কক্সবাজারের পর্যটন সম্ভাবনা
(গতকালের পর)
পর্যটন খাতে অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পরিকল্পনা ও তদারকির অভাবে কক্সবাজার পর্যটন শিল্পে পিছিয়ে আছে। সমন্বিত পরিকল্পনা ব্যতীত এ শিল্পের বিকাশ পুরোপুরি সম্ভব নয়। পর্যটনকে অর্থনীতিতে রূপ দিতে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব পক্ষকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। এ শিল্পের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। বিদেশের মতো পর্যটন শিল্প বিকাশের সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে কক্সবাজারে
পর্যটন খাত ছাড়াও কক্সবাজারের নানাবিধ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। যেমন- লবণ, কৃষিপণ্য, মৎস্য ও শুঁটকি, স্থানীয় পরিবহন, নির্মাণ ও আবাসন খাতে ব্যাপক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। রেলওয়ে জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের আন্তঃনগর ট্রেন চট্টলা এক্সপ্রেসের অবমুক্ত করা রেক দিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চালানো হচ্ছে ট্রেন। আর ঢাকা-কক্সবাজারে চলাচলকারী ট্রেনগুলোতে যুক্ত করা হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আনা নতুন কোচ।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বর্তমানে পর্যটন খাত পৃথিবীর জিডিপিতে প্রায় ১১ শতাংশ অবদান রাখে। বিশ্বব্যাপী ২০১৯ সালে পর্যটকের সংখ্যা ছিল প্রায় ১.৫ বিলিয়ন। ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম ওরগানাইজেশন ধারণা করেছিল পরবর্তী প্রত্যেক বছর আরও ৪ থেকে ৫ শতাংশ পর্যটক বৃদ্ধি পাবে। ১৯৫০ সালে পৃথিবীতে পর্যটকের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৫ মিলিয়ন, যা ২০১৯ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪৩৫ মিলিয়নে। ধারণা করা হচ্ছে, বিগত ৭০ বছরে পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ৫০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
পর্যটকের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিধি ব্যাপকতা লাভ করেছে। পর্যটনের মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধিত হয়ে বর্তমানে পৃথিবীর চারটি কর্মসংস্থানের মধ্যে একটি কর্মসংস্থান তৈরি হয় পর্যটন খাতে। বর্তমানে বাংলাদেশের পর্যটন খাতে আয় প্রায় ৭৬ দশমিক ১৯ মিলিয়ন ডলার। ভারত আয় করে ১০ হাজার ৭২৯ মিলিয়ন ডলার, মালদ্বীপ ৮০২ মিলিয়ন ডলার, শ্রীলঙ্কা ৩৮৫ মিলিয়ন ডলার এবং নেপাল ১৯৮ মিলিয়ন ডলার, যা সার্কভুক্ত অন্যান্য দেশের তুলনায় অপ্রতুল।
বিশ্ব পর্যটন সংস্থার প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০২৪ সাল নাগাদ পর্যটন শিল্প থেকে প্রতিবছর ২ ট্রিলিয়ন ডলার আয় হতে পারে। ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের ৫১টি দেশের পর্যটকরা বাংলাদেশে ভ্রমণ করবেন, যা মোট জিডিপির ১০ শতাংশ অবদান রাখবে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৪ সালে মোট কর্মসংস্থানের ১ দশমিক ৯ শতাংশ হবে পর্যটন শিল্পের অবদান। পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার রোলমডেল।
ভ্রমণ ও পর্যটন কাউন্সিলের (ডব্লিউটিটিসি) তথ্যানুযায়ী বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই শিল্পের অবদান ৮ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার। ২০১৯ সালে পর্যটন শিল্প বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ২ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার অবদান রাখে, যা বিশ্ব জিডিপির ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করে ১৫৬ কোটি পর্যটক। অর্থাৎ প্রতি সাতজনের একজন পর্যটক।
জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের ফলে সাধারণ মানুষের কাছে ভ্রমণ পিপাসা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে বিধায় আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে অনন্য অবদান রাখছে পর্যটন শিল্প। বাংলাদেশে পর্যটন খাতে সরাসরি কর্মরত আছেন প্রায় ১৫ লাখ মানুষ। এছাড়াও পরোক্ষভাবে আছেন ২৩ লাখ। অর্থাৎ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে পর্যটন খাতে। যার আর্থিক মূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ১১০ কোটি। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৪ সাল নাগাদ এ সংখ্যা ২০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। আর বিপুল সংখ্যক পর্যটকের প্রায় ৭৫ শতাংশ ভ্রমণ করবে এশিয়ার দেশগুলোতে। বাংলাদেশ যদি এ বিশাল বাজারে টিকে থাকতে পারে তাহলে পর্যটনের হাত ধরেই বদলে যেতে পারে দেশের অর্থনীতির রূপরেখা। বাংলাদেশের গ্রামগুলো হতে পারে পর্যটন আকর্ষণের অপার সম্ভাবনা।
সারাবিশ্বের হিসাব করতে গেলে বাংলাদেশ এখনো পর্যটন শিল্পে অনেক পিছিয়ে আছে। ধারণা করা হয়, বছরে প্রায় ৪ কোটি দেশীয় পর্যটক সারাদেশ ঘুরে বেড়ান। সে হিসেবে বাংলাদেশেও ভবিষ্যতে পর্যটকের সংখ্যা ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন বৃদ্ধির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে কক্সবাজরের পর্যটন খাতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত, সেন্টমার্টিন দ্বীপ এবং সোনাদিয়া দ্বীপের বাস্তুতন্ত্রের ওপর পর্যটকদের কর্মকাণ্ডের বিরূপ প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৯ সালে সরকার এসব এলাকাকে প্রতিবেশগতভাবে সংকটপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করেছে। এর প্রেক্ষিতে আমরা যেন নির্বিঘেœ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন ও উপভোগ করতে পারি সেজন্য আমাদের অবশ্যই উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্র রক্ষার্থে পর্যটন স্থানগুলোর প্রতিবেশগত ধারণক্ষমতা বিবেচনার দাবি রাখে।
বর্তমান ভঙ্গুর উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্র দীর্ঘস্থায়ীভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন কর্মকা- থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। পর্যটকদের ঘোড়ায় চড়া, সৈকতে খেলাধুলা, অপরিকল্পিত ভ্রমণ, মোটরবাইক চালানো, অসতর্ক ও এলোমেলো গতিতে বোটিং, ডাইভিংয়ের মতো বিনোদনমূলক কার্যকলাপের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে উপকূলীয় মাটি, সমুদ্রসৈকত এবং প্রবাল প্রাচীরের প্রাণীদের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়াও অনেক পর্যটক প্রয়োজনীয় সচেতনতার অভাবে তাদের খাবারের উচ্ছিষ্ট এবং পলিথিনের খালি প্যাক এদিক-সেদিক নিক্ষেপ করে থাকেন। অসচেতন রেস্টহাউস, কটেজ, রিসোর্টগুলোও তাদের উৎপাদিত বর্জ্য সরাসরি উপকূলীয় জলাশয়ে ফেলে দেয়।
বিপুলসংখ্যক পর্যটকের আগমনে খাবারের সংস্থানের প্রয়োজনে স্থানীয় সামুদ্রিক মাছের চাহিদা বাড়ে। স্যুভেনির হিসেবে বিক্রির জন্য অতিরিক্ত প্রবাল সংগৃহীত হয়। বিভিন্ন পর্যটনসংশ্লিষ্ট কার্যাদি স্বাদু পানির চাহিদা সৃষ্টি করে, যা পূরণ করতে ভূগর্ভস্থ পানির উত্তোলন বাড়ে। এতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। যা মাটির ক্ষয় বৃদ্ধি এবং লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশে সাহায্য করতে পারে।
এসব পরিবেশবিনাশী কর্মকাণ্ড উপকূলীয় উদ্ভিদ ও প্রাণিজগতের জীবনের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে। যা এ অঞ্চলের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য এবং সূক্ষ্ম বাস্তুতন্ত্রকে বিপন্ন করতে পারে। এটা সত্য যে, গণপর্যটন ব্যবস্থায় বর্তমান প্রজন্ম উপকূলীয় কক্সবাজার জেলার অকৃত্রিম প্রকৃতির অপরূপ রূপের আস্বাদন নিতে সক্ষম হলেও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তা থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
