ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার দিনরাত

মারুফ রায়হান

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ২৯ মে ২০২৩

ঢাকার দিনরাত

ডেঙ্গু বাড়ছে ঢাকায়, দুশ্চিন্তারই কথা

ডেঙ্গু বাড়ছে ঢাকায়, দুশ্চিন্তারই কথা। জনকণ্ঠের সমাজ ভাবনা শীর্ষক জনমতামত বিভাগের এবারের বিষয়ও ডেঙ্গু। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও সংবাদ সম্মেলন করে ডেঙ্গুর মৌসুমে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। কেননা প্রাক-মৌসুমে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এত মৃত্যুর ঘটনা আগে ঘটেনি। ঢাকা মহানগরের ৪ শতাংশের বেশি বাড়িতে এডিস মশার উপস্থিতি রয়েছে। ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এ মশা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তুলনায় দক্ষিণ সিটির এলাকায় বেশি পাওয়া গেছে। চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১০ দিন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৯৮টি ওয়ার্ডে পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে করা এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছিল। 

মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণায় ‘রুমি’ 
ডিজিটাল উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে প্রতারণায়ও নতুনত্ব আসছে। এ কাজে এখন নারীরাও যুক্ত হচ্ছে। ‘রুমি’ (ছদ্মনাম) তাদেরই একজন। রাজধানীতে মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, রকেট ও নগদ প্রতারণা চক্রের এই নারী সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাব। বৃহস্পতিবার রাতে ধানম-ি থেকে তাকে আটক করা হয়। আটক নারীর প্রকৃত নাম সুখি আক্তার (৩০)। তিনি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার মেয়ে। র‌্যাব জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অনলাইনে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাতের পরিমাণ বেড়েছে। এক ধরনের অসাধু প্রতারক চক্র দীর্ঘদিন ধরে বিকাশ, রকেট ও নগদের মাধ্যমে প্রতারণা করে বিভিন্ন কৌশলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রতারক চক্রটি প্রথমে ‘হ্যালো, বিকাশ থেকে রুমি বলছি।

বিকাশ অ্যাকাউন্ট আপগ্রেডের কাজ চলছে, বিকাশ থেকে আপনার ফোনে ভেরিফিকেশন কোড (ওটিপি) এসএমএস করা হয়েছে, সেটা আমাকে দিন। অন্যথায় আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হবে।’ ঠিক এভাবেই প্রতারণা করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিকাশ হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় এই প্রতারক চক্র। তাই গ্রাহকদের সতর্ক থাকতে হবে।

আবার নাইজেরিয়ান প্রতারক!
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া আইডি খুলে বিভিন্ন প্রোফাইল ঘেঁটে ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী উচ্চবিত্তসহ সহজ-সরল মানুষকে বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠায় একটি চক্র। এরপর তাদের কাছে নিজেকে পশ্চিমা বিশ্বের একটি উন্নত দেশের ধনী ব্যক্তি হিসেবে উপস্থাপন করে। একপর্যায়ে বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে সম্পর্ক আরও গভীর করার জন্য একটি উপহার পাঠাতে চায় তারা। অনিচ্ছা সত্ত্বেও উপহারের মিথ্যা নাটক তৈরি করে প্রতারক চক্রের এক সদস্য কাস্টমস অফিসার সেজে ভুক্তভোগীকে ফোন করেন। পরে ভুক্তভোগী বন্ধুত্বের মান রাখতে ওই পার্সেল নেওয়ার জন্য প্রতারক চক্রটিকে বিপুল পরিমাণ টাকা দিতে বাধ্য হয়। এমন প্রতারক চক্রের চার সদস্য র‌্যাবের জালে ধরা পড়েছে গত সপ্তাহে। এর ভেতর দুজন নাইজেরিয়ান নাগরিক রয়েছে। 

এ ধরনের প্রতারণা ঢাকায় কি বছরের পর বছর ধরে চলবে? আর এ কাজে নাইজেরিয়ান নাগরিকরাই নেতৃত্ব দেবে? এ কলামের পাঠকদের হয়তো স্মরণে থাকতে পারে যে, ঘোর করোনকালে (২০২০) নাইজেরিয়ান প্রতারকদের বন্ধু একজন ফারজানা মহিউদ্দিনের কথা তুলে ধরেছিলাম। নারীটিকে নিয়ে রীতিমতো প্রতারণার অফিস খুলে বসেছিল এক ডজন নাইজেরিয়ান। রাজধানীর পল্লবীর একটি ভবনের এক ফ্লোরে ছিল তাদের অফিস, অন্য ফ্লোরে বাসা। ওই নারী সহযোগীটি থাকতেন অন্য আরেকটি তলায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ ডিগ্রিধারী হলেই যে মানুষ প্রকৃত শিক্ষিত হয় না তার উদাহরণ তো আমাদের সমাজে কম নেই। ‘ফারজানা মহিউদ্দিন’ নিজেকে কাস্টমস কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীদের বিদেশ থেকে আসা উপহার নেওয়ার জন্য লাখ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা দিতে বলতেন। ওই অফিসের কাজ শুধু ফেসবুকে বিভিন্ন জনের সঙ্গে চ্যাটিং করা।

