
সম্পাদকীয়
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচন কমিশনসহ অংশগ্রহণকারী সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যাপক প্রস্তুতি ও কর্মচাঞ্চল্য চলমান সারাদেশে। এর পাশাপাশি চলছে নির্বাচন বর্জন ও বিরোধিতাকারী কয়েকটি দলের হরতাল-অবরোধসহ জ্বালাও-পোড়াওয়ের অপরাজনীতি। এর ফলে প্রায় প্রতিদিন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কোথাও না কোথাও যানবাহন ভাঙচুর, ট্রেনে আগুন, ঝটিকা মিছিল, হামলা, অগ্নিসন্ত্রাস ইত্যাদিও চলছে। যাতে সমূহ ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে জানমাল ও সম্পদের। ইতোমধ্যে অনেক যানবাহন ভাঙচুর এবং আগুন দেওয়ায় অগ্নিদগ্ধদের আর্তনাদসহ স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে বাতাস। এমতাবস্থায় দেশের সচেতন শিল্পীসমাজ ও সংস্কৃতিসেবীরা বসে থাকতে পারেন না।
রবিবার সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে প্রেরিত এক যৌথ বিবৃতিতে অবিলম্বে এসব সংঘাত, অগ্নিসন্ত্রাস, সহিংসতা বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র, যে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা আমলে না নিয়ে চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানের একমাত্র পথ হলো- পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা ও সমঝোতা। যেটি রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের একমাত্র গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়। নির্বাচনবিরোধী দলগুলো সেই কাক্সিক্ষত পথই বেছে নেবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।
নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশী-বিদেশী সব ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ ও সচেতন থাকার আহ্বানও জানানো হয়। এর পাশাপাশি সব রাজনৈতিক দলকে সংবিধান সমুন্নত রেখে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানের উপায় খুঁজে বের করে দেশপ্রেমের পরিচয় দিতে হবে। কেননা, রাজনীতি হলো দেশ ও মানুষের কল্যাণের জন্য।
দেশে সাম্প্রতিককালে সহিংসতা, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মীয় কুসংস্কার, গোঁড়ামি, কূপম-ূকতা সর্বোপরি ধর্মীয় নানা অপব্যাখ্যা ও ফতোয়া দিয়ে দেশবিরোধী অপতৎরতা অনেক বেড়েছে। ফেসবুকে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে নানা অপপ্রচার, ধর্মীয় উগ্রবাদ-মতাদর্শ ও গুজব ছড়িয়ে বিশেষ করে তরুণদের বিভ্রান্ত, সন্ত্রাসবাদে প্রশিক্ষত ও উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। মূলত এরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিরোধী বিএনপি-জামায়াত-হেফাজতের আশ্রয়ে পরিপুষ্ট। বিএনপি-জামায়াতের মদত ও পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাভাই, আনসার আল ইসলাম, হরকাতুল জিহাদ, সর্বশেষ হিন্দাল শারক্বিয়ার মতো উগ্র জঙ্গি সংগঠনের সন্ধানও মিলেছে। অথচ স্বাধীন বাংলাদেশে এমনটি হওয়ার কথা ছিল না।
মনে রাখতে হবে যে, বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতি একটি উৎসবপ্রিয় সংস্কৃতি মনস্ক অসাম্প্রদায়িক জাতি। মূলত গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্মীয় সমতা ইত্যাদির ভিত্তিতে জন্মগ্রহণ করেছে স্বাধীন বাংলাদেশ। যার উত্থান ও অভ্যুদয়ের পেছনে অন্যতম নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে সুমহান ভাষা ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন, ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান, রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত সমৃদ্ধ হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ও ক্ষুদ্রনিগোষ্ঠীসহ সকলের সম্মিলিত ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস ও পারস্পরিক ধর্মীয় শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, সম্প্রীতি ও সংস্কৃতি।
স্বাধীনতাবিরোধী এই অপশক্তি ও অপতৎপরতা সবার সম্মিলিত উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় সর্বশক্তি দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে হাজার বছর ধরে চলমান বাঙালি শিল্প-সংস্কৃতির চেতনায়। চলমান দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র, নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা হিসেবে হরতাল-অবরোধসহ ব্যাপক সহিংসতা প্রতিরোধে বীর বাঙালি জাতি মহান মুক্তিযুদ্ধের মতো ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়াবে বলেই প্রত্যাশা।