কক্সবাজারে দেশের পর্যটন বিকাশে ব্যাপক সম্ভাবনা যেমন রয়েছে, তেমনি সমসাময়িক ও দীর্ঘমেয়াদি প্রচুর সমস্যাও বিদ্যমান। কক্সবাজারের অপার সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে পর্যটনের বিকাশের সুযোগের পাশাপাশি এখানকার অন্যতম সমস্যা হলো অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও রোহিঙ্গা শরণার্থীসহ আরও বেশ কয়েকটি সমস্যা। যেখানে-সেখানে গড়ে উঠছে ইট-পাথরের স্থাপনা। সরকারি দপ্তর কর্তৃক বাধা দিয়ে কিংবা আইন প্রয়োগ করেও দমানো যাচ্ছে না এসব পরিকল্পনাবিহীন কার্যক্রম।
যত্রতত্র পাহাড় কেটে প্রকৃতির ক্ষতি করে এসব অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। নদী ভরাট আর ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট নিধন করে চলছে দখলের মহোৎসব। সেন্টমার্টিনেও চলছে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের কাজ। যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট করছে। দ্বীপটিকে করছে বিপন্ন। পরিবেশবাদীরা এসব অনিয়ম বন্ধে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে গেলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
যে কক্সবাজারকে কেন্দ্র করে সরকারের এত পরিকল্পনা, সেই কক্সবাজারের ১২০ কিলোমিটার সৈকতের মধ্যে বর্তমানে বিক্ষিপ্তভাবে এখানে-ওখানে মাত্র তিন কিলোমিটার পর্যটন এলাকা হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। মানবসৃষ্ট নানা সমস্যার কারণে ওই তিন কিলোমিটার সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে সম্প্রতি ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়ে মাত্র কয়েক মাসে কয়েক হাজার ঝাউগাছ বিলীন হয়ে গেছে।
রোহিঙ্গা সমস্যা এখানে আরেকটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৭ সালের পরে কিংবা এরও আগে দফায় দফায় সব মিলিয়ে এদেশে প্রায় ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গার বসবাস। রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলাও চরম হুমকির মুখে রয়েছে বর্তমানে। তাদের জন্য নির্মিত ক্যাম্প থেকে পালিয়ে প্রতিদিন কক্সবাজারসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা।
দেশে ইয়াবা ও অস্ত্র ব্যবসার প্রসার ঘটিয়েছে তারা। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ নানা অপরাধমূলক কাজে তারা জড়িয়ে পড়ছে নিয়মিত। ব্যবহার হচ্ছে একাধিক গ্রুপের ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে। জেলার শ্রমবাজারও অনেকটা তাদের দখলে বললেই চলে।
কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসায় সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া একটি অঘোষিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব সমস্যা ছাড়াও রয়েছে আরেকটি গুরুতর অপরাধÑকক্সবাজার সমুদ্রসৈকত এলাকায় প্রতিনিয়ত সরকারি মূল্যবান জমি দখল হচ্ছে। কোটি কোটি টাকার জমি দখল করে পর্যটন এলাকার একাধিক পয়েন্টে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক পড়েছে।
সরকারি খাস জমি দখলের প্রতিযোগিতা চলছে ইনানী, হিমছড়ি ও শহরের সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট, সি-ইন পয়েন্ট, বালিকা মাদ্রাসা পয়েন্ট ও ডায়াবেটিক পয়েন্টে। অভিযোগ রয়েছে, এসব বেপরোয়া ভূমি দখল ও স্থাপনা নির্মাণ কাজে সহযোগিতা করছে প্রশাসনের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা।
উপর্যুক্ত সমস্যাগুলো নিরসন করতে পারলে কক্সবাজারের টেকসই উন্নয়ন-অভিযাত্রায় ইকোট্যুরিজম হতে পারে সবচেয়ে সুন্দর সমাধান। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখার পাশাপাশি উন্নত জীবিকা উপার্জনে ইকোট্যুরিজম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। পাহাড়, বন-বনানী, বেলাভূমি, সমুদ্রসৈকতের ভূ-প্রকৃতিগত আকর্ষণ, প্রশান্তিদায়ক উপক্রান্তীয় জলবায়ু, উদ্ভিদ ও প্রাণিজগতের বৈচিত্র্য, সহজগম্যতা এবং স্থানীয় জনমানুষের বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবনাচরণ ও সংস্কৃতির কারণে এখানে ইকোট্যুরিজমের অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