এভাবে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতারণার জাল বিছিয়ে বন্ধু তৈরি করে অভিনব পদ্ধতিতে দুই মাসে প্রায় ছয় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল চক্রটি। র‌্যাব-সিআইডি অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। গ্রেফতার হওয়া নাইজেরিয়ানদের মধ্যে মাত্র তিনজনের পাসপোর্ট থাকলেও ভিসা ছিল না। দেখা যাচ্ছে এদেশে ভালোই ঘাঁটি গেঁড়েছে নাইজেরিয়ান অসাধু ব্যক্তিরা। 

উচ্চ বিদ্যাপীঠে বিড়ালহত্যা!
একটি-দুটি নয়, পাঁচ-পাঁচটি মৃত বিড়াল উদ্ধার করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে। অভিযোগ উঠেছে, বিড়ালগুলোকে হত্যা করা হয়েছে। দুটি আবাসিক হল থেকে বৃহস্পতিবার বিড়ালগুলো উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ জানাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনেকে। মৃত বিড়ালের ছবি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। এভাবে বিড়াল হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের মানবিকতাবোধ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে এ ঘটনায় কে বা কারা জড়িত, সে বিষয়ে শিক্ষার্থী বা হল কর্তৃপক্ষ কেউই কিছু জানেন না বলছেন। প্রাণী নিয়ে কাজ করা অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার টিম অব ঢাকা ইউনিভার্সিটি নামের এক ফেসবুক পেজে শুক্রবার দেওয়া এক পোস্টে উদ্ধার একটি বিড়ালের ছবি প্রকাশ করা হয়। ছবি দিয়ে আমিরুল ইসলাম নামের এক ছাত্র লিখেছেন, ‘চারটি বিড়ালছানাকে জবাই করে পুকুরপাড়ে রেখে গেল! মা বিড়ালটি রাত চারটায়ও বারবার এসে তার মৃত ছানাদের পাশে অঝোরে কান্না করছে! এ কেমন সাইকো (মানসিক রোগী)? কী অপরাধ ছিল এ নিষ্পাপ প্রাণীর?’
দেশের উচ্চ বিদ্যাপীঠে শিক্ষিত সচেতন ও কমবয়সী সংবেদনশীল তরুণ-তরুণীদেরই বাস। এরকম একটি এলাকায় এমন প্রাণী হত্যার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিড়াল দেখলেই তো মানুষের অপত্য ¯েœহ জেগে ওঠে, আদর করতে ইচ্ছে হয়। মানুষ কিভাবে বিড়াল হত্যা করতে পারে! 

উজাড়বৃক্ষের পার্ক!
রাজধানীর পার্কগুলো নিয়ে এই কলামে বছরে একবার-দুবার লিখি। ঢাকার মানুষের তুলনায় পার্কের সংখ্যা অত্যন্ত কম। দুঃখের বিষয় হলো নানা অজুহাতে অনেক পার্ক বন্ধ থাকে। একজন সিনিয়র সাংবাদিকের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হলো। তিনি লিখেছেন: ‘গুলশান-১ এ শুটিং ফেডারেশনের উলটা দিকে শহীদ ডা. ফজলে রাব্বি পার্ক। এই পার্কে হাঁটতাম। হঠাৎ করোনার সময় ২০২০ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয়। বলা হলো উন্নয়ন হচ্ছে। এতদিন পর পার্ক খুলেছে, যদিও উন্নয়ন কাজ শেষ হয়নি। এই পার্কটি ছিল প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা। সিটি করপোরেশন পরবর্তীকালে ভেতরে ওয়াকওয়ে বানায়, নারী পুরুষের আলাদা টয়লেট সুবিধা করে দেয়, বসার জন্য কিছু বেঞ্চ বসায়। কিছু ফুলগাছও লাগায়। চমৎকার আয়োজন। পার্কের এ মাথা থেকে আরেক মাথা দেখা যেত না যে এত গাছ। এবার খোলার পর দেখি সেই গাছ নেই। একদম ফাঁকা। প্রায় সব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।

