
সম্পাদকীয়
পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ। তবে সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর নেই কোনো ্দৃশ্যমান উদ্যোগ। দেশকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি বলে আখ্যায়িত করা হয় প্রায়ই। দেশজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অগণিত দর্শনীয় স্থান। সেগুলো স্বাভাবিকভাবেই বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণ করার কথা। সেগুলো পর্যটকদের ভ্রমণ উপযোগী হলে তা জাতীয় অর্থনীতিতে ভালো অবদান রাখতে পারে। কিন্তু বর্তমানে আমাদের পর্যটন এলাকাগুলো কতটুকু পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে আর দর্শনার্থী আকর্ষণে তারা কতটা উপযোগী?
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতটি দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। যেটি সত্যিকার অর্থে দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বিপুল সম্ভাবনাময় খাত। কিন্তু সেটি কতটা অবদান রাখছে? যখন বিদেশী পর্যটক দেশে আসবে দর্শনীয় স্থান ভ্রমণে, তারাও তেমনি আশা করবে একটি সুন্দর ও নিরাপদ পরিবেশ। বাস্তবে স্বপ্ননগরী কক্সবাজারের সরকারি মোটেলগুলো প্রায়ই ফাঁকা পড়ে থাকে। এর ওপর ছাড়পোকা, তেলাপোকা, মশা-মাছির উৎপাতে অতিষ্ঠ অতিথিরা। দেশের অন্যতম দর্শনীয় পর্যটন কেন্দ্রের এমন অবস্থা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিনিয়োগ না থাকায় প্রবৃদ্ধিও কখনোই আশাব্যঞ্জক নয়।
প্রায় ৪৫ লাখ কর্মী থাকলেও এই খাত থেকে জিডিপির মাত্র ১ শতাংশ আসে। এমন অবস্থায় পর্যটন ব্যবস্থার উন্নতি সাধনে আশার সঞ্চার করেছিল পর্যটন মহাপরিকল্পনা। সেগুলোর বাস্তবায়ন হলে বর্তমানের দ্বিগুণ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। জিডিপির ১০ শতাংশ আসবে এ খাত থেকে। কিন্তু মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে দেওয়া হচ্ছে না কোনো গুরুত্ব। পর্যটন শিল্প বিকাশে মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু হয়েছিল ২০২০ সালে। সমগ্র পরিকল্পনাটি ১৮ মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রায় তিন বছর চললেও এর উন্নতি বা বাস্তবায়নের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
পরিকল্পনাটি প্রণয়নের কাজ করছে একটি বিদেশী সংস্থা আইপিই গ্লোবাল। তাদের ভাষ্য হচ্ছে, পর্যটন শিল্পের জন্য বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ দরকার। পাশাপাশি অবকাঠামোসহ উন্নত যোগাযোগ ও সেবা দরকার। যা বাংলাদেশে নেই। সেক্ষেত্রে এসব বিষয় পর্যটন মহাপরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত করা হবে। চারটি ধাপে এটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করছে সংস্থাটি। তবে তা সফল করা তখনই সম্ভব হবে যখন সেগুলো বাস্তবায়নে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
যেসব সরকারি সংস্থা পর্যটনকে উন্নতকরণের কাজ করছে, তাদের পর্যটকদের জন্য মানসম্মত থাকার জায়গা, রুচি অনুযায়ী খাবারের ব্যবস্থা এবং সর্বাগ্রে তাদের কাছে পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে আকর্ষণীয় ও নিরাপদ করে তুলে ধরতে হবে। পর্যটন বিকাশের জন্য পূর্বশর্ত হলো নিরাপত্তা। সেখানে দেশের প্রধান পর্যটনস্থল কক্সবাজারে ২২৫০ জন পর্যটকের নিরাপত্তার জন্য মাত্র একজন পুলিশ নির্ধারিত। পর্যটন ব্যবস্থার উন্নতি সাধনে এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। পৃথিবীর প্রায় সব দেশে পর্যটন এখন অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত। সেখানে বাংলাদেশে প্রকৃতি আশীর্বাদস্বরূপ সৌন্দর্য দিয়েছে এবং আমাদের রয়েছে পর্যটন শিল্প বিকাশের অবারিত সুযোগ। সুতরাং সরকারের উচিত সেই সুযোগ কাজে লাগানো এবং পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরা।