
কক্সবাজার বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র। যেখানে প্রতি বছর লাখো পর্যটক সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। তবে এই পর্যটন শিল্পের আড়ালে মাদক ও দেহ ব্যবসার মতো অবৈধ কার্যক্রমও বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত সমস্যার সৃষ্টি করছে। কক্সবাজার মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় এখানে মাদক পাচার একটি গুরুতর সমস্যা। বিশেষ করে ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথের মতো মাদকদ্রব্য মিয়ানমার থেকে সমুদ্র ও স্থলপথে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে র্যাব-১৫ একটি অভিযানে মহেশখালী থেকে ১.৩০ লাখ ইয়াবা ট্যাবলেটসহ চারজন মাদক পাচারকারীকে আটক করে। এছাড়া ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় পৃথক অভিযানে প্রায় ২১ কোটি টাকা মূল্যের মাদকদ্রব্য জব্দ করে, যার মধ্যে ১.৭৯৩ কেজি ক্রিস্টাল মেথও অন্তর্ভুক্ত ছিল। মাদক পাচার রোধে কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনে একটি বিশেষ জোন স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। যেখানে আধুনিক স্ক্যানার ও প্রশিক্ষিত কুকুরের মাধ্যমে মাদক শনাক্ত করা হবে। সম্প্রতি কক্সবাজারে দেহ ব্যবসা একটি উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছেছে, বিশেষ করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে। স্থানীয় দালালরা রোহিঙ্গা নারীদের প্রলোভন দেখিয়ে দেহ ব্যবসায় নিয়োজিত করছে। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল জোনে রোহিঙ্গা যৌনকর্মীদের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এই অঞ্চলে এইচআইভি এবং অন্যান্য যৌনবাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। পাশাপাশি পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কক্সবাজারে এক নারী পর্যটককে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। যা পর্যটন শিল্পের সুনাম ক্ষুণ্ন করেছে এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
মাদক ও দেহ ব্যবসা রোধে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে যথা -মাদক পাচার ও দেহ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। স্থানীয় জনগণ ও পর্যটকদের মধ্যে মাদক ও দেহ ব্যবসার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। মিয়ানমার সীমান্তে নজরদারি বৃদ্ধি করে মাদক পাচার রোধ করতে হবে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে তাদের অবৈধ কার্যক্রম থেকে দূরে রাখা যেতে পারে। কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের সুষ্ঠু বিকাশ ও সামাজিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে মাদক ও দেহ ব্যবসার মতো অবৈধ কার্যক্রম রোধে সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
মো. আবুজর গিফারী
ঢাকা কলেজ
প্যানেল