ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

দেশে হার্টের রিং

-

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ১১ জুন ২০২৪

দেশে হার্টের রিং

সম্পাদকীয়

হৃদরোগের জটিল চিকিৎসায় হার্টের শিরা-উপশিরায় কোনো ব্লক হলে রোগীকে বাঁচানোর জন্য করোনারি স্টেন্ট বা হার্টের রিং বসানো অপরিহার্য হয়ে পড়ে। এমনিতেই হৃদরোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল, যা গরিব ও নি¤œবিত্ত তো বটেই, অনেকসময় মধ্যবিত্তদের পক্ষেও বহন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে, বাধ্য হয়ে ধারদেনা অথবা জমি-জিরাত বিক্রি করে মেটাতে হয় চিকিৎসা ব্যয়।

সংশ্লিষ্ট পরিবারটি নিপতিত হয় অসহায় অবস্থায়। এটিও মনে রাখতে হবে যে, হৃদরোগীকে শুধু স্টেন্ট বা রিং বসালেই হয় না। এর পরবর্তীতে সুস্থ জীবন যাপনের জন্য নিয়মিত ওষুুধপথ্য সেবন ও চেকআপ চালিয়ে যেতে হয়। এসবও ব্যয়বহুল, যা অনেকের পক্ষে নিয়মিত বহন করা দুঃসাধ্য।

গরিব ও নিম্নবিত্ত হৃদরোগীদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে কিছুদিন আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে বিভিন্ন রকমের স্টেন্টের দাম বেঁধে দিলেও তা কোনো হাসপাতালেই বাস্তবায়িত হয়নি। তদুপরি স্টেন্টের দাম প্রতিটি হাসপাতালে টাঙানো বাধ্যতামূলক হলেও কোথাও তা মানা হয় না।

ফলে, হৃদরোগী ও স্বজনদের দুর্ভোগ ও কষ্ট কমছে না কিছুতেই। 
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সরকার তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেশেই স্টেন্ট বা হার্টের রিং তৈরির কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। এটি স্থানীয়ভাবে কিভাবে তৈরি করা যায়, সে সম্পর্কে ওষুধ কোম্পানিগুলোকে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। কাজও চলছে।

তদুপরি বর্তমানে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ থেকে কিছু অর্থ আলাদা করে গরিব রোগীদের বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে স্টেন্ট দেওয়া যায় কিনা, তা নিয়েও চলছে চিন্তাভাবনা। উল্লেখ্য, সরকার ইতোমধ্যে করোনা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডেঙ্গু মহামারি প্রতিরোধে ১৫ ধরনের ভ্যাকসিন প্লান্ট নির্মাণ করছে গোপালগঞ্জে। সে অবস্থায় হৃদরোগীদের স্বার্থরক্ষা ও সুবিধার্থে দেশে করোনারি স্টেন্ট বা হার্টের রিং তৈরির কারখানা স্থাপনের বিষয়টি অবশ্যই ইতিবাচক। যত তাড়াতাড়ি এটি বাস্তবায়ন হয়, দেশের মানুষের জন্য ততই মঙ্গল। 
দেশে প্রায় ৭০ শতাংশ মৃত্যু হয় হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সারসহ নানা অসংক্রামক রোগে। তার মধ্যে ২৫ শতাংশ মৃত্যু ঘটে শুধু হৃদরোগে। দেশে হার্টের রিংয়ের বার্ষিক বাজার ৩০০ কোটি টাকার বেশি। প্রতিবছর দেশে প্রায় ৩৫ হাজার স্টেন্ট বা রিং পরানো হয়, যেগুলো যথেষ্ট ব্যয়বহুল। সম্প্রতি সরকার স্টেন্টের দাম কমিয়ে আমদানি প্রতিষ্ঠান ভেদে খুচরা মূল্য সর্বনি¤œ ১৪ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৪০ হাজার ৫০০ নির্ধারণ করেছে।  তবে কোথাও তা মানা হয়নি।

স্টেন্ট বসানোর আগে একজন হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আরও কিছু চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। যেমন- হার্টের অবস্থা জানার জন্য প্রথমেই করতে হয় এনজিওগ্রাম। এটিও সুলভ নয়। হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তির একটি স্টেন্ট লাগানোর প্রক্রিয়ায় লক্ষাধিক টাকার মতো খরচ হয়ে যায়। স্টেন্টের সংখ্যা বেশি হলে তা আরও বেশি হয়।

নিম্ন বা মধ্যম আয়ের একজন মানুষের জন্য এত টাকা জোগাড় করা সহজ নয়। হার্টের রিংয়ের দাম কমানোয় সরকারের উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। তবে এটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারকে কাজ করে যেতে হবে কঠোরভাবে। এতে একদিকে চিকিৎসায় অর্থ সাশ্রয় হবে, অন্যদিকে সঠিক রিংয়ের ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমবে। তদুপরি অগ্রাধিকার তালিকায় রাখতে হবে দেশেই করোনারি স্টেন্ট তৈরির কারখানা স্থাপনের বিষয়টি।

×