
.
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন বর্তমানে রাশিয়া আদি ও অকৃত্রিম বন্ধু। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পরাশক্তিও বটে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের পরেই মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়ার অবদান রয়েছে। এবার সে দেশের বাজারে রুবলে লেনদেন তথা ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুমোদন পেয়েছে বাংলাদেশ, যাকে বর্তমানে ডলার সংকট ও উচ্চমূল্যের কারণে ইতিবাচক বলা চলে অবশ্যই। সম্প্রতি রাশিয়া ‘বন্ধু ও নিরপেক্ষ’ দেশের যে তালিকা অনুমোদন করেছে, তাতে ৩১টি দেশের মধ্যে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ।
ঢাকাস্থ রাশিয়ার দূতাবাসও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। অবশ্য দুই দেশের মধ্যে রুবলে ব্যবসা-বাণিজ্য করা নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে দীর্ঘদিন থেকেই। অবশেষে রাশিয়া তাতে অনুমোদন দিয়েছে। ফলে, বাংলাদেশের ব্যাংক ও ব্রোকার হাউসগুলো সে দেশের মুদ্রা বাজারে লেনদেন তথা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে। তবে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান রাশিয়ান মুদ্রা রুবলে লেনদেন করতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তা অনুমোদন দিতে পারে। রাশিয়ার সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি করতে চাইলে রুবলে নস্ট্রো হিসাব খোলার অনুমতি নিতে হবে। এরপর কেস-টু কেস ভিত্তিতে অনুমোদন পাওয়া যাবে।
বর্তমানে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল-গ্যাসের দাম খুব চড়া। গম-ভুট্টাসহ কিছু নিত্যপণ্যের দামও ঊর্ধ্বমুখী। রুবলে লেনদেন তথা ব্যবসা-বাণিজ্য চালু হলে বাংলাদেশ এসব পণ্য সুলভ মূল্যে আমদানি করতে পারবে রাশিয়া থেকে। বিনিময়ে রাশিয়ায় পাটজাত পণ্য, তৈরি পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শাকসবজি রপ্তানির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে, মার্কিন ডলারের ওপর চাপ কমতে পারে বহুলাংশে। সৃষ্টি হতে পারে নতুন বাজার। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা উদ্যোগ এবং বহুমুখী প্রচেষ্টা সত্ত্বেও মার্কিন ডলারের বিনিময়ে টাকার মান নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না কিছুতেই। এর ফলে ইতোমধ্যেই আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পাশাপাশি প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্সও কমেছে। জাতীয় অর্থনৈতিক গতিপ্রকৃতি ধরে রাখার জন্য এটি একটি অশনিসংকেত। গত কয়েক মাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে বিপুল পরিমাণে। এ বাস্তবতায় আন্তর্জাতিক লেনদেন তথা আমদানি-রপ্তানিসহ বৈদেশিক বাণিজ্য বাড়াতে ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার জন্য বিকল্প মুদ্রা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে বাংলাদেশকেও। সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই চিঠি দিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বিকল্প মুদ্রা হিসাবে পাউন্ড, ইউরো, ইউয়ান, রুবলে, ভারতীয় রুপি এমনকি রিয়াল, দিরহামকে নিয়ে অগ্রসর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে চীনা মুদ্রা ইউয়ানে এলসি খোলার অনুমতি দিয়েছে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে। অনুরূপ প্রস্তাব দিয়েছে ভারত রুপিতে লেনদেন এবং রাশিয়ায় রুবলের মাধ্যমে বাণিজ্য করার জন্য। এসব মুদ্রা ব্যবহারকে বিনিময় চুক্তি বা কারেন্সি সোয়াব বলা হয়ে থাকে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিকল্প মুদ্রায় লেনদেনে তেমন বাধা নেই। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে ডলার সঙ্কুলানই বড় কথা। ভারত, চীন, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, মধ্যপ্রাচ্যসহ অনেক দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে সুসম্পর্ক ও বিপুল ব্যবসা-বাণিজ্য। সেক্ষেত্রে আন্তঃদেশীয় মুদ্রায় পারস্পরিক লেনদেন হলে দুই দেশই লাভবান হবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে। চাপ কমবে মার্কিন ডলারের ওপর।