জন্য কয়েকজনকে শাস্তির সম্মুখীনও হতে হয়েছে।

সত্যি বলতে কি, অন্য সব ক্ষেত্রের মতো এক্ষত্রেও এক বা একাধিক শক্তিশালী চক্র গড়ে উঠেছে। মাঝেমধ্যে ধরাও পড়ছে। কমবেশি শাস্তিও হচ্ছে। তবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা থামানো যাচ্ছে না কিছুতেই। এর মূল কারণ সম্ভবত সরিষার মধ্যেই যদি ভূত থাকে, তবে তা দিয়ে আদৌ কোনো কাজ হয় না। সার্বিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, যে বা যারা নিয়োগ দেবে কিংবা পরীক্ষা গ্রহণ ও উত্তরপত্র মূল্যায়ন করবে, তাদেরই একটি বড় অংশ সরাসরি জড়িত প্রশ্নপত্র ফাঁসে। 
পাবলিক সার্ভিস কমিশন পিএসসি বিসিএস ক্যাডারসহ বিভিন্ন নন-ক্যাডার পদে নিয়োগদানকারী সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। স্বভাবতই এই প্রতিষ্ঠানটিতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, স্টান্ডার্ড তথা মান বজায় রাখা এবং নিরপেক্ষতা রক্ষা করা বাঞ্ছনীয়। সেই পিএসসিতে প্রশ্নপত্র ফাঁসচক্রের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। ৫ জুলাই অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পরিচালকসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগ অন্তত ১৭ জনকে গ্রেপ্তারের চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে।

ধৃতদের মধ্যে পিএসসির দুই উপ-পরিচালক, এক সহকারী পরিচালকসহ সংস্থাটির সাবেক গাড়ি চালকও রয়েছে। গ্রেপ্তার ১৭ জনের মধ্যে বিভিন্ন সংস্থায় জড়িত কয়েক ব্যক্তিসহ রয়েছে ছাত্রলীগের কর্মীও। এই চক্রটি একাধিক নন-ক্যাডার পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত। রেলওয়ের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তরপত্রে অন্তত ২ কোটি টাকার লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। সিআইডি পুলিশ জানিয়েছে, পিএসসির নিয়োগ পরীক্ষা এলেই চক্রটি বিপুল অর্থের বিনিময়ে প্রশ্নফাঁস করে থাকে। পিএসসির মতো সর্বোচ্চমানের একটি সরকারি সাংবিধানিক সংস্থার মাধ্যমে যদি নিয়মিত প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটে, তাহলে বলতে হবে দেশের ভবিষ্যৎ প্রায় অন্ধকার।  
বিসিএস পরীক্ষা নিয়েও কেচ্ছা-কেলেঙ্কারির বুঝি শেষ নেই। এতদিন হৈ-চৈ হয়েছে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও ফল নিয়ে। শোনা গেছে, ভুলে ভরা ও অসঙ্গতিপূর্ণ প্রশ্নপত্রও। বিষয়টি ধরা পড়ে দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত ৩৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রাক্কালে। এ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন দুই লাখ ১১ হাজার ৩২৬ চাকরিপ্রার্থী। প্রদত্ত প্রশ্নপত্রে বেশ কয়েকটি প্রশ্নে একেবারে সাধারণ বানান ভুল থেকে শুরু করে পাওয়া যায় ব্যাপক অসঙ্গতি।

ডিজিটাল যুগে প্রায় সবার হাতে হাতে যখন শোভা পায় মোবাইল ফোন, তখন ইংরেজিতে সেই সাধারণ বানানটিই ভুল লেখা হয়েছে বিসিএসের মতো একটি উচ্চমানের পরীক্ষায়। অনেক প্রশ্নে চারটি উত্তরের মধ্যে যেগুলো দেওয়া হয়েছে, তার একটিও সঠিক নয়। সে অবস্থায় বিসিএস পরীক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের প্রশ্ন- ভুলে ভরা এবং অসঙ্গতিতে পূর্ণ প্রশ্নপত্রের দায়ভার নেবে কে? এমনিতেই দেশে সার্বিকভাবে শিক্ষার মান, বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

গত কয়েক বছর ধরে বিসিএস পরীক্ষায় ব্যাপক দুর্নীতিসহ প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র ফাঁসের অভিযোগ রয়েছে। ইতোপূর্বে প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি তথা মৃত্যুদণ্ডের বিধানের কথা শোনা গিয়েছিল। তদনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সময় বুঝি সমাগত!

×