ওয়াকওয়েগুলো আঁকাবাঁকা। স্বাভাবিক দেয়াল তুলে দিয়ে তৈরি হল কাঁচের দেয়াল। পার্কটিতে হাত দেওয়ার কোন প্রয়োজনই ছিল না। উন্নয়নের নামে গাছগুলো সাবাড় করা হয়েছে। মেয়রকে অবশ্যই আমি দোষ দেব গাছ কাটায়। কিন্তু এসব প্রকল্পে যেসব প্রকৌশলী, স্থপতি, পরিকল্পনাবিদ জড়িত থাকেন তারা তো সেরা ছাত্র তাদের সময়ের। এরা গাছ কাটার পরামর্শ দেন কী করে? পার্কের দেয়াল কাঁচের, এটাই বা কোন দুনিয়ায় দেখেন তারা? প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা একটা বৃক্ষ অঞ্চলকে কেটে রক্তাক্ত করতে এদের এতটুকু খারাপ লাগে না? এসব দেখে দেখে প্রকৌশলী, স্থপতি, পরিকল্পনাবিদদের মন, মগজ, মানসিক সুস্থতা, সক্ষমতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে। এদের কাছে তাহলে উন্নয়ন মানেই প্রকৃতির এই করুণ বিপর্যয়? প্রকৃতিকে অগ্রাহ্য করে উন্নয়ন যে মূর্খামি এটা কবে বুঝবে এসব মেধাবীরা?’ 

নিজেকেই পুলিশের গুলি!
পুলিশ কনস্টেবল আশরাফ উজ জামান রনি (২২) প্রেমঘটিত কারণে হতাশা থেকে নিজের পিস্তল দিয়ে নিজেই বুকে গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেছেন, এমন একটা খবর পড়ে মনটা খারাপই লাগে। এত কম বয়স। পরিবারের কত আশা ছিল সন্তানকে নিয়ে। সব ভ-ুল হলো প্রেমের জন্য। ভালো থাকার জন্যই ভালোবাসা। নিজেকে নিঃশেষ করে দেবার জন্য নয়। ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) জানান, কনস্টেবল রনির সঙ্গে একটি মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। তারা মোবাইলে কথা বলতেন। গত বুধবার রাতেও মোবাইলে অনেক কথা বলেন। সকালে ডিউটিতে আসার আগেও তাদের কথা হয়।

বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গণমাধ্যমকে জানান, বনানী ১১ নম্বরে চেকপোস্টে ডিউটি ছিল রনির। সকালে স্বাভাবিকভাবে তিনি ডিউটিতে আসেন। সঙ্গে আরও পুলিশ সদস্য ছিল। সকাল ৬টা ৪৯ মিনিটের দিকে চেকপোস্টের পাশেই বাথরুমে যাওয়ার কথা বলে নিজের পিস্তল দিয়ে নিজে গুলি করে আত্মহত্যা করেন। রনি পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) কর্মরত ছিলেন।

ক্যাম্পাসের ডাস্টবিনে নবজাতক
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসের একটি ডাস্টবিন থেকে নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে গত শনিবার। কাপড়ে মোড়ানো ছিল নবজাতকের (ছেলে) মরদেহ। 
শিশুর জন্মগ্রহণের নেপথ্যে থাকে নির্দিষ্ট মানব-মানবী। ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় হোক, তারা হন জনক-জননী। অথচ নিজ সন্তানের জন্মক্ষণেই তারা পরিত্যাগ করেছে, তার মৃত্যুই চেয়েছে! নিজেদের রক্ষার জন্য নিজ সন্তানের মৃত্যু! কিসের রক্ষা? লোকলজ্জার ভয় থেকে? এই পৃথিবীতে যত প্রজাতির প্রাণী রয়েছে সেসবের মধ্যে একমাত্র মানুষের পক্ষেই সম্ভব সদ্যজাত সন্তানকে মৃত্যুপুরিতে নিক্ষেপ করা। একটি হায়েনা কিংবা একটি কুকুর বা কোনো শকুন কি কখনও তার সদ্য জন্মগ্রহণকারী শাবকটিকে ছুড়ে ফেলে! ঢাকায় কিছুকাল পরপর নবজাতককে ফেলে দেওয়ার বিষয়টিকে আমরা উপেক্ষা করে যেতে পারি না। এটি স্বার্থপর মানুষের এক অজ্ঞাত মানসিক অবস্থা, তার চূড়ান্ত বিকার। এর চেয়ে মর্মান্তিক আর কী হতে পারে! যে নগরে বা যে সমাজে মানুষ তার সদ্য জন্ম নেওয়া সন্তানকে অস্বীকার ও নোংরা ন্যাকড়ার মতো পরিত্যাগ করতে পারছে, সেই নগর বা সমাজেরও কি কোনো দায়ভাগ নেই এতে? কালক্রমে সদ্যমৃতের তালিকায় উঠে যাচ্ছে মানুষের বিবেক, তার মনুষ্যত্ব।

