ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উপমহাদেশে বাংলাদেশের অবস্থান

ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)

প্রকাশিত: ২১:৩০, ৮ জুন ২০২৩

উপমহাদেশে বাংলাদেশের অবস্থান

লন্ডনে ব্যারিস্টারি পড়ার সময় জিন্নাহর সঙ্গে গান্ধীর সম্ভবত দু-একবারের বেশি সাক্ষাৎ হয়নি

লন্ডনে ব্যারিস্টারি পড়ার সময় জিন্নাহর সঙ্গে গান্ধীর সম্ভবত দু-একবারের বেশি সাক্ষাৎ হয়নি। রাজনীতির মাঠে তাদের প্রথম সাক্ষাৎ গান্ধী ভারতে ফিরে আসার পর তার সম্মানে মুম্বাইয়ে গুজরাটি সম্প্রদায় আয়োজিত একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে, যেখানে  জিন্নাহ সভাপতিত্ব করেছিলেন। জিন্নাহ স্বভাবসুলভভাবে ইংরেজিতে বক্তৃতা করতে আরম্ভ করলে গান্ধী তাতে আপত্তি জানান। তিনি জিন্নাহকে হিন্দি বা গুজরাটিতে বক্তৃতা করতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। জিন্নাহ অবশ্য ইংরেজিতেই বক্তৃতা শেষ করেছিলেন। ধারণা করা হয়, প্রথম এই রাজনৈতিক সাক্ষাতেই, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গান্ধী এবং জিন্নাহর রাজনৈতিক বিচ্ছেদ হয়ে যায়, যা পরবর্তীতে ভারতের বিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়িয়েছিল

রাম মাধব ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এবং প্রভাবশালী নীতি-নির্ধারক। তিনি মূলত রাজনীতিবিদ। নিয়মিত লেখালেখি করেন এবং ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের গভর্নিং বডিরও অন্যতম সদস্য। ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের উদ্যোগেই কদিন আগে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ইন্ডিয়ান ওশান রিম কনফারেন্স। রাম মাধবের সর্বশেষ প্রকাশিত বইটির নাম ‘পার্টিশন্ড ফ্রিডম’। বইটির মোড়ক সম্প্রতি উন্মোচন করা হয়েছে ভারতের অসম রাজ্যের রাজধানী গৌহাটির একটি অভিজাত হোটেলে। প্রধান অতিথি ছিলেন অসমের গভর্নর  গোলাব চান্দ কাটারিয়া।

বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলেন গৌহাটির সমাজের বিশিষ্ট কিছু মানুষ। এমন একটি ইভেন্টে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগদানের আমন্ত্রণ পেয়ে  যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তটা নিতে দেরি হয়নি এক মিনিটও। এর প্রধান কারণ অবশ্য অনুষ্ঠানটির প্রোফাইল যতটা না তার চেয়েও ঢের বেশি বিজেপির অন্যতম থিংক ট্যাংক রাম মাধবের নিজের মুখে ভারত ভাগ আর অখণ্ড ভারতের মতো জটিল বিষয়গুলো সম্পর্কে যাকে বলে ‘হর্সেস মাউথ’ থেকে সরাসরি জানার বিরল সুযোগ হাতছাড়া না করা। 
’৪৭-এ ভারত ভাগের আগেও ১৯০৫-এ ভারতকে আরেকবার ভাঙ্গার চেষ্টা করা হয়েছিল। সেবার অবশ্য পুরো ভারত নয়, বরং আজকের বাংলাদেশ আর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ওড়িশা আর ঝারখ- রাজ্যগুলো নিয়ে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার তৎকালীন বৃহত্তম বাংলা প্রদেশটিকে ‘দ্বিজাতিতত্ত্ব’ অর্থাৎ হিন্দু-মুসলিম ধর্মীয় বিভাজনের ভিত্তিতে বিভক্ত করা হয়েছিল। ব্রিটিশ রাজ বাংলাকে বিভক্ত করার এই সিদ্ধান্তটি যখন সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছেন, তখন পরবর্তীতে  বাংলার গভর্নর লর্ড কার্জন লন্ডনে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, ‘অনলি দ্য বেঙ্গলিজ উইল ক্রাই’।

