
সম্পাদকীয়
দুর্গাপূজার প্রাক্কালে রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা দেশে সাম্প্রদায়িকতা প্রসঙ্গে নানা অভিমত তুলে ধরেন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শারদীয় উৎসবে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস রুখতে সরকারি ও বিরোধী দলগুলোর ঐকমত্য জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক। কয়েক মাস আগেও একই সংগঠন ‘জাতীয় নির্বাচন ২০২৪ : ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু জনগণের অধিকার’ শীর্ষক সভার মাধ্যমে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সহিংসতার শিকার হওয়ার আশঙ্কার বার্তা তুলে ধরেছে।
বলা অসমীচীন হবে যে, বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক চেতনাসম্পন্ন প্রধান দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই সংখ্যালঘুরা বেশি নিরাপদ বোধ করে থাকেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে সংখ্যালঘুদের ওপর পাকিস্তান বাহিনী বর্বরোচিত আক্রমণ চালিয়েছিল। স্বাধীন দেশেও ওই পাকিস্তানপন্থিরাই বারবার দেশের সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তাদের নিজ সংস্কৃতি ললান ও ধর্মপালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। এক প্রশ্নের উত্তরে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ‘দুর্গাপূজায় হামলা সরকার চাইলে ঘটবে না, সরকার না চাইলে ঘটবে’ বলে যে মন্তব্য করেছেন, সেটি কতখানি বিবেচনাপ্রসূত? বর্তমান সরকার সব সময়েই সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিয়ে এসেছে। যদিও সংখ্যালঘু কমিশন গঠন ও সংখ্যালঘুদের জন্য বিশেষ আইন প্রণয়ন- এ দুটি প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন এখনো হয়নি। তার মানে এই নয় যে, দেশে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা প্রদানে বর্তমান সরকারের কোনো কার্পণ্য রয়েছে?
সুনামগঞ্জের শাল্লা থেকে শুরু করে সাঁথিয়া, নাসিরনগর, গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লী, গঙ্গাচড়ার ঠাকুরপাড়া গ্রামসহ যেখানে যখনই সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশাসনকে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উসকানিমূলক তৎপরতা ও ষড়যন্ত্রমূলক দুরভিসন্ধির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। এই সত্যকে অস্বীকার করা যাবে না।
হাজার বছর ধরে নানা জাতি-ধর্মের মানুষ এই ভূখ-ে শান্তিপূর্ণভাবে মিলেমিশে বসবাস করে আসছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এ দেশের সুমহান ঐতিহ্য। বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচিতি মূলত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে। এ দেশের মানুষ নিজ নিজ ধর্মে নিষ্ঠাবান হওয়ায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে তারা অনুকরণীয় আদর্শ বলে বিশ্বাস করে। মানুষ ধার্মিক বলেই ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সহনশীলতার আদর্শ এ দেশে বিদ্যমান। তবে দেশের সিংহভাগ মানুষ ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলেও বকধার্মিক ও কা-জ্ঞানহীনদের কারণে কখনো কখনো দেশের সুনামও ক্ষুণœ হয়। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে ভারত, মিয়ানমার, পাকিস্তানসহ কিছু দেশেও সংখ্যালঘুরা যে নির্যাতন, নিপীড়ন ও হয়রানির শিকার হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সে হিসেবে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিশ্বে অনন্য উদাহরণ বটে।
গুটিকতক দুষ্কৃতকারীর জন্য সম্প্রীতির দেশে কখনোই সম্প্রীতি বিনষ্ট হতে পারে না। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে সাম্প্রদায়িক ও অশুভ শক্তিকে পরাভূত করে এই বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৩৩ বছর পর রক্তস্নাত এ দেশে তাদের কালো ছায়া কোনোভাবেই আমরা দেখতে চাই না। আমাদের প্রত্যাশা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দুর্গোৎসব যাতে নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হতে পারে, সে বিষয়ে প্রশাসন যথাযথ ভূমিকা রাখবে। এক্ষেত্রে দেশের অসাম্প্রদায়িক জনতা বরাবরের মতোই সম্প্রীতির সংস্কৃতি বজায় রাখবেন বলেই প্রত্যাশা।