নজরুলজয়ন্তী
এবার নজরুলজয়ন্তী উপলক্ষে ঢাকায় বেশ কিছু অনুষ্ঠান হয়। এর ভেতর ছায়ানট ভবন ও ধানম-ি ক্লাবের (প্রনস-এর) আয়োজনে বেশ দর্শক হয়। আগের তুলনায় নজরুলের গানের শ্রোতা বাড়ছে, মানে তরুণ প্রজন্মের কাছে নজরুলসংগীত প্রিয় হয়ে উঠছে, এমনটি বলা যায়। প্রসঙ্গত, আমাদের তরুণ বয়সে আমরা রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের গান নিয়মিত শুনতাম। এখনকার তরুণদের কাছে গান পৌঁছুনোর জন্য কিছু কৌশল করা লাগে, দরকার হয় ফিউশনের ফুয়েল, ভিডিওর ভাবালুতা। নতুন কোনো চটকদার মঞ্চ পেলে তো আরও ভালো, যেমন কোক স্টুডিও। সেখানে ধারণকৃত নজরুলের ‘দাঁড়ালে দুয়ারে মোর’ গানখানি এক মাসে ৭৮ লাখ ভিউ হয়েছে। চমৎকার ব্যাপার। মোবাইল ফোনে এটি চালিয়ে আমাকে প্রথম শোনান এক তরুণীই। তাই ধারণা করি ওই ৭৮ লাখের বড় একটি অংশই তরুণ প্রজন্ম।
কবির দুয়ারে এসে দাঁড়িয়েছেন যিনি, তাকে বলব প্রেম-ভিখারিণী; যার সজল দুটি চোখ গেয়েছে বেলা-শেষের রাগিনী। অভিমানিনীর মান ভাঙাতে কবি তাকে কোন্ প্রিয় নামে ডাকবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না। যদিও বিশেষণের শেষ নেই কোনো। জাদুকরী শব্দটা তো মোক্ষম। কিন্তু আমার বুকে মধুমাখা ছুরি বিঁধিয়েছে ‘স্বপন-মরু-চারিণী’ শব্দটি। শব্দবন্ধই বলা ভালো। যার মাঝখান থেকে ‘মরু’ শব্দটি সরিয়ে নিলে হয় স্বপনচারিণী। রবীন্দ্রনাথের গানখানির কথা মনে পড়ছে না? ওই যে, যে ছিল আমার স্বপ্নচারিণী।
১৯৩২ সালে মেগাফোন কোম্পানি নজরুলের স্বকণ্ঠে গীত ৪টি গান রেকর্ড করে। যার ভেতরে ছিল ওই ‘দাঁড়ালে দুয়ারে মোর’। রেকর্ডের দিনও তিনি গানখানি লিখে থাকতে পারেন, কিংবা তার কিছুদিন আগে। বেশি আগে হলে বড়জোর এক বছরই হবে। রবীন্দ্রনাথ ‘স্বপনচারিণী’ গানটি লিখেছিলেন ১৯৩৮ সালে। তিনি নজরুলের গানটি শুনে নাও থাকতে পারেন, সেটি বিবেচ্য নয়ও। আমি প্রেমে পড়েছি দুজনেরই দুটি গানের শব্দে, যেখানে রয়েছে ‘স্বপন-মরু-চারিণী’ ও ‘স্বপনচারিণী’ শব্দ। নজরুলের গানে পাচ্ছি ‘স্বপন-মরু-চারিণী’ তার দুয়ারে এসে দাঁড়িয়েছেন; আর রবীন্দ্রনাথের গানে দেখছি ‘স্বপনচারিণী’-ই কবিকে ডেকেছেন (শুভক্ষণে কাছে ডাকিলে, লজ্জা আমার ঢাকিলে)। এইসব ডাকাডাকি নিয়ে রবীন্দ্রনাথের ওই গানখানি যদি না শুনে থাকেন, তবে আপনার প্রেমিকজীবনই বৃথা। বলে দিচ্ছি গানের লাইন- ‘ডাকব না ডাকব না, বাইরে থেকে অমন করে ডাকব না। পারি যদি অন্তরে তার ডাক পাঠাব আনব ডেকে।’

২৮ মে,২০২৩
[email protected]

×