ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

সড়ক সন্ত্রাস নয়

মো. রিয়াজ হোসাইন

প্রকাশিত: ২০:৫৭, ১৫ মে ২০২৪

সড়ক সন্ত্রাস নয়

যাত্রাপথের কষ্ট লাঘবের জন্য চালু হয়েছে দ্রুতগামী যানবাহন

যাত্রাপথের কষ্ট লাঘবের জন্য চালু হয়েছে দ্রুতগামী যানবাহন, নতুন প্রযুক্তি এবং সড়কপথ। দৈনন্দিন আমাদের রুটি রোজগারের সন্ধানে স্থানান্তরিত হতে যানবাহন ব্যবহার করতে হচ্ছে। আবার যাত্রাপথে অনেকে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। ফলস্বরূপ আমরা হারাচ্ছি দেশের দক্ষকর্মী এবং মেধাবী তরুণ-তরুণীদের।

বর্তমানে সড়ক দুর্ঘটনা রীতিমতো ভীতিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও লোকজন সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। যাত্রাপথে চলা রীতিমতো নিজের মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকার মতো। বর্তমানে বাংলাদেশ সড়ক দুর্ঘটনায় বিশ্বে অবস্থান ১০৬ তম  এবং  সড়ক দুঘটনায় মৃত্যু হারের দিক থেকে চতুর্থ।।

আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে ফিটনেসহীন গাড়ি চলাচল, ট্রাফিক আইন মেনে চলার ক্ষেত্রে অবহেলা, আইন প্রয়োগের অভাব, ভাঙাচোরা রাস্তা, মানহীন ডিভাইডার, অদক্ষ চালককে লাইসেন্স প্রদান, দুই এবং তিন চাকার গাড়ির দৌরাত্ম্য, মানসম্পন্ন যানবাহনের অভাব, যেখানে-সেখানে গাড়ি পার্কিং, পুরাতন যান রং করে চালানো ইত্যাদি।

এছাড়াও বিশেজ্ঞদের মতে, দেশে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ চালকদের বেপরোয়া গতি, মাদকাসক্তি এবং ওভারটেকিং মনোভাব। ফলস্বরূপ তারা দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী, যানবাহন এবং দোকানের ওপর গাড়ি তুলে দিচ্ছে। যার ফলে, সাধারণ নিরীহ মানুষের মৃত্যু ঘটছে। বাংলাদেশে সড়ক পরিবহন সংস্থা সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর জন্য নানান সময় বিভিন্ন রকমের পদক্ষেপ নিয়েছে। দুর্ভাগ্য, সড়ক দুর্ঘটনা কমার বদলে বেড়েছে কয়েক গুণ। 
বর্তমান বাংলাদেশে যানবাহনের সংখ্যা ৩৩ লাখের অধিক। যার মধ্যে লাইসেন্স আছে মাত্র ১৮ লাখ ব্যক্তির বাতি ১৫ লাখ ব্যক্তির কোনো লাইসেন্স নেই। আবার শ্রমিক পরিবহন সংস্থার আশ্রয়ে ২ লাখ অদক্ষ ব্যক্তি লাইসেন্স পেয়েছে। যা নিঃসন্দেহে ভয়ংকর। সাম্প্রতিক বাংলাদেশে সড়ক পরিবহন কতৃপক্ষের রিপোর্টে দেখা যায়, চলতি বছর  মার্চ-এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ২শ’ ৮২টি।

উক্ত দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১ হাজার ১শ’ ৮২ জন এবং আহত হয়েছে ১ হাজার ৫শ’ ৫০ জন। এই সব দুর্ঘটনার বেশির ভাগ ঘটেছে চালকদের বেপরোয়া গতির কারণে। আমাদের দেশে বেপরোয়া চালকদের লাগাম টেনে ধরার জন্য আইন পাশ হয়। উক্ত আইনে বলা হয়েছে, দ-বিধি ২৭৮ ধারা অনুযায়ী যদি কোনো ব্যক্তি বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালায় এবং এর ফলে যদি কারও জীবননাশের সম্ভাবনা তৈরি হয়, তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে যেকোন মেয়াদী থেকে সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড কিংবা ৫ হাজার টাকা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

দণ্ড বিধি ৩৩৮ ক ধারা অনুযায়ী যদি কোনো ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত হয়, তাহলে ৩ বছর কারাদ-  কিংবা জরিমানা অথবা উভয় দ-ে দ-িত হবে। দ-বিধি ৩০৪ খ ধারা অনুযায়ী যদি কোনো ব্যক্তির মৃত্যু হয়, তাহলে সর্বনি¤œ ৩ বছর থেকে যে কোনো মেয়াদী কারাদ- বা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। বাস্তবে এই সব আইনের নজির মেলাভার।

ফলস্বরূপ দেশে মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলছে। সুতরাং সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে এবং বেপরোয়া চালকদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। যেমন- ১. অদক্ষ চালকের লাইসেন্স এবং ফিটনেসহীন যান চলাচল বন্ধ করা, ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো, আইনের কার্যকারিতা বাড়ানো, রাস্তার ডিভাইডার এবং ভাঙা রাস্তার মেরামত, মাল এবং যাত্রী পরিবহনের আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা, দৈত্যাকার গাড়ি চলাচলে নির্দিষ্ট গতিসীমা বেঁধে দেওয়া। সর্বোপরি বেপরোয়া গাড়ি রাস্তায় দেখলে ৯৯৯ নাম্বারে ফোন দিয়ে পুলিশকে অবগত করা। 
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে

×