ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভয়ংকর সিসা দূষণ

প্রকাশিত: ২০:৪৯, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ভয়ংকর সিসা দূষণ

সম্পাদকীয়

সিসা দূষণের কারণে বিশ্বের ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। সিসা একটি রাসায়নিক পদার্থ। ব্যাটারি ভাঙ্গা শিল্প, সিসাযুক্ত পেইন্ট, অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি পাতিল, খাবার রাখার জন্য ব্যবহৃত সিরামিকের পাত্র, ই-বর্জ্য, খেলনা, সার, রান্নায় ব্যবহৃত বিভিন্ন মসলা, প্রসাধনী, খাবার-দাবার, চাষ করা মাছের জন্য তৈরি খাবার এগুলোই মূলত বাংলাদেশে সিসা দূষণের উৎস। প্রধানত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য হৃদরোগের ঝুঁকি আশঙ্কাজনকভাবে বাড়িয়ে দেয় সিসা দূষণ।
বাংলাদেশের সিসা দূষণ নিয়ে চিকিৎসা সাময়িকী ‘দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটরি হেলথ জার্নাল’ একটি প্রতিবেদন করেছে। তাদের গবেষণা অনুযায়ী সিসা দূষণের ফলে বাংলাদেশে প্রতিবছর হৃদরোগে আক্রান্ত ১ লাখ ৩৮ হাজারের বেশি মানুষ অকালে মারা যাচ্ছে। একই কারণে দেশটিতে শিশুদের আইকিউ কমে যাচ্ছে। আইকিউ কমে যাওয়ার ফলে বাচ্চাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে এবং শিশুদের প্রতিবন্ধী হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। শুধু মানুষের শারীরিক ক্ষতির মধ্যে সিসা সীমাবদ্ধ নয়। এর আর্থিক ক্ষতিও অনেক। যার পরিমাণ প্রায় ২৮ হাজার ৬৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা দেশটির ২০১৯ সালের মোট জিডিপির প্রায় ৬ থেকে ৯ শতাংশ।

শিশুদের ক্ষতির মাত্রা গবেষণা করে দেখা গেছে যে, সিসার উপস্থিতি তাদের শারীরিক ও মানসিক বুদ্ধি ও বিকাশ বাধাগ্রস্ত করছে। শূন্য থেকে চার বছর বয়সী শিশু প্রায়  দুই কোটি আইকিউ পয়েন্টস হারাচ্ছে। এর প্রভাব খাবারে অরুচি, ওজন কমে যাওয়া, খিটখিটে মেজাজ দেখা যাচ্ছে শিশুদের মধ্যে। শিশুদের বিকাশে এমন নেতিবাচক প্রভাব সার্বিক উন্নয়নকেও বাধাগ্রস্ত করছে। 
সিসা দূষণের ফলে দেশে বছরে ২৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সী প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। সতর্ক ও সচেতন না হলে এর পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকবে। সকল স্তরের মানুষের মধ্যে এই সম্পর্কিত সচেতনতা বাড়াতে হবে। এর কুফল সম্পর্কে জানাতে হবে। সিসামিশ্রিত রং বা লেড পেইন্টের ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি থালাবাসন, তৈজসপত্র ব্যবহার না করে মাটি এবং সংকর ধাতুর তৈরি জিনিসপত্রের ব্যবহার বাড়াতে হবে। বাজারে যেসব মসলা পাওয়া যায়, তার বেশিরভাগ মসলায় লেড ক্রোমেট পাওয়া যায়।

মসলায় মানহীন এসব উপাদান ব্যবহার না করে স্বাস্থ্যসম্মত উপাদান  ব্যবহার করতে হবে। লেড এসিড ব্যাটারির পুনর্ব্যবহার বা রিসাইকেল করতে হবে পরিবেশসম্মত উপায়ে। তাতে সিসার ক্ষতিকর প্রসার কমে আসবে। এজন্য যথাযথভাবে আইনের প্রয়োগ, নিয়মিত মনিটরিংসহ সবচেয়ে বেশি যা প্রয়োজন, তা হলো জনসচেনতা। তাহলেই সম্ভব হবে সিসা দূষণের ফলে হৃদরোগ এবং শিশুদের বুদ্ধিবৃত্তিক ঝুঁকির কবল থেকে বাঁচানো।

×