ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

ওষুধের দাম

-

প্রকাশিত: ২১:০৬, ৩০ মে ২০২৩

ওষুধের দাম

সম্পাদকীয়

দৈনন্দিন জীবন যাপনের জন্য অপরিহার্য নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ওষুধের দাম। ইতোমধ্যে দেশের শীর্ষ ৬টি ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি ২৩৪টি ওষুধের দাম বাড়িয়েছে ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। আরও ১০টি কোম্পানি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে দাম বাড়ানোর আবেদনপত্র জমা দিয়েছে। কোনো কোনো কোম্পানি এমনকি দাম না বাড়ালে উৎপাদন বন্ধেরও হুমকি দিয়েছে। দাম বাড়ানোর অজুহাত হিসেবে কোম্পানিগুলো বলেছে, করোনা অতিমারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, ডলার সংকট, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোসহ সরবরাহ সমস্যা, মোড়ক, পরিবহন, বিপণন ব্যয় বৃদ্ধি ইত্যাদি। দেশে ২১৯টি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের মধ্যে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ১১৭টি ওষুধের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দেয়।

বাকিগুলোর দাম নিজেদের মতো করে বাড়িয়ে থাকে কোম্পানিগুলো। অন্যদিকে ক্যাব বলছে, ওষুধের গুণগত মান না বাড়িয়ে কোম্পানিগুলো যথেচ্ছ দাম বাড়াচ্ছে সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে। এর পরিবর্তে চিকিৎসক এবং ফার্মেসিগুলোকে কমিশন বাণিজ্য বন্ধ করে ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর বলছে, বিশ্ব বাজারের সঙ্গে সমম্বয় করে ১৫-২০ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়ে থাকে ওষুধের। বাস্তবে দাম আরও বেশি। উল্লেখ্য, সরকারি স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মতে, দেশে একজন মানুষের চিকিৎসা ব্যয়ের মোট ৬৪ শতাংশ ব্যয় হয় ওষুধে। ফলে, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির এই দুঃসময়ে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ সহজেই অনুমেয়, বিশেষ করে করোনা ও ডেঙ্গুর সংক্রমণ যখন বাড়ছে। 
করোনা অতিমারির ক্রান্তিকালে একদিকে যেমন প্রায় সব রকম ওষুধের চাহিদা ও দাম বেড়েছে, অন্যদিকে এই সুযোগে নকল ও ভেজাল ওষুধে সয়লাব হয়েছে বাজারÑ ওষুধের দোকান ও ফার্মেসিগুলোতে। নকল ও ভেজাল ওষুধ তৈরির কুচক্রটি মূলত দেশের সর্ববৃহৎ ওষুধের মার্কেট বলে পরিচিত মিটফোর্ডকেন্দ্রিক। নকল ও ভেজাল ওষুধ সেবনে অসুখ-বিসুখ তো সারেই না, উপরন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফুসফুস, হৃদযন্ত্র, লিভার, কিডনি, চোখ ও ত্বক। ইতোমধ্যে হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে নকল ও ভেজাল ওষুধ প্রস্তুত এবং বাজারজাতকরণের অপরাধে ২৮টি কোম্পানিকে নিষিদ্ধ করেছে। তার পরও দেখা যাচ্ছে যে, নকল ও ভেজাল ওষুধ তৈরির দৌরাত্ম্য কমেনি একটুও।

সে অবস্থায় এসব কোম্পানির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ সময়ের অনিবার্য দাবি। 
বাংলাদেশ উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে যে কয়েকটি খাত নিয়ে গর্ববোধ করতে পারে ওষুধশিল্প তার মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রায় ৯৮ শতাংশ ওষুধ উৎপাদিত হয় দেশেই। বিশ্বের কয়েকটি দেশে বাংলাদেশে উৎপাদিত ওষুধ রফতানিও হচ্ছে। ওষুধ একটি স্পর্শকাতর বিষয়। মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্নটি এর সঙ্গে জড়িত ওতপ্রোতভাবে। পাশাপাশি খাদ্য ও পথ্যের বিষয়টিও প্রসঙ্গত উঠতে পারে। ভেজাল খাদ্য যেমন মানুষের জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে; অনুরূপ ভেজাল ও নকল-মানহীন ওষুধ বিপন্ন করে তুলতে পারে মানুষের জীবনকে। আর তাই ওষুধের মান ও দাম নিয়ে হেলাফেলা তথা শৈথিল্য প্রদর্শনের বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। উন্নত বিশ্বে ওষুধের দাম ও মান নিয়ন্ত্রণ করা হয় কঠোরভাবে। ওষুধের দাম ও মান নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ সময়ের দাবি।

×