![গুরুত্ব কমছে হাটের গুরুত্ব কমছে হাটের](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/editor-picture-final-2405231433.jpg)
সম্পাদকীয়
ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন স্মার্ট বাংলাদেশের পথে যাত্রা শুরু করেছে। শহরের পাশাপাশি প্রায় সমান উন্নয়ন ও অগ্রগতি হয়েছে গ্রামগুলোতে। বর্তমান সরকারের সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও সমন্বয় নীতি ভূমিকা রেখেছে এর মূলে। গত কয়েক বছরে সারাদেশে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি হয়েছে। গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বিদ্যুতের সুবিধা।
উপজেলাগুলো ছাড়াও অনেক গ্রামেই গড়ে উঠেছে বিশাল অবকাঠামো, দালানকোঠাসহ আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা। হাট-বাজার, স্কুল-কলেজের প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পৌঁছে গেছে ডিজিটাল ব্যাংকিং সুবিধা। অনলাইনে কম্পিউটার এবং স্মার্ট ফোনে আর্থিক লেনদেনসহ যাবতীয় সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে প্রায় সর্বত্র।
হাট-বাজারগুলোও আনা হয়েছে এর আওতায়। কৃষকের হাতে হাতে এখন মোবাইল ফোন। আবহাওয়ার আগাম বার্তা ফোনে জেনে চাষাবাদ করে থাকেন। বাজারে কোন কৃষিপণ্যের কি দাম, চাহিদা কেমনÑ সব তথ্যই তার হাতের মুঠোয়। ফলে তার কাছে গ্রামের হাট-বাজার ক্রমশ গুরুত্ব হারিয়েছে।
কৃষককে আগের মতো গরুর গাড়ি কিংবা ভ্যানগাড়িতে উৎপাদিত কৃষিপণ্য বয়ে নিয়ে যেতে হয় না হাট-বাজারে। পরিবর্তে দালাল বা ফড়িয়া-যাদের আমরা মধ্যস্বত্বভোগী বলে থাকি তারাই ট্রাক-মিনিট্রাক নিয়ে এসে দাঁড়ায় কৃষকের আঙিনা অথবা ফসলের মাঠে। ধান মাড়াইয়ের জন্য আসে হারভেস্টার মেশিন। উৎপাদিত ধান-চাল অথবা শাক-সবজি ফলমূল একই সঙ্গে দরাদরি করে তুলে দিতে হয় ফড়িয়াদের হাতে।
পণ্যের দাম কোন হাট-বাজারে কেমন, চাহিদা কতটুকু সেসব তথ্য সঙ্গে সঙ্গে জানা যায় মোবাইলের মাধ্যমে। ফলে আগে যেসব গ্রাম-গঞ্জে হাট-বাজার সরগরম হয়ে থাকত সেসব এখন অনেকটাই গুরুত্ব হারিয়েছে। সেসব স্থানে যান নিতান্ত গরিব কৃষক এবং সাধারণ ক্রেতা। আর যে বা যারা বাড়ির দোরগোড়ায় বসে কৃষিপণ্য বিক্রি করে থাকেন, তাদের হাট-বাজারের ইজারাদারদের দিতে হয় খাজনা বা উসুল।
ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীদের তৎপরতাও বেড়েছে বহুগুণ। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আর্থিক লেনদেনে এসেছে গতি ডিজিটাল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে। দেশে টেকসই সড়ক উন্নয়ন অবকাঠামো গড়ে তোলা হলে পণ্য পরিবহন, মানুষের চলাচলসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের পথ আরও সহজ ও সুগম হতে পারে।
পরিকল্পনাবিদদের মতে, বর্তমানে দেশের ৩০ শতাংশ লোক বসবাস করে শহরে। ২০৪০ সাল নাগাদ জনসংখ্যার অর্ধেক লোক বসবাস করবে শহরে। অতঃপর বিদ্যমান শহরগুলোর পরিকল্পনামাফিক উন্নয়ন করতে গেলে লোকজন সরাতে হবে। ভেঙে নতুন করে গড়তে হবে সব। বাস্তবে তা কখনই সম্ভব নয়। সেজন্য এখন চোখ ফেরানোর সময় এসেছে উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে।
প্রতিটি উপজেলায় গড়ে তুলতে হবে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগ। যত্রতত্র আবাসন, স্থাপনা ও কলকারখানা না করে স্থানীয় জনসংখ্যা ও চাহিদার প্রেক্ষাপটে নিতে হবে সুদূরপ্রসারী ও পরিকল্পিত উন্নয়ন। আর তাহলেই কেবল সম্ভব একটি ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ।