ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

চামড়ার বাজারে সিন্ডিকেট

প্রকাশিত: ২০:০২, ২১ জুন ২০২৪

চামড়ার বাজারে সিন্ডিকেট

.

কাঁচা চামড়ার বাজারে এবারেও ধস নেমেছে। এই নেতিবাচক ধারাবাহিকতা উদ্বেগজনক। সবচেয়ে বড় কথা, সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম না পেয়ে চামড়া ফেলে দিয়েছেন বহু মৌসুমি ব্যবসায়ী। সরকারের সিদ্ধান্তকে অবজ্ঞা করার সাহস কিভাবে পায় আড়তদার, পাইকার ট্যানারি মালিকরা সেটিই বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার সারাদেশে প্রায় কোটি লাখ গবাদিপশু কোরবানি করা হয়েছে। অর্থাৎ সঠিক ব্যবস্থাপনায় সংগ্রহ করা হলে এক কোটি পিসের বেশি চামড়া পাওয়া যেত। যার আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য কয়েক হাজার কোটি টাকা। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে এবারও কাঁচা চামড়ার বাজারে ধস নেমেছে। সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা ছিল আগে লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণ করতে হবে। এরপর বিক্রি করতে হবে। কিন্তু সেই উদ্যোগ তেমন দেখা যায়নি। আর এই সুযোগটাই লুফে নিয়েছে আড়তদার, পাইকার ট্যানারি মালিকরা। চামড়া শিল্পের উন্নয়নে এবং মৌসুমি ব্যবসায়ীদের স্বার্থে চামড়ার ভালো দাম পেতে সঠিকভাবে চামড়া সংরক্ষণের জন্য মানুষকে সচেতন উদ্বুদ্ধ করা চাই।

সাধারণ মানুষ কিংবা ছোটখাটো ব্যবসায়ীর পক্ষেও পশুর চামড়া ধরে রাখা সম্ভব নয়। যে দাম পাওয়া যায় তাতেই তাঁরা চামড়া বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। আর সে সুযোগটিই নেন দেশের বড় চামড়া ব্যবসায়ীরা। তাঁরা কোরবানির ঈদ এলেই নানা ধরনের সুর তোলেন। প্রতিবছর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চামড়ার দাম নির্ধারণ করে থাকে। সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে এবার দাম নির্ধারণ করেছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সেই ব্যবসায়ীরাই নির্ধারিত মূল্যে চামড়ার দাম দেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। বছর ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। সেই হিসাবে ঢাকায় প্রতি পিস চামড়ার সর্বনিম্ন দাম হওয়ার কথা এক হাজার ২০০ টাকা।

বাস্তবতা হলো কোরবানি ঈদ এলে দেশের চামড়া শিল্প গণমাধ্যমের আলোচনায় উঠে আসে। সারাবছর নিয়ে তেমন কথাবার্তা হয় না। ঈদুল আজহায় দেশে বিপুল পরিমাণ পশু জবাই হয়। সে হিসাবে কাঁচা চামড়ার জোগানও বিপুল। ন্যায্য দাম না পেয়ে ব্যাপারীরা চামড়া বিক্রি না করে পথের ধারে ফেলে দেন এমন সংবেনশীল খবর পত্র-পত্রিকায় আসে, এবারও এসেছে। সত্যি বলতে কি, আড়ালেই থেকে যায় বিপুল সম্ভাবনা সত্ত্বেও দেশের চামড়া শিল্পের রুগ্নদশার বাস্তবতা। তাই দেশে উন্নতমানের কাঁচা চামড়ার বিপুল সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও চামড়া শিল্প কেন বিকশিত হতে পারেনি নিয়ে অবশ্যই আমাদের ভাবতে হবে।

বাংলাদেশের চামড়ার গুণগতমান ভালো। এখানে শ্রম তুলনামূলক সস্তা। ফলে কোনো ধরনের কাঁচামাল আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি ছাড়াই চামড়া শিল্পের বিকাশের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে সন্তোষজনক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন মোটেই অসম্ভব নয়। সেজন্য চাই সব পক্ষের সদিচ্ছা সক্রিয়তা, দেশকল্যাণ চিন্তা এবং গঠনমূলক পরামর্শ। এছাড়া কোরবানির সময় সিন্ডিকেট ভাঙতে সরকারের কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই।

×