অর্থাৎ বাংলাকে ভাঙ্গা হলে তাতে শুধু বাঙালিরাই নীরবে চোখের পানি ফেলবে, বাদবাকি ভূ-ভারত এসব নিয়ে মাথাও ঘামাবে না। লর্ড কার্জনের ধারণা অবশ্য পুরোপুরি ভুল ছিল। সেদিন বাঙালি শুধু কাঁদেইনি, বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে গড়ে তুলেছিল শক্তিশালী ‘বন্দে মাতরম’ আন্দোলন। আর সেই আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন তাবৎ ভারতের জনগণ। সে আন্দোলন এমনই জোরালো হয়ে উঠেছিল যে, মাত্র ছয় বছরের মাথায় পরম পরাক্রমশালী ব্রিটিশ রাজা পঞ্চম জর্জ নিজে ভারতে হাজির হয়ে বঙ্গভঙ্গ রদের ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি...’, যা আজ স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত।
প্রশ্ন হচ্ছে, সেদিন যদি একটি রাজ্যের বিভক্তির বিরুদ্ধে গোটা ভারত রুখে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে, তাহলে এর ঠিক পঁয়ত্রিশ বছর পর ভারতীয় মানচিত্রটি যখন ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করা হলো, তখন কেন ভারত নিশ্চুপ? একটু পেছন ফিরে তাকালে দেখা যাবে এই সময়টায় অর্থাৎ বঙ্গভঙ্গ রদের পরপর পরাধীন ভারতের রাজনীতিতে নতুন দুজন নেতার অবির্ভাব হয়েছিল- যাদের নেতৃত্বেই পরবর্তীতে ভারতের খ-িত স্বাধীনতা। তাদের একজন মোহনচাঁদ করমচাঁদ গান্ধী আর অন্যজন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, যথাক্রমে ভারত ও পাকিস্তানের জাতির পিতা। গান্ধী ও জিন্নাহর মধ্যে বেশ কিছু মিল ছিল।

তারা দুজনই ভারতের আজকের গুজরাটের বাসিন্দা, দুজনই ব্রিটেন থেকে ব্যারিস্টারি পাস করে প্রায় কাছাকাছি সময় ভারতে ফিরে আসেন। জিন্নাহর রাজনীতিতে এন্ট্রি গান্ধীর আগে। সক্রিয় ছিলেন কংগ্রেসের রাজনীতিতে। এতটাই সক্রিয় ছিলেন যে, ঢাকার আহসান মঞ্জিলে যখন মুসলিম লীগ গঠিত হচ্ছে, তখন মুম্বাইয়ে কংগ্রেসের মিটিংয়ে দাঁড়িয়ে জিন্নাহ প্রশ্ন করেছিলেন, ‘তোমরা কারা? তোমাদের মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার কে দিয়েছে? আমি কংগ্রেসে আছি, কংগ্রেসেই থাকব।’ অথচ মাত্র তিন দশকের ব্যবধানে এই জিন্নাহরই এমন মেটামরফোসিস হয়েছিল যে, ভারত যখন বিভক্তির দ্বারপ্রান্তে, তখন উত্তর প্রদেশের দরিদ্র মুসলিম জনগোষ্ঠীর নেতারা জিন্নাহর কাছে বিভক্ত ভারতে তাদের পরিণতি সম্বন্ধে জানতে চাইলে জিন্নাহর সাফ জবাব ছিল, বেশিরভাগ মুসলমানদের জন্য তাদের আত্মত্যাগ করতে হবে। 
লন্ডনে ব্যারিস্টারি পড়ার সময় জিন্নাহর সঙ্গে গান্ধীর সম্ভবত দু-একবারের বেশি সাক্ষাৎ হয়নি। রাজনীতির মাঠে তাদের প্রথম সাক্ষাৎ গান্ধী ভারতে ফিরে আসার পর তার সম্মানে মুম্বাইয়ে গুজরাটি সম্প্রদায় আয়োজিত একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে, যেখানে  জিন্নাহ সভাপতিত্ব করেছিলেন। জিন্নাহ স্বভাবসুলভভাবে ইংরেজিতে বক্তৃতা করতে আরম্ভ করলে গান্ধী তাতে আপত্তি জানান। তিনি জিন্নাহকে হিন্দি বা গুজরাটিতে বক্তৃতা করতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। জিন্নাহ অবশ্য ইংরেজিতেই বক্তৃতা শেষ করেছিলেন। ধারণা করা হয়, প্রথম এই রাজনৈতিক সাক্ষাতেই, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গান্ধী এবং জিন্নাহর রাজনৈতিক বিচ্ছেদ হয়ে যায়, যা পরবর্তীতে ভারতের বিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়িয়েছিল।