একই স্থানে বন্যপ্রাণী, প্রবাল প্রাচীর ও ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের মতো অমূল্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমাবেশ অত্যন্ত বিরল। যার ফলে কক্সবাজারকে দেশের প্রধান ইকোট্যুরিজম হটস্পট হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
কক্সবাজার, এর আদিম সৈকত, সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং টেকসই পর্যটনের প্রতিশ্রুতিসহ একটি বিশ্বব্যাপী ভ্রমণ গন্তব্যে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভ্রমণকারীরা অর্থপূর্ণ এবং প্রামাণিক অভিজ্ঞতার সন্ধান করার কারণে কক্সবাজার একটি গন্তব্য হিসেবে দাঁড়িয়েছে। যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সাংস্কৃতিক নিমগ্নতার একটি নিখুঁত মিশ্রণ সরবরাহ করে।
সতর্ক পরিকল্পনা এবং দায়িত্বশীল পর্যটন অনুশীলনের মাধ্যমে কক্সবাজার তার পর্যটন সম্ভাবনাকে উন্মোচিত করতে পারে, যা সারাবিশ্বের অভিযাত্রী এবং প্রকৃতিপ্রেমীদের হৃদয়কে মোহিত করতে সক্ষম।
কক্সবাজারে পর্যটন শিল্প দ্রুত বিকাশমান খাত হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদান রাখতে পারে। এ শিল্পের বিকাশে আমাদের রয়েছে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, সুপ্রাচীন নিদর্শন। সরকার কক্সবাজারের অফুরন্ত সম্ভাবনাময় পর্যটনকে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে।
কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। সারাবিশ্বের মধ্যে কক্সবাজার অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটে পরিচিত হয়েছে। দেশের মানুষের আয় বৃদ্ধির কারণে বিগত কয়েক বছরে অভ্যন্তরীণ পর্যটনের উল্লেখযোগ্য প্রসার ঘটেছে। একই সঙ্গে এ খাতে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবলের ব্যাপক চাহিদা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
কক্সবাজারে আন্তর্জাতিকমানের হোটেল, মোটেল, কটেজ ও রিসোর্টের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পর্যটন ও আতিথেয়তা ব্যবস্থাপনাসংশ্লিষ্ট দক্ষ ও প্রশিক্ষিত পেশাজীবীর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কক্সবাজার আয়তনে ছোট হলেও এর ভৌগোলিক অবস্থান, নৈসর্গিক সৌন্দর্য, সংস্কৃতি, মানুষের অতিথিপরায়ণতা ইত্যাদি বিবেচনায় এখানে পর্যটনের অফুরন্ত সম্ভাবনা রয়েছে।
পর্যটন খাতে অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পরিকল্পনা ও তদারকির অভাবে কক্সবাজার পর্যটন শিল্পে পিছিয়ে আছে। সমন্বিত পরিকল্পনা ব্যতীত এ শিল্পের বিকাশ পুরোপুরি সম্ভব নয়। পর্যটনকে অর্থনীতিতে রূপ দিতে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব পক্ষকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। এ শিল্পের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। বিদেশের মতো পর্যটন শিল্প বিকাশের সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে কক্সবাজারে।
সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগকেও স্বাগত জানাতে হবে। বেসরকারি উদ্যোগকে উদ্বুদ্ধ করে সমুদ্রবেষ্টিত সেন্টমার্টিন দ্বীপ, ইনানী, ছেঁড়াদ্বীপ, টেকনাফকে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রে রূপায়িত করা যেতে পারে। স্থানীয়ভাবেও জায়গাগুলোর ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ সড়ক সম্প্রতি দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে পর্যটননগরীর আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটক আকর্ষণে কক্সবাজারে সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, নাফ ট্যুরিজম পার্ক ও সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্কের কাজ সম্পন্ন হলে প্রতি বছর বাড়তি ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।
(সমাপ্ত)