![ভোলার গ্যাস ভোলার গ্যাস](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2023January/editor-picture-final-2304011422.jpg)
সম্পাদকীয়
দ্বীপজেলা ভোলা থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস নিয়ে আসা হবে ঢাকার আশপাশের শিল্প এলাকায়Ñ এমন পরিকল্পনা সাধুবাদযোগ্য। গ্যাস পরিবহনের কাজটি করবে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন লিমিটেড। দশ বছরের জন্য এই কাজ দেওয়া হয়েছে সংস্থাটিকে। মাত্র কয়েক মাস আগে দক্ষিণের দ্বীপজেলা ভোলায় গ্যাসের নতুন উৎসের সন্ধান লাভের সংবাদটি ছিল জাতির জন্য স্বস্তিদায়ক। উল্লেখ্য, ভোলার শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রে গ্যাসের এই নতুন উৎস পাওয়া গেছে।
জেলার টবগী ইউনিয়নে একটি কূপ খনন করে গ্যাসের সন্ধান পেয়েছে দেশীয় সরকারি কোম্পানি বাপেক্স এবং বিদেশী কোম্পানি গ্যাজপ্রম। টবগী-১ নামের এ কূপটিতে প্রায় ২৩৯ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুত রয়েছে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। বর্তমান বাজার দরে এ পরিমাণ গ্যাসের দাম প্রায় ৮ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। জ¦ালানির সংকটকালে এই সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর একটি দেশ। মহামূল্যবান সম্পদে ভরপুর বঙ্গোপসাগরও। প্রয়োজন শুধু সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির সর্বশেষ উৎকর্ষকে কাজে লাগিয়ে তা আহরণ ও উত্তোলনের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ। দেশে এখন পর্যন্ত ২৮টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। সিলেটের জকিগঞ্জে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয় ২০২১ সালে। আর বিদ্যমান গ্যাসক্ষেত্রে গ্যাসের মজুত তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন শাহবাজপুরের টবগী-১ কূপ। ১৯৯৫ সালে গ্যাসক্ষেত্রটি আবিষ্কার করে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা পেট্রোবাংলা।
বর্তমান সরকারের আমলেই ২০১৫ সালে প্রথম উচ্চক্ষমতার জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত হয় দ্বীপজেলা ভোলা। ভোলার বোরহানউদ্দিনে ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করা হয়। ভোলার গ্যাস দিয়ে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। ‘বরিশাল-ভোলা ২৩০ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন’ ওই অঞ্চলে নতুন যুগের সূচনা করেছে। ৬৩ কিলোমিটার লাইনটিতে বরিশাল প্রান্ত থেকে সফলভাবে শুরু হয়েছে বিদ্যুৎ সঞ্চালন। লাইনটি নির্মাণের জন্য উত্তাল কালাবদর ও তেঁতুলিয়া নদীবক্ষের প্রায় ছয় কিলোমিটার প্রশস্ত এলাকায় সাতটি উঁচু টাওয়ার স্থাপন করতে হয়েছে।
নতুন লাইন চালু হওয়ায় বরিশাল, ভোলা ও খুলনা অঞ্চলে বিদ্যুৎ সঞ্চালনব্যবস্থা গুণগতভাবে উন্নত হয়েছে। তবে গ্যাসের বিষয়টি ভিন্ন। এক্ষেত্রে সঞ্চালন লাইনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা জনকণ্ঠকে বলেছিলেন, পাইপলাইন না থাকলেও জাহাজের মাধ্যমে ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে আনা হবে। দেশবাসীর প্রত্যাশা, অল্পকালের মধ্যে ভোলা গ্যাসক্ষেত্র থেকে ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাহাজে করে জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে।
স্বল্পতম সময়ে সদ্যপ্রাপ্ত গ্যাসের উৎস থেকে প্রতিদিন কুড়ি মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া বিশ^ব্যাপী জ্বালানি সংকটে মন্দাকালে বড় সুসংবাদ হয়ে এসেছে। এই প্রেরণা কাজে লাগিয়ে আমাদের শুধু গ্যাস সম্পদ নয়, সমুদ্র সম্পদ আহরণেও উদ্যোগী হওয়া চাই। তেল-গ্যাস তথা জ¦ালানির মহাভা-ার সমুদ্র ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। একই সঙ্গে গ্যাসের নতুন উৎস সন্ধানেও সক্রিয়তা আবশ্যক।