ভারত যখন স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে তখন কংগ্রেসের প্রথম প্রায়োরিটি ছিল হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি। অন্যদিকে জিন্নাহ ততদিনে মুসলিম লীগের নেতা বনে বসেছেন। যে কোনো মূল্যে মূলত পাঞ্জাব আর সিন্ধের উচ্চবংশীয়, সভ্রান্ত মুসলমানদের নিয়ে একটি স্বাধীন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠাই তখন তার ধ্যান-জ্ঞান। আরও যা লক্ষণীয় তা হলো, এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে জিন্নাহর মূল শক্তিই ছিল বাংলা আর পাঞ্জাব প্রদেশের ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ। এর মধ্যে আবার বাংলাতেই মুসলিম লীগের ব্যাপক জনভিত্তি ছিল। অন্যদিকে পাঞ্জাবে মুসলিম লীগ টিকে ছিল মূলত উচ্চ শ্রেণির মুসলমানদের পৃষ্ঠপোষকতায়। 
বাংলায় মুসলিম লীগের ক্ষমতায় আসার প্রেক্ষাপটটিও বেশ চমকপ্রদ। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের পর গান্ধী এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের প্রতি আস্থা হারিয়েছিলেন শেরে বাংলার সঙ্গে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু আর বিশেষ করে নেতাজীর বড় ভাই শরৎচন্দ্র বসুর সখ্যের কারণে। বাধ্য হয়েই এ সময় শেরে বাংলার কৃষক প্রজা পার্টির ঐক্য হয় মুসলিম লীগের সঙ্গে। সে সময় বাংলাতেও মুসলিম লীগ ছিল মূলত ধনী মুসলমানদের পৃষ্ঠপোষকতাধীন একটি সংগঠন। বাংলার আপামর জনগণের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ছিল সামান্যই। কিন্তু কৃষক প্রজা পার্টির সঙ্গে তাদের ঐক্যের সুযোগে তারা আপামর বাঙালির রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। অবশ্য শেরে বাংলা কিংবা বাংলার সে সময়কার নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী; কেউই ভারত ভাগের পক্ষে ছিলেন না।

কিন্তু ততদিনে ব্রিটিশদের ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’,  জিন্নাহর রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ আর এককশ্রেণির হিন্দু ও মুসলিম বুদ্ধিজীবীর প্ররোচনায় ভারত ভাগের আন্দোলন পূর্ণ মোমেন্টাম পেয়ে গেছে। ভারতের বিবেক তখন স্তব্ধ, রুদ্ধ। শেরে বাংলা আর সোহরাওয়ার্দীর কথা শোনার জন্য তখন আগ্রহী মানুষের সংখ্যা ক্রমেই কমে আসছিল। শেরে বাংলা তো রাজনীতি থেকে এক ধরনের অবসরেই চলে গিয়েছিলেন, সোহরাওয়ার্দী শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছেন হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা থামানোর। সোহরাওয়ার্দীর নির্দেশে তরুণ বঙ্গবন্ধু বিহার সীমান্তে গিয়ে ক্যাম্প পর্যন্ত স্থাপন করেছিলেন, যাতে বিহার থেকে বাস্তুচ্যুত মুসলমানরা বাংলায় এসে মাথা গোজার নিরাপদ ঠাঁই পায়।

গান্ধী কিছুদিন চেষ্টা করেছেন এই  স্রোতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে, কিন্তু তারপর তিনিও এক সময় অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করেছেন। যে গান্ধী এক সময় বলতেন, ‘হিন্দু-মুসলিম ইউনিটি ফার্স্ট, ফ্রিডম ক্যান ওয়েইট’; তিনিই পরে, ‘ফ্রিডম কান্ট ওয়েইট, ইউনিটি ক্যান ওয়েইট’ ডকট্রিনে বিশ্বাস করতে শুরু করেন। 
‘পার্টিশন্ড ফ্রিডমের’ মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে শ্রী রাম মাধব নিজের লেখা বইটি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ভারতের স্বাধীনতার সেই ভিন্ন প্রেক্ষাপটটিই তুলে আনলেন। ’৪৭-এর ১৫ আগস্ট আধুনিক ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে গর্বের দিন। কারণ, এই দিনটিতেই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন মুক্ত হয়ে স্বাধীন ভারতের যাত্রা শুরু। তবে এর আগের দিনটি সম্ভবত আধুনিক ভারতের ইতিহাসে সব চেয়ে বেদনার, কলঙ্কের আর হতাশার। কারণ, এই দিনটিতেই অর্বাচীন এক দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতকে বিভক্ত করে সৃষ্টি হয়েছিল পাকিস্তানের।

