ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৬ অগ্রাহায়ণ ১৪৩০

সন্তানকে বাধ্য করা চাই

রাখাল চন্দ্র মিত্র

প্রকাশিত: ২০:৫৯, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সন্তানকে বাধ্য করা চাই

শাস্ত্র বলছে: সন্তানের কাছে পিতাই স্বর্গ, পিতাই ধর্ম, পিতাই পরম তপস্যা

শাস্ত্র বলছে: সন্তানের কাছে পিতাই স্বর্গ, পিতাই ধর্ম, পিতাই পরম তপস্যা। পিতার সন্তোষে দেবতা তুষ্ট হন। অন্যদিকে মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত। মাতার সমান গুরু কেউ নাই। মানুষ ¯্রষ্টার সৃষ্ট জীব। নয় মাস দশ দিন ক্লেশপূর্ণ গর্ভ ধারণ ও গর্ভবাস অন্তে মানব প্রজাতির জন্ম। জন্মের পরপরই ঈশ্বরের অপার মহিমা ও প্রকৃতির অকৃপণ দানে ধন্য হয়ে মাতৃ স্তন্য পান করে মানব শিশুটির প্রাণ ও অস্তিত্ত ধারণের সূচনা। মা ও শিশুর সহ অস্তিত্ব ও সহযাত্রা এমনই অচ্ছেদ্য ও অবিভাজ্য যে প্রসবের সময় মায়ের নাড়ির সঙ্গে সন্তানের নাড়ি অবিচ্ছিন্ন থাকে। পরবর্তীকালে বিজ্ঞানসম্মতভাবে মায়ের নাড়ি কেটে সন্তানকে আলাদা করা হয়।

ঈশ্বরের কৃপা ও মহিমায় জন্মের আগেই মায়ের বুকে সন্তানের খাদ্যের সংস্থান করা থাকে। কারণ রিজিকের মালিক তো তিনিই। দীর্ঘ প্রসব বেদনা সহ্য করার পর সন্তান ভুমিষ্ট হলে তার কান্না-হাসির মুখ দেখে মা সানন্দে বিগলিত হয়ে ঈশ্বরের অশেষ ও অপ্রমেয় করুণার প্রতি সবিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ধন্য ও গর্বিত হতে চান। নিমিষে ভুলে যান প্রসব যন্ত্রণা। সন্তানের মৃদু হাসিমুখে দেখতে পান পূর্ণিমার চাঁদের আলো-হাসির বাঁধ ভাঙা জোয়ার। শিশুর কলকল খলখল কোমল তানে মায়ের কাছে সংসারকে মনে হয় চাঁদের হাট। স্তন্য দান, সুখে অসুখে পরিচর্যা, মল মুত্র পরিস্কার করা, রোগে পথ্য ও সেবা, নিজে ভেজা বিছানায় থেকে সন্তানকে শুকনো যায়গায় রাখা, সারা রাত রুগ্ণ শিশুর শিয়রে নির্ঘুম বসে থেকেও মায়ের ন্যূনতম কোন ক্লান্তি বোধ হয় না। এই হলেন ‘মা’।

মায়ের কাছ থেকেই আমরা ‘মা’ বোল শিখি। ‘মা’ ই আমাদের প্রথম শিক্ষাগুরু।  অন্যদিকে পিতা উদয়াস্ত খেটে, শ্রম-ঘাম ঝরিয়ে সকল আরাম আয়েশ হারাম করে সন্তানের লালন পালন করে থাকেন। সন্তানের কোন আবদারই অপূর্ণ রাখেন না। সন্তানের মধ্যেই পিতামাতা নিজেদের অস্তিত্ব অনুভব করতে চান। 
সমাজ আধুনিক হয়েছে, মানুষ কী সে মাপে আধুনিক হতে পেরেছে? মুখস্ত বিদ্যায় তথাকথিত শিক্ষিত হয়ে দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দিয়ে অর্থ কামাই করে কেউ চিত্তহীন বিত্তবান হচ্ছেন আর মনুষ্যত্বের অবমাননা করছেন। আর কেউ দেশের সম্পদ, ব্যাংক লুটের টাকা বিদেশে পাচারের মাধ্যমে বেগমপাড়া, সেকেন্ডহোম গড়ছেন। দেশে বৃদ্ধ অসুস্থ পিতা-মাতাকে নিজেদের দায়িত্বে ভরণ পোষণ না দিয়ে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাচ্ছেন। মধ্যবিত্ত, গরিবদের অবস্থা আরো শোচনীয়। আর্থিক অসচ্ছলতার অজুহাতে বৃদ্ধ পিতা-মাতার ভরণ পোষণ তো দিচ্ছেনই না বরং ক্ষেত্র বিশেষে সত্তরোর্ধ অসুস্থ মা-বাবাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়েও দিচ্ছেন।

মাঝে মধ্যে খবর হয় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে রাতের অন্ধকারে সড়কের পাশে, রেল লাইনের ধারে ফেলে রাখা হচ্ছে। এই কয়েকদিন আগের একটি খবরে প্রকাশ যে সম্পত্তি বা ফ্লাট বাড়ি লিখে না দেয়ার কারণে স্ত্রী, পুত্র,কন্যা, পুত্রবধু মিলে হাসান নামের এক ভদ্রলোককে খুন করে আট টুকরো করে মস্তক বিচ্ছিন্ন করে বস্তায় ভরে ফেলে রেখেছে। যে পিতা-মাতা সবকিছু উজাড় করে বিলিয়ে দিয়ে আমাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন, আমাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করার লক্ষ্যে নিজেদের বর্তমানকে বিসর্জন দিয়েছেন, তাদের প্রতি এরূপ অমানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও অন্যায্য আচরণ গ্রহণ যোগ্য হবার নয়। এই কী সভ্যতার পরিচয়?  
জিগাতলা, ঢাকা থেকে