ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১

এডিবির ঋণ

প্রকাশিত: ২০:২২, ৩০ নভেম্বর ২০২৩

এডিবির ঋণ

সম্পাদকীয়

আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের বিপুল অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির খবরাখবর ছড়িয়ে পড়েছে ইতোমধ্যে। যে কারণে অনেক উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশে বাংলাদেশকে রোলমডেল হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। তবে গত কয়েক বছরে করোনা অতিমারি পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং সর্বশেষ ইসরাইল-হামাস যুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ায় অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দেখা দিয়েছে উচ্চমূল্যস্ফীতিÑ তেল-গ্যাস-কয়লা-বিদ্যুৎসহ জ্বালানি সংকট। যেগুলোর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে জাতীয় অর্থনীতিতে।

এমতাবস্থায় সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক এবং সর্বশেষ এশিয়ান  ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে এডিবি ৫টি বিভিন্নমুখী প্রকল্পে এক বিলিয়নের বেশি ১০৩ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি সম্পাদন করেছে। যেসব প্রকল্পে ঋণ দেওয়া হচ্ছে সেগুলো হলোÑ ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে তিতাস গ্যাসের স্মার্ট মিটারিং, গোপালগঞ্জে এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে ভ্যাকসিন বা টিকা তৈরির কারখানা স্থাপন, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার ও সফটওয়্যার পোগ্রামের উন্নতিকরণ এবং ঢাকা-উত্তর-পশ্চিম আন্তর্জাতিক সড়ক করিডরের আধুনিকীকরণ। এডিবির এ নতুন ঋণ বাংলাদেশের প্রভূত কাজে লাগবে অবশ্যই। ফলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি আরও বেগবান হবে আগামীতে।
বাংলাদেশের সঙ্গে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) সম্পর্ক বরাবরই ভালো এবং উন্নয়ন সহযোগী মনোভাবাপন্ন। এই বিষয়টি উঠে এসেছে চলতি বছরেই প্রথমার্ধে সরকার ও এডিবি আয়োজিত বাংলাদেশ-এডিবির অংশীদারিত্বের ৫০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন, বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে না আসা পর্যন্ত এডিবিসহ অন্যান্য বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং উন্নত দেশগুলোকে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান অব্যাহত রাখতে হবে। এক্ষেত্রে উভয় পক্ষের মধ্যে যুক্তিসম্মত ও গ্রহণযোগ্য সমন্বয় আবশ্যক। 
এ প্রসঙ্গে এডিবির প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তারা বাংলাদেশের সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করতে ইচ্ছুক। আগামী দিনে বাংলাদেশ ও এডিবির অংশীদারিত্ব আরও জোরদার হবে। ২০২৬ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের ফাঁদ এড়াতেও বাংলাদেশের পাশে থাকবে এডিবি। বিশাল অঙ্কের তহবিল দিয়ে সহায়তার প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি এডিবি বাংলাদেশের জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায়ও অর্থায়নের আশ্বাস দিয়েছে, যা ইতিবাচক। 
ইতোমধ্যে বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল। বছরের শেষ নাগাদ এই ঋণের দ্বিতীয় কিস্তিও পাওয়া যাবে, যা রিজার্ভ বাড়াতে সহায়ক হবে। বর্তমানে বিশ্বমন্দার মুখেও বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ আইএমএফ থেকে যে ঋণ সহায়তা পেয়েছে তা তিন ধরনের। এগুলো হলোÑ বর্ধিত ঋণ সহায়তা (ইসিএফ), বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) ও রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ)।

উল্লেখ্য, শেষোক্ত ঋণের অধীনে সাশ্রয়ী ও দীর্ঘমেয়াদি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোকে অর্থায়ন করে থাকে সংস্থাটি। উল্লেখ্য, এক দশক আগে আইএমএফের ইসিএফ থেকে সাত কিস্তিতে এক শ’ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছিল বাংলাদেশ। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইডিবি ও জাইকার কাছেও ঋণ পাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় বাজেট  বাস্তবায়নসহ দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি অব্যাহত রাখার জন্য।

×