আজ এই উপমহাদেশে ছয় শতাংশ প্লাস প্রবৃদ্ধির বাংলাদেশ এবং ভারতের প্রতিবেশী হিসেবে দশমিক পাঁচ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পাকিস্তানের অর্থনীতিই সাক্ষ্য দেয় রাষ্ট্র হিসেবে দেশটি কতটা অকার্যকর! আর পাকিস্তান সৃষ্টির মাত্র ২৪ বছরের মাথায় দেশটি ভেঙে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন ‘জাতি রাষ্ট্রটির’ অভ্যুদয়ই পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির সৃষ্টির মূল ডকট্রিন দ্বিজাতিতত্ত্বের অসারতার সবচাইতে বড় প্রমাণ। রাম মাধব তার বক্তব্যে ‘অখ- ভারতের’ প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেছিলেন, ভারতীয় উপমহাদেশের পরিবর্তিত এই রাজনৈতিক মানচিত্র আজকের বাস্তবতা। আর কোনো বাস্তবতাতেই আমাদের পক্ষে ’৪৭ পূর্ববর্তী অবিভক্ত ভারতের মানচিত্রটাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।

এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই ভারতীয় উপমহাদেশের বাসিন্দা হিসেবে আমাদের লক্ষ্য হতে হবে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে নিজেদের বিশ^ মানচিত্রে সেই জায়গায় তুলে নিয়ে যাওয়া, যে জায়গায় একদিন অবিভক্ত উপমহাদেশ ছিল। যার ওপর দাঁড়িয়ে মোদি সরকারের পলিসি এখন ‘নেইবার ফার্স্ট’ অর্থাৎ প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক আর সহযোগিতা সর্বাগ্রে। অথচ এই জায়গাটাতেও সবচেয়ে বড় বাধা আর বলাই বাহুল্য কি পারস্পরিক সহযোগিতা, কি আঞ্চলিক নিরাপত্তা, সব ক্ষেত্রেই একমাত্র বাধাই হচ্ছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের যে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ তা মনে করিয়ে দেয় সেই জোকটির কথা, ‘পৃথিবীর সব দেশের একটা করে সেনাবাহিনী আছে, আর শুধু পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর জন্য একটি দেশ আছে।’ 
ভারতের পার্টিশন্ড ফ্রিডম-এর প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান নামক তিনটি স্বাধীন রাষ্ট্র যেমন একটি বাস্তবতা, তেমনি এই পার্টিশন্ড ফ্রিডম থেকে আমাদের অনেক শিক্ষণীয় বিষয়ও আছে। গান্ধী যদি সেদিন জিন্নাহর অন্যায় আবদারের কাছে নতি শিকার না করতেন, যদি ধর্মান্ধতার সামনে সেদিন ভারতীয় বিবেকের অসহায় আত্মসমর্পণ না ঘটত কিংবা সেদিন যদি কংগ্রেস নেতৃত্ব আরেকটু উদার হয়ে আস্থায় নিতেন স্বাধীনচেতা, অসাম্প্রদায়িক বাঙ্গালির প্রতিনিধিত্বশীল কৃষক প্রজা পার্টিকে, তাহলে হয়ত অবিভক্ত ভারতের ইতিহাস অন্যরকম হতে পারত।

অতএব, পার্টিশন্ড ফ্রিডমের একটি বড় শিক্ষা হচ্ছে-পরিবেশ-পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, যত ত্যাগেরই প্রয়োজন পড়ুক না কেন, বিচ্ছিন্নতাবাদী, সন্ত্রাসী শক্তির সঙ্গে কখনোই আপোস নয়। ইতিহাসের মোড়ে মোড়ে জিন্নাহরা বারবার আসবেন, কিন্তু  তাদের সঙ্গে যদি আপোস করা না হয় তাতে বাংলাদেশ ও ভারতের মঙ্গল। আর অমঙ্গল পাকিস্তানের। এটাই উপমহাদেশের বাস্তবতা আর পার্টিশন্ড ফ্রিডমের শিক্ষা। 

লেখক : অধ্যাপক, ডিভিশন প্রধান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয় ও 